ই-শপিং-এ ঠকছে ক্রেতা, নজরদারি চান ভুক্তভোগীরা
১৫ মার্চ ২০২০ ০২:৩৫
তথ্য ও প্রযুক্তির অবদানে জীবনমান সহজ হচ্ছে দিনকে দিন। আর এই সাধারণ জনগণ নিজেদের জীবনযাত্রার মান আরো সহজতর করতে ক্রমেই ঝুঁকছে অনলাইন শপিং-এর দিকে। অনলাইনের মাধ্যমে ঘরে বসেই পন্যের ছবি, গুনগত মান ও টাকার পরিমান দেখে পন্য অর্ডার করছেন গ্রাহকরা। বিক্রেতারাও এক-দুই দিনের মধ্যেই বিভিন্ন কুরিয়ার যোগে পৌছে দিচ্ছে পণ্য। এই সহজ মাধ্যমকে সাধারনেরা সহজে গ্রহণ করা শুরু করলেও বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রতারক চক্র। অনলাইনে আর্কষণীয়, কমদাম ও গুনগত মানের পন্যের কথা বলে টাকা হাতিয়ে নিয়ে যাচ্ছে প্রতারক চক্র। আর তাই তো সাধারণের দাবী যথাযথ আইন প্রয়োগের মাধ্যমে নিরাপদ হোক অনলাইন শপিং ব্যবস্থা।
এমনই এক অনলাইন শপিং-এ প্রতারণার শিকার কক্সবাজারের উজ্জ্বল দাশ জানান, ‘অনলাইনে মোবাইল ফোন (আইফোন ইলেভেন-মাস্টার পিস) অর্ডার দিয়ে পেয়েছেন স্যামসাং কোম্পানির ভাঙা নষ্ট মোবাইল।’
বিস্তারিত জানাতে গিয়ে ভুক্তভোগী বলেন, ‘অনলাইনে (আইফোন ইলেভেন প্রো-মাস্টার পিস) ৪ হাজার ৫০০ টাকায় দেখে অর্ডারের জন্য দেওয়া (০১৭৯১৩১০৬৪২) নাম্বারে ফোন করে অর্ডার দেই। ওই ফোনের সঙ্গে একটি ডিজিটাল হাত গড়িও ফ্রি থাকায় আগ্রহটা ছিল আরো বেশি। অর্ডারের একদিন পর (২৯ ফেব্রুয়ারি) এসএ পরিবহনের কুরিয়ার থেকে ফোন আসলে ২০০ টাকা পরিবহণ খরচ সহ ৪ হাজার ২০০ টাকা দিয়ে (মেমো নাম্বার-৩৬৩৬৪২) মেমোতে স্বাক্ষর শেষে একটি প্যাকেট বুঝে নেই। এরপর প্যাকেট খুলে খুবই নিরাশ হই। কারন প্যাকেট খুলে আইফোন পাইনি পেয়েছি স্যামসাং’র একটি নষ্ট ভাঙা মোবাইল।’
উজ্জ্বল আরো বলেন, ‘আমাকে আরো একটি ডিজিটাল ঘড়ি পাঠানোর কথা ছিল। কিন্তু প্যাকেট খুলে ভাঙা মোবাইল দেখেই মন খারাপ হয়ে যায়। এসএ পরিবহনের কর্মকর্তাকে দেখালে তাদের কিছু করার নেই বলে জানান। পরে অর্ডার করা নাম্বারে (০১৭৯১৩১০৬৪২) পুনরায় ফোন করে ভাঙা মোবাইলের কথা জানালে তিনি বলেন আরো ৫০০ টাকা পাঠালে বিবেচনা করে দেখবেন। এরপর তাকে একাধিকবার ফোন করলেও পাওয়া যায়নি। যদিও অন্য নাম্বার থেকে ফোন করলে রিসিভ করেন।’
পরে এসএ পরিবহনে ওই অনলাইন শপিং থেকে দেওয়া মেমোতে উল্লেখ থাকা মোবাইল বিক্রির প্রতিষ্ঠানে (সিয়াম এক্সপেস, ৫২৫-এ ওয়ান, পান্থ পথ, ঢাকা,-১২০৫-০১৭২৪৮২২৬১২) নাম্বারে ফোন করলে নাম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়।
উপায়ন্তর না দেখে অন্য একটি নাম্বার থেকে আইফোন অর্ডার করা (০১৭৯১৩১০৬৪২) নাম্বারে ফোন করলে মোবাইল রিসিভ করলে নাম-ঠিকানা জানতে চাইলে বলেন না। আইফোন অর্ডার করতে চাইলে বলেন ৪ হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে বুঝে নিতে। পরে উজ্জ্বলের সাথে প্রতারণার ব্যাপারে জানতে চাইলে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে মোবাইল কেটে দেয়।
একইভাবে অনলাইনে শপিং করে প্রতারণার শিকার হয়েছেন ফাউজিয়া আফ্রিন। তিনি জানান, ‘অনলাইনে সুন্দর কাপড় দেখে অর্ডার করে ঠকেছেন। অনলাইনে দেখতে যতটা সুন্দর বাস্তবে তার উল্টো। দেওয়া হয় খুবই নিম্ন মানের কাপড় এবং দামও বেশি।’
এভাবে প্রতারিত হওয়া আরো একজন ভুক্তভোগী মিনহাজ উদ্দিন জানান, ‘অনলাইন থেকে একটি ব্যাগ নিয়েছিলাম যার মূল্য ২৮০ টাকা। পরে পরিবহনের র্চাজ ফি ১০০ টাকা দিয়ে ওই ব্যাগ নেই ৩৮০ টাকায়। এরপর জরুরী কাজে চট্টগ্রাম গেলে সেখানে শপিং করতে গিয়ে দেখি যে ব্যাগ ৩৮০ টাকা দিয়ে কিনেছি ওই ব্যাগের আসল দাম মাত্র ২০০ টাকা।’
এ ব্যাপারে সচেতন মহল বলছেন, প্রযুক্তির সঙ্গে দেশ এগিয়ে চলছে। সুতরাং অনলাইন শপিংকে আরো উন্নত করা হোক। তবে এই শপিং ব্যবস্থা একটি পরিষ্কার কাঠোমোর মধ্যে আসলে অসাধুদের কাছে লোকজন আর ঠকবে না। এর জন্য আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও প্রতারণাকারী অনলাইন শপিং সেন্টারগুলো নজরদারি করা দরকার। যাতে করে গ্রাহকরা প্রতারণার শিকার না হয়।
এ ব্যাপারে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন জানান, ‘প্রতারণার শিকার ক্রেতারা যদি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ করে তাহলে বিষয়টি তদন্ত পূর্বক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পাশাপাশি গ্রাহকদেরও উচিৎ জেনে শুনে অনলাইনে শপিং করা।’