Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সার্ক: ‘কোমা’ থেকে বের হওয়ার বার্তা পাওয়া যাচ্ছে


১৩ মার্চ ২০২০ ২১:২০

ঢাকা: বৈশ্বিক মহামারিতে রূপ নেওয়া করোনাভাইরাস ঠেকাতে সার্কভুক্ত দেশগুলোকে কার্যকর উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এর মাধ্যমে গত পাঁচ বছরের ইতিহাসে এই প্রথম সার্ক নিয়ে ইতিবাচক ইঙ্গিত পাওয়া গেল ভারতের পক্ষ থেকে। এতদিন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলে আসছিলেন, সার্ক ‘কোমা’য় চলে গেছে। নরেন্দ্র মোদির এই আহ্বানের মধ্য দিয়ে সার্ককে আবার জাগানোর বার্তা পাওয়া যাচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শুক্রবার (১৩ মার্চ) এক টুইট বার্তায় বলেন, করোনাভাইরাস ঠেকাতে এবং এর বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ বের করতে আমি সার্কভুক্ত (দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা) দেশগুলোর নেতাদের আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা এ বিষয়ে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আলোচনা করতে পারি যে কিভাবে আমাদের নাগরিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা যায়। আমরা (সার্ক) এই বিশ্বকে বাঁচাতে উদ্যোগ নিতে পারি, যা সবার জন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে।

বিজ্ঞাপন

এর আগে, ২০১৮ সালের জুলাই মাসে ‘দক্ষিণ এশিয়ার জন্য বিআরআই ও বিবিআইএন-এর গুরুত্ব’ শীর্ষক দুই দিনব্যাপী সেমিনারের আয়োজন করেছিল বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিস)।

ওই সেমিনারে সাবেক রাষ্ট্রদূত তারিক করিম বলেন, সার্ক মৃত নয়, সার্ক এখন কোমায় রয়েছে। নয়াদিল্লির ফোরাম ফর স্ট্র্যাটেজিক ইনিশিয়েটিভের সদস্য অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল দিপংকর ব্যানার্জি বলেন, দক্ষিণ এশিয়ার উন্নয়নে সার্ক গঠন করা হয়, যা এখন মৃত।

ওই সেমিনারে শ্রীলঙ্কার রিজিওনাল সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক গামিনী কিরাওয়ালা বলেন, বিশ্ব বাণিজ্যের প্রেক্ষাপটে গালিভার টাইপের দেশগুলোকে মোকাবিলা করে উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হলে দক্ষিণ এশিয়ার লিলিপুট (অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে) রাষ্ট্রগুলোকে আঞ্চলিক সংযোগের ছাতায় আসতে হবে। আর এ জন্য সার্ককে জেগে উঠতে হবে। সার্ককে জাগিয়ে তুলতে হলে বিবিআইএন ও বিআরআই বাস্তবায়নে মনোযোগী হতে হবে। কেননা একটির সঙ্গে আরেকটির নিবিড় সংযোগ রয়েছে।

গত পাঁচ বছরের ইতিহাস পর্যালোচনায় পাওয়া যায়, এই অঞ্চলের দুই ‘বড়’ রাষ্ট্র পাকিস্তান ও ভারতের পরস্পর বিরোধিতার কারণে গত পাঁচ বছর ধরে অকার্যকর হয়ে পড়ে সার্ক। সবশেষ ২০১৪ সালে নেপালে সার্ক সম্মেলন হওয়ার পর গত ছয় বছরে আর কোনো সম্মেলন হয়নি।

কূটনৈতিক সূত্রগুলো জানাচ্ছে, সার্ক অকার্যকরের পেছনে কাজ করছে পাকিস্তান-ভারত বিরোধ। সার্কের বিকল্প হিসেবে বিমসটেক’কে (বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টিসেক্টরাল, টেকনিকাল অ্যান্ড ইকোনমিক কোঅপারেশন, যা দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় কয়েকটি দেশ নিয়ে গঠিত একটি আঞ্চলিক জোট) গঠন করে ভারত এবং আঞ্চলিক উন্নয়ন বিমসটেক দিয়েই এগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা চালায়।

২০১৪ সালের মে মাসে নরেন্দ্র মোদির সরকার যখন প্রথম সরকার গঠন করে, তখন ওই সময়ের শপথ অনুষ্ঠানে সার্ক দেশগুলোর রাষ্ট্রপ্রধানদের আমন্ত্রণ জানান হয়। এই ঘটনার একবছরের মধ্যেই পাকিস্তান-ভারতের মধ্যে বৈরিতা শুরু হয়। এর প্রভাব পড়ে সার্কের ওপর এবং ২০১৬ সালের সার্ক শীর্ষ সম্মেলন স্থগিত হয়ে যায়। সবশেষ দ্বিতীয় দফায় নরেন্দ্র মোদি সরকার গঠনের শপথ অনুষ্ঠানে সার্কভুক্ত দেশগুলোর বদলে আমন্ত্রণ জানানো হয় বিমসটেকভুক্ত দেশগুলোর রাষ্ট্রপ্রধানদের। সার্ক নিয়ে আর কোনো আলোচনাই হয়নি ভারতের পক্ষ থেকে।

তবে পাঁচ বছর পর এসে এই মুহূর্তে যখন শতাধিক দেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে, এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ভারতে মৃত্যুর ঘটনাও রয়েছে, ঠিক তেমন একটি সময়ে এসে নরেন্দ্র মোদি সার্ককে নিয়ে এলেন আলোচনায়। করোনা মোকাবিলায় আঞ্চলিক সমন্বিত উদ্যোগ নিতে তিনি সার্কভুক্ত দেশগুলোকেই এগিয়ে আসার আহ্বান জানালেন।

করোনাভাইরাস ইস্যুতে মোদির এই বার্তাকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, সার্কের এবার কোমা থেকে বের হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, যা এই অঞ্চলের উন্নয়নের জন্য খুবই প্রয়োজন।

এদিকে, শুক্রবার সন্ধ্যায় ভারতের পক্ষ থেকে নরেন্দ্র মোদির এই বার্তা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেনের কাছেও পৌঁছে দেওয়া হয়। মোদির এই উদ্যোগকে স্বাগতও জানিয়েছেন তিনি।

পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন সারাবাংলাকে বলেন, বাংলাদেশ মনে করে, এই ইস্যুতে সার্কভুক্ত সবগুলো দেশ এক ছাতার নিচে আসবে এবং আগামী দিনের পথচলা মসৃণ করতে কার্যকর উদ্যোগ নেবে।

করোনাভাইরাস নরেন্দ্র মোদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মোমেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী সার্ক সার্কভুক্ত দেশ

বিজ্ঞাপন

নামেই শুধু চসিকের হাসপাতাল!
২২ নভেম্বর ২০২৪ ২২:০৬

আরো

সম্পর্কিত খবর