‘নকল পণ্য নীরব গণহত্যাকারী, দরকার সচেতনতা’
১২ মার্চ ২০২০ ১৯:২৮
ঢাকা: ‘নকল পণ্য প্রতিরোধে দেশের সকল মানুষের সচেতনতা জরুরি। বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোকে এমন মোড়ক ব্যবহার করতে হবে যাতে অন্য কেউ তাদের পণ্য নকল করতে না পারে। ভেজাল প্রতিরোধে শুধু ক্যাশপ্রেম নয়, দেশপ্রেমকেও প্রাধান্য দিতে হবে। ভেজাল ও নকল পণ্য উৎপাদনকারীরা নীরব গণহত্যাকারী। প্রয়োজনে আইন সংশোধন করে এমন অপরাধে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান করা যেতে পারে।’
বৃহস্পতিবার (১২ মার্চ) রাজধানীর তেজগাঁওয়ের টাইমস্ মিডিয়া ভবনের সমকাল কনফারেন্স হলে সমকাল আয়োজিত ‘নকল পণ্য কিনব না, নকল পণ্য বেচব না’ শীর্ষক এক অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেন। সমকালের এই প্রচারাভিযানে সহযোগী হিসেবে রয়েছে বিএসটিআই, র্যাব, কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব), ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই এবং ঢাকা চেম্বার ও জেসিআই-নর্থকে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, ‘ভেজাল পণ্য বন্ধে শুধু অভিযান পরিচালনা করলে হবে না; ভেজাল পণ্য বর্জনে সচেতনতা জরুরি, ক্যাম্পেইন করা জরুরি। ভেজাল পণ্য সরাসরি মানুষের জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত। তাই এটাকে প্রধান গুরুত্ব দিয়ে ভেজাল পণ্য বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।’
তিনি বলেন, ‘দেশে অনেকগুলো আইন আছে। ভোক্তারা প্রতারিত হলে ওইসব আইনের আশ্রয় নিতে পারেন। আইনি কাঠামো শক্ত বলেই আমি মনে করি। বিদ্যামান আইনগুলোই কার্যকর করতে হবে।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, ‘বড় কোম্পানিগুলোর ক্যাশপ্রেম বাদ দিয়ে দেশপ্রেম বাড়ানো উচিত। অনেক সময় তারা সবধরনের পণ্য তৈরি করতে চায়। এ কারণে ছোট কোম্পানিগুলোর বাজারে টিকে থাকা কষ্ট হয়। এ সুযোগে নামসর্বস্ব কোম্পানিগুলো নকল পণ্য বানানো শুরু করে। তাই বড় কোম্পানিগুলোর উচিত সবধরনের পণ্য প্রস্তুত না করা।’
তিনি বলেন, ‘ভেজাল পণ্য ঠেকাতে সরকারের ওপর সব দায়িত্ব ছেড়ে দিলে হবে না। বড় প্রতিষ্ঠানগুলোরও উচিত ভেজাল প্রতিরোধে নিজস্ব সক্ষমতা বাড়ানো, নিজস্ব টিম তৈরি করা।’
তিনি আরও বলেন, ‘সাধারণত ভেজালবিরোধী অভিযান র্যাবের পরিচালনা করার কথা নয়। পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান সহযোগিতা চাইলে তারা এগিয়ে আসতে পারে। এজন্য আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলোর আরও সক্ষমতা বাড়ানো দরকার।’
র্যাব মহাপরিচালক ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘নকল সব জায়গায়- নকল মানুষ, নকল ডাক্তার, নকল পুলিশ, নকল সাংবাদিক, নকল র্যাব, নকল ম্যাজিস্ট্রেট, কী নকল নেই! যারা নকল পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানে কাজ করে আমি তাদের দোষ দেই না। যারা ওইসব কারখানা পরিচালনা করে আমি তাদের দোষারোপ করি। এজন্য বড় বড় কোম্পানিগুলোকে উদ্যোগ নিতে হবে যাতে অন্য কেউ তাদের অনুরূপ পণ্য বানাতে না পারে। নকল পণ্য উৎপাদনকারী ফ্যাক্টরিগুলোকে এমনভাবে জরিমানা করতে হবে যাতে ভবিষ্যতে তারা নকল পণ্য উৎপাদন করার সাহস না দেখায়। নকল পণ্য ও নকল খাবার দুটোই নীরব গণহত্যাকারী, এটা সাইলেন্ট মেসাকার। যারা এটা করে তারা সবাই খুনি।
তিনি বলেন, ‘পণ্যের প্যাকেটে বারকোড সংযুক্ত করা থাকলে ক্রেতারা খুব সহজে আসল-নকল চিনতে পারবে। ফলে মানুষের হয়রানি কমবে এবং বাজারে নকল পণ্যও থাকবে না।’
ক্যাব সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ‘প্রয়োজনে আইন সংশোধন করে নকল পণ্য উৎপাদনে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান করতে হবে। যেসব কারণে প্রাণের ঝুঁকি রয়েছে সেসব ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান থাকা উচিৎ। নিম্নমানের পণ্যও নকল পণ্যের কাছাকাছি। তাদেরকেও ওই আইনের আওতায় আনা যেতে পারে।’
সমকালের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মুস্তাফিজ শফির সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তৃতা করেন- এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম, এনবিআর সদস্য মো. মেফতাহ উদ্দিন খান, বিএটি চেয়ারম্যান গোলাম মঈন উদ্দিন, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী আহসান খান চৌধুরী এবং ইউনিলিভার বাংলাদেশের সিইও এবং এমডি কেদার লেলে প্রমুখ।