মধ্যরাতে মোবাইল কোর্টের হানা, দরজা ভেঙে নিয়ে গেল সাংবাদিককে
১৪ মার্চ ২০২০ ১৭:২৬
কুড়িগ্রাম: মধ্যরাতে বাড়িতে হানা দিয়ে অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনের কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি আরিফুল ইসলামকে তুলে নিয়ে গেছে জেলা প্রশাসকের মোবাইল কোর্ট। পরে রাত ২টার দিকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসানো হয়। বাসায় আধা বোতল মদ ও দেড়শ গ্রাম গাঁজা রাখার দায়ে একবছরের কারাদণ্ড দিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। যদিও আরিফুলের পরিবারসহ সহকর্মী সাংবাদিকরা বলছেন, কোনো ধরনের মাদক নেওয়ার কোনো নজির তার নেই।
আরিফুল ইসলামের পারিবার সূত্রে জানা গেছে, শুক্রবার (১৩ মার্চ) দিবাগত রাত ১২টার পর জেলা প্রশাসকের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রিন্টু বিকাশ চাকমার নেতৃত্বে কয়েকজন ম্যাজিস্ট্রেট আনসার সদস্যদের নিয়ে তার শহরের চড়ুয়া পাড়ার বাড়িতে যান। একপর্যায়ে দরজা ভেঙে তার ঘরে ঢুকে স্ত্রী-সন্তানের সামনেই তাকে মারধর করে ধরে নিয়ে যান। পরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে নিয়ে গিয়ে তার বাসায় আধা বোতল মদ ও দেড়শ গ্রাম গাঁজা রাখার অভিযোগে তাকে এক বছরের কারাদণ্ড দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
সাংবাদিক আরিফুল ইসলামের স্ত্রী মোস্তারিমা সরদার মিতু বলেন, শুক্রবার রাত ১২টার দিকে খাওয়া শেষে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। এ সময় হঠাৎ কে বা কারা দরজা ধাক্কাধাক্কি শুরু করলে আমার স্বামী ফোনে স্বজনদের বিষয়টি জানান। একপর্যায়ে দরজা ভেঙে তারা আমার স্বামীকে মারধর শুরু করে। আমি বাধা দিতে গেলে তারা আমাকেও মারতে উদ্যত হয়। পরে আমার স্বামীকে তুলে নিয়ে যায়।
কুড়িগ্রাম সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজুর ইসলাম বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি, জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের লোকজন সাংবাদিক আরিফুল ইসলামকে নিয়ে গিয়ে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠিয়েছে।’ মাদকের মামলা দিয়ে সাংবাদিক আরিফুলকে কারাদণ্ড দেওয়া হলেও ওসি বলছেন, তার নামে এর আগে মাদক সংক্রান্ত কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, কুড়িগ্রাম জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক দুলাল বোস বলেন, ‘আমার জানামতে সাংবাদিক আরিফুল মদ-গাঁজা তো দূরের কথা, কোনোদিন সে একটি সিগারেটও স্পর্শ করেনি। বরং যারা ধূমপান করে তাদেরকে বিভিন্ন সময় তিরস্কার করেছে।’ আরিফুলের সহকর্মী সাংবাদিকরাও সবাই একই কথা বলছেন।
জানা গেছে, কিছুদিন আগে কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোছা. সুলতানা পারভীন একটি পুকুর সংস্কার করে নিজের নামে নামকরণ করতে চেয়েছিলেন। আরিফুল ইসলাম এ বিষয়েও বাংলা ট্রিবিউনে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিলেন।
এ বিষয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রে রিন্টু বিকাশ চাকমা ও জেলা প্রশাসক সুলতানা পারভীনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তারা কেউ ফোন রিসিভ করেননি।
এক বছরের সাজা জেলা প্রশাসনের মোবাইল কোর্ট বাংলা ট্রিবিউন ভ্রাম্যমাণ আদালত মাদক মামলা সাংবাদিক আরিফুল