Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শ্রীমঙ্গলের শেখ রাসেল শিশু উদ্যান এখন ‘ভাগাড়’


১৪ মার্চ ২০২০ ১০:৫২

মৌলভীবাজার: জেলার শ্রীমঙ্গলে শিশুদের বিনোদনের জন্য ভিক্টোরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠসংলগ্ন এলাকায় ১৯৮৪ সালে তৈরি করা হয়েছিল ‘শেখ রাসেল শিশু উদ্যান’। তবে উদ্বোধনের পর দীর্ঘ ৩৬ বছর পার হলেও এখানে লাগেনি উন্নয়নের ছোঁয়া। সরকারি সহযোগিতার অভাব, সংস্কার আর রক্ষণাবেক্ষণ না করায় শেখ রাসেল শিশু উদ্যান এখন পরিণত হয়েছে ভাগাড়ে!

জানা যায়, শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে শ্রীমঙ্গলের ঐতিহ্যবাহী মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভিক্টোরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের খেলার মাঠ সংলগ্ন প্রায় আড়াই একর জায়গা জুড়ে এই শিশু উদ্যানের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। ১৯৮৪ সালে শিশু উদ্যানের পাকা সীমানা প্রাচীর তৈরি করা হয়। এ সময় উদ্যানের ভেতরে শিশুদের বসার জন্য হাতেগোনা কয়েকটি পাকা বেঞ্চও তৈরি করা হয়েছিল। এছাড়া উদ্যানের ভেতরেই ছিল বড় পুকুর, সুবিশাল একটি মাঠ।

বিজ্ঞাপন

সরেজমিনে দেখা যায়, অতীতের অনেক কিছুই এখন আর নেই উদ্যানটিতে। বড় পুকুর ক্রমেই ছোট ডোবায় পরিণত হয়েছে, ভেঙে পড়েছে উদ্যানের মূল গেট। সীমানা প্রাচীর ও বসার বেঞ্চগুলোও নষ্ট হয়ে গেছে। প্রতিনিয়তই গরু-ছাগল চষে বেড়াচ্ছে উদ্যানের সমস্ত মাঠ জুড়ে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, ১৯৮৪ সালের পর থেকে এ উদ্যানে কোনো উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। সম্প্রতি এ উদ্যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট ভাই শহীদ শেখ রাসেলের নামে নামকরণ করা হয়। এখন এটি শেখ রাসেল শিশু উদ্যান নামেই পরিচিত। তবে নাম বদলালেও এর অবস্থার কোনো পরিবর্তন হয়নি।

উপজেলার সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিদের উদ্যোগে স্থানীয় সমাজসেবকদের সহযোগিতায় এখানে তৈরি করা হয়েছে একটি মুক্তমঞ্চ। এ মুক্তমঞ্চেই প্রতিবছর কোনোরকমে বৈশাখী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অথচ দীর্ঘ ৩৬ বছর পার হলেও শিশু উদ্যানটি যথাযথভাবে নির্মাণ ও চালু করার ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। সম্প্রতি স্থানীয় সংসদ সদস্য মো. আব্দুস শহিদের উদ্যোগে শিশু উদ্যানের জন্য একটি আধুনিক গেট নির্মাণের প্রস্তাব নেওয়া হলেও সেটি এখনও আলোর মুখ দেখেনি।

বিজ্ঞাপন

স্থানীয় কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থী রাসেল আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘একসময় আমরা বন্ধুদের নিয়ে এই উদ্যানে বেশ আনন্দ করতাম কিন্তু এখন সেই পরিবেশ নেই।’ এছাড়া রাতে উদ্যানটি নেশাখোরদের আড্ডাস্থলে পরিণত হয় বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

শ্রীমঙ্গল অনুশীলন চক্রের প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক সাংবাদিক কাউছার ইকবাল সারাবাংলাকে বলেন, ‘এই জায়গাটি ডিসি খতিয়ানের।  এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবিতে ১৯৮২ সালে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দখলদারদের হাত থেকে উদ্ধার করে এই জায়গাটি শিশু উদ্যানের নামে বরাদ্দ দেন। তবে এরপর থেকে এই উদ্যানের আর কোনো সংস্কার হয়নি।’ ভূমিখেকোরা বারবার শিশু উদ্যানের জায়গা দখল নেওয়ার চেষ্টা করেছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

সংস্কৃতিকর্মী পঙ্কজ কুমার নাগ সারাবাংলাকে বলেন, ‘পর্যটকরা বিনোদনের জন্য বেড়াতে আসেন প্রকৃতির অভয়ারণ্য চায়ের দেশখ্যাত শ্রীমঙ্গলে। অথচ দুঃখজনক হলেও সত্য যে, আমাদের সন্তানদের চিত্ত-বিনোদনের জন্য একমাত্র বিনোদন কেন্দ্র শেখ রাসেল শিশু উদ্যান এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। আমাদের সংস্কৃতিকর্মীদের প্রাণের দাবি অনতিবিলম্বে সরকারি সহায়তায় যেন উদ্যানটির প্রাণ ফিরিয়ে আনা হয়।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহিদুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘শেখ রাসেল শিশু উদ্যানের জায়গায় আমরা শিল্পকলা একাডেমি করবো। যার প্রস্তাবনা ইতোমধ্যে আমরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি। আর অবশিষ্ট যে ভূমি থাকবে সেই জায়গাতে শেখ রাসেল শিশু উদ্যান করেই উন্নয়ন কাজ করা হবে।’

ময়লার ভাগাড় শেখ রাসেল শিশু উদ্যান শ্রীমঙ্গল

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর