সীমান্তে বাংলাদেশি হত্যা বেড়েছে ৩ গুণ
১৩ মার্চ ২০২০ ০৬:৪৭
ঢাকা: বাংলা ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী আবু হেনা রাজ্জাকী বলেছেন, বাংলাদেশ-ভারত বন্ধুত্ব ঐতিহাসিক। অথচ বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে এখনও বিনা বিচারে হত্যাকাণ্ড হয়। ২০১৯ সালে বিএসএফের হাতে বাংলাদেশি নাগরিক হত্যা প্রায় তিনগুণ বেড়েছে। বৃহস্পতিবার (১২ মার্চ) সিরডাপ মিলনায়তনে বাংলা ফাউন্ডেশন আয়োজিত ‘বাংলাদেশ-ভারত, সম্পর্ক চলমান পরিস্থিতি: প্রত্যাশা ও প্রতিশ্রুতি’ শিরোনামে এক সেমিনারে এসব কথা বলেন তিনি।
আবু হেনা রাজ্জাকী বলেন, ২০২০ সালের প্রথম মাসে উদ্বেগজনক হারে সীমান্ত হত্যা বেড়ে গেছে। চলতি বছরের প্রথম ২৩ দিনে ১০ জন বাংলাদেশি বিএসএফ এর গুলিতে মারা গেছে। ২০১৯ এ হত্যার সংখ্যা ছিলো ৩৮ জন।
আবু হেনা রাজ্জাকী বলেন, সীমান্তে চোরাচালান ও বিভিন্ন অপরাধ রোধ করতে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করতে হয় না। এটাই সভ্য দুনিয়ার রীতি। কিন্তু বিজিবি ও বিএসএফ একাধিক বৈঠকের পরও প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করা হবে না বলে সিদ্ধান্ত হয়। এর পরেও বিনাবিচারে বাংলাদেশি হত্যা দুর্ভাগ্যজনক। অথচ ভারতের সঙ্গে চীন-পাকিস্থান-নেপাল-মিয়ানমার ও ভুটানের সীমান্ত রয়েছে।
তিনি বলেন, ভারত আমাদের তুলনায় এত বড় এবং এত ক্ষমতাশালী যে আমরা তাদের কাছে আবেদন করতে পারি। তারা যদি সদিচ্ছা প্রকাশ করতো তবে সীমান্তে মানব হত্যা বন্ধ হতো। যা ৭২ বছরের ছিটমহল সমস্যা ৭২ ঘণ্টায় সমাধান হতে দেখেছি। সীমান্ত হত্যা বন্ধে ভারতকে সদিচ্ছা প্রকাশের আহবান জানান তিনি।
সেমিনারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক বলেন, সীমান্তে আমাদের যে ধরনের আচরণ প্রকাশ করার কথা সেটা আমরা করছি কিনা ভেবে দেখতে হবে। ভারতের অনেক রাজনৈতিক ব্যক্তি বড় ভাই ছোট ভাই মনোভাব নিয়ে কথা বলেন। এ বিষয়টা আইন করে বন্ধ করার বিষয় না। আমরা যদি তাদের আত্মসম্মান রক্ষা করে মর্যাদা দেই, তাহলে তারাও আমাদের সেই মর্যাদা দেবেন।
তিনি বলেন, আমরা আমাদের রাষ্ট্রকে রক্ষা করতে পারছি না। যে শিক্ষাব্যবস্থা গত ৪০ বছর যাবত বাংলাদেশে চলছে, এসব শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে কোনও দেশেই জাতীয় ঐক্য থাকে না। আমাদের যারা মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, তাদের মধ্যে শতকরা ৯৫ জন নিজের ছেলেমেয়েকে ইউএসএ, কানাডা, ব্রিটেন ও অস্ট্রেলিয়া—এই চার দেশের নাগরিক করে চলেছেন।
ভারতের সঙ্গে পানির সমস্যা নিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ সরকার ফেনী নদীর পানি দিতে কোনও দরকষাকষি করেনি। কিন্তু, ভারত সরকার তিস্তার পানি দেওয়ার বিষয়টি এখনও মীমাংসা করতে পারেনি।
সেমিনারে ভারতের সাউথ ক্যালক্যাটা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নম্রতা কোঠারি বলেন, সীমান্তে হত্যার ঘটনা ভারতকে খুঁজে বের করতে হবে। ভারতের নাগরিত্ব আইন সম্পূর্ণ ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয় জানিয়ে তিনি বলেন, এর কোনো চাপ বাংলাদেশের উপর পড়বে না।
এটিএন বাংলার সাংবাদিক কেরামত উল্লাহ বিপ্লব বলেন, একটি এলাকার প্রভাবশালী ব্যক্তির বাড়ির পাশে অন্য কেউ যদি বাড়ি তৈরি করে। তা যদি তার থেকেও সুউচ্চ হয় তা ওই প্রভাবশালী ব্যক্তি খুব ভালভাবে দেখে না। তবে ভারত বাংলাদেশ কূটনৈতিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক যে সম্পর্কই থাকুক না কেনো দুদেশের মানুষই পারস্পরিকভাবে যথেষ্ট আন্তরিক একে অপরের জন্য।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর আবুল কাশেম ফজলুল হক। এতে আলোচক হিসেবে মো. ইনামুল হক, প্রফেসর সাহাব এনাম খান ও ভারতের বিমল শংকর নন্দা বক্তব্য রাখেন।