Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নিরীক্ষা প্রতিবেদন আদালতে: ঋণ আদায় সাপেক্ষে টাকা পাবেন গ্রাহক


১২ মার্চ ২০২০ ১৭:০২

ঢাকা: পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের (পিএলএফসিএল) দায় দেনা ও সম্পদের পরিমাণ সংক্রান্ত সর্বশেষ নিরীক্ষা প্রতিবেদন আদালতে জমা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ১০ মার্চ আইনজীবির মাধ্যমে পিপলসের নিরীক্ষা প্রতিবেদনটি আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে।

প্রতিবেদনে দেখা গেছে, পিপলসের কাছে বিভিন্ন গ্রাহকের পাওনার পরিমাণ প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা। এর বিপরীতে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে পিপলসের পাওনার পরিমাণ রয়েছে ১ হাজার ৮১২ কোটি টাকা। মাঝখানে প্রায় ২০০ কোটি টাকা ঘাটতি। বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে পিপলসের পাওনা টাকা আদায় সাপেক্ষে গ্রাহকদের মাঝে তা অনুপাতিকহারে পরিশোধ করা হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) ও পিপলসের অবসায়ক মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান খান সারাবাংলাকে এসব তথ্য জানান।

বিজ্ঞাপন

২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে চলতি বছরের ২৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ছয়মাস পিপলস লিজিং নিরীক্ষা করে একনাবিন চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস। নিরীক্ষাকালে ২০১৫ থেকে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সর্বশেষ চার বছরের আয় ব্যয়, সম্পদ ও দায়দেনা সংক্রান্ত সর্বশেষ প্রতিবেদন তৈরি করে তা আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার (১২ মার্চ জানুয়ারি) দুপুরে বাংলাদেশ ব্যাংকের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) ও পিপলসের অবসায়ক মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান খান সারাবাংলাকে বলেন, গত ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে পিপলসের ঋণ ও সম্পদ বাবদ পাওনা রয়েছে ১ হাজার ৮১২ কোটি টাকা। আগের হিসাবে এটা ছিল ৯৭২ কোটি টাকা। নিরীক্ষা প্রতিবেদনে পিপলসের ঋণ ও সম্পদ বাবদ পাওনা ৮৪০ কোটি টাকা বেড়ে হয়েছে ১ হাজার ৮১২ কোটি টাকা।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, বর্তমানে পিপলসের লোন ও সম্পদ বাবদ বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে পাওনার পরিমাণ এবং পিপলসের কাছে বিভিন্ন গ্রাহকের পাওনার পরিমাণ প্রায় কাছাকাছি। তাই আমাদের এখন প্রধান কাজ হবে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে পিপলসের ঋণ বাবদ পাওনা টাকা উদ্ধার করে গ্রাহকদের ফেরত দেওয়া।

তিনি বলেন, বর্তমানে পিপলসের প্রায় ১৫ কোটি টাকার মতো ক্যাশ রয়েছে। এর মধ্যে ১২ কোটি টাকা অবসায়নের পর উদ্ধার করা হয়েছে।

নিরীক্ষা প্রতিবেদনে ঋণ ও সম্পদ বাবদ ৮৪০ কোটি টাকা বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আগের হিসাবে হয়ত কিছুটা ভুল ছিল, সুদের হিসাবটাও হয়তো ঠিকমতো করা হয়নি। পাশাপাশি গত এক বছরে সুদও বেড়েছে। সব মিলিয়ে ঋণ ও সম্পদের পরিমাণ ৮৪০ কোটি টাকা বেড়েছে।

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ২০০৪ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত পিপলসের পরিচালকদের একটি তালিকা চেয়েছে আদালত। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ৩৮ জনের একটি তালিকা (১২ মার্চ) আদালতে জমা দেওয়া হবে।

পিপলস লিজিংয়ের অর্থিক অবস্থা: ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পিপলস লিজিংয়ের বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের আমানত ছিল ২ হাজার ৩৬ কোটি ২২ লাখ টাকা। আমানতের বিপরীতে সম্পদের পরিমাণ ৩ হাজার ২৬৯ কোটি টাকা। আমানতের মধ্যে ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা রয়েছে কয়েকটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের। বাকি ৭০০ কোটি টাকা ৬ হাজার ব্যক্তি শ্রেনীর আমানতকারীর। এছাড়াও পিপলস বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তির কাছে ১ হাজার ১৩১ কোটি টাকা ঋণ বাবদ পাওনা রয়েছে। এর মধ্যে ৭৪৮ কোটি টাকা খেলাপি ঋণ। এটি মোট ঋণের ৬৬ দশমিক ১৪ শতাংশ। খেলাপি ঋণের বড় অংশই নিয়েছে কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকরা।

অন্যদিকে, ২০১৯ সালের ৩১ শে মার্চ পর্যন্ত সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী পিপলসের সম্পদের পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১ হাজার ২৯৮ কোটি টাকা। এর বিপরীতে কোম্পানিতে ৬ হাজার ব্যক্তি শ্রেণীর আমানতকারির পাওনার পরিমাণ ১ হাজার ৯৯৬ কোটি টাকা। আমানত ও সম্পদের ব্যবধান ৬৯৮ কোটি টাকা। এই ঋণের ৬৬ দশমিক ১৪ শতাংশ অর্থ খেলাপি।

পিপলসের বর্তমান সম্পদ: পিপলস লিজিংয়ের অ্যাসেট বলতে রয়েছে রাজধানীর পুরানা পল্টনের কালভার্ট রোডে প্যারামাউন্ট হাইটসে মোট ১৪ হাজার স্কয়ার ফিট আয়তনের ২টি ফ্লোর, কয়েকটি গাড়ি এবং নগদ ১৫ কোটি টাকা। তবে আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে পিপলসের সবচেয়ে বড় অ্যাসেট হলো বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে ঋণ দেওয়া বাবদ পাওনা ১ হাজার ৮১২ কোটি টাকা। এই ঋণ তাদের মূল অ্যাসেট।

পিপলসের কাছে পাওনা টাকা কারা আগে পাবেন: পিপলসের কাছে পাওনা টাকা পরিশোধের ক্ষেত্রে সবার আগে সরকারের ট্যাক্স বাবদ টাকা পরিশোধ করা হবে। তারপর প্রতিষ্ঠানটির কর্মরতদের প্রত্যেককে ১ হাজার টাকা করে এবং দৈনিক মজুরীর ভিত্তিতে কেউ থাকলে তাদের ৫০০ টাকা করে পরিশোধ করা হবে।

পরবর্তীতে কোম্পানির আমানতকারীদের মধ্যে সবার আগে ব্যক্তি শ্রেণীর আমানতকারি, তারপর প্রতিষ্ঠানিক আমানতকারীর পাওনা পরিশোধ করা হবে। তবে কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার এবং ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী কিংবা উদ্যোক্তা পরিচালক কোনো অর্থ পাবেন না। তবে, সবার টাকা পরিশোধ করার পর যদি টাকা অবশিষ্ট থাকে তাহলে তারা পাবেন।

১৯৯৭ সালের ২৪ নভেম্বর পিপলস লিজিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে অনুমোদন পায়। ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠানটি শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। ২০১৪ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটি লোকসানে ছিল। ২০১৯ সালের ২১ মে বাংলাদেশ ব্যাংকের অর্থমন্ত্রণালয়ে পিপলস লিজিংয়ের অবসায়নের আবেদন করে। এই আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ২৬ জুন অর্থমন্ত্রণালয় তা অনুমোদন দেয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১১ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংক পিপলস লিজিং থেকে টাকা উত্তোলনের বিষয়ে বিধিনিষেধ দেয়। পরে গত ১৪ জুলাই বাংলাদেক ব্যাংকের ডিজিএম মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান খানকে অবসায়ক নিয়োগ দেওয়া হয়।

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

কানপুরে প্রথম দিনে বৃষ্টির দাপট
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৬:৩৫

সম্পর্কিত খবর