রাঙামাটিতে ‘অস্ত্রের মুখে’ জনপ্রতিনিধি-শিক্ষকসহ তিনজনকে অপহরণ
১৫ মার্চ ২০২০ ০২:৪০
রাঙামাটির বাঘাইছড়ি উপজেলায় ‘অস্ত্রের মুখে’ জনপ্রতিনিধি ও অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষকসহ তিনজনকে অপহরণের খবর পাওয়া গেছে। শনিবার (১৪ মার্চ) দিবাগত রাতে উপজেলার পৃথক তিন এলাকা থেকে তাদের অপহরণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে থানা পুলিশ।
অপহৃতরা হলেন, উপজেলার বাঘাইছড়ি ইউনিয়নের উগলছড়ি গ্রামের পূর্ণ কিশোর চাকমা (৭০), জীবতলি ইউনিয়নের ইউপি সদস্য সমীরণ চাকমা (৪৫) এবং উপজেলার মধ্যম বাঘাইছড়ি এলাকার গাড়িচালক মেরিন চাকমা (২৫)।
অপহৃতদের তিনজনের মধ্যে পূর্ণ কিশোর চাকমা বাঘাইছড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (এমএন লারমা) নেতা জুপিটার চাকমার বাবা। এছাড়া জীবতলি ইউপি সদস্য সমীরণ চাকমা জনসংহতি সমিতির (এমএন লারমা) রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত বলে জানা গেছে।
পিতাকে অপহরণের দাবি করে জনসংহতি সমিতির (এমএন লারমা) নেতা জুপিটার চাকমা জানান, ‘গত শনিবার দিবাগত রাত আড়াইটার সময় সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জেএসএসের ৭-৮ জন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী ঘরের দরজা ভেঙে আমার বাবাকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। অপহরণের পর এখনো পর্যন্ত বাবার কোনো খোঁজ পাইনি।’
এ প্রসঙ্গে বাঘাইছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুল মনজুর জানান, ‘বাঘাইছড়িতে তিন এলাকা থেকে তিনজনকে অপহরণের খবর আমরা মৌখিকভাবে জেনেছি। এ পর্যন্ত কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ জানায়নি। অপহৃতদের মধ্যে প্রাক্তন এক শিক্ষক ও বর্তমান এক ইউপি সদস্য রয়েছেন।’
ওসি আরো জানান, ‘অপহরণের ঘটনার পর আমরা এলাকায় খোঁজখবর নিয়ে যতটুকু জেনেছি অপহৃতদের পরিবারের সদস্যরা জনসংহতি সমিতির (এমএন লারমা) রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। অপহরণকারীরা সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) লোক হতে পারে বলেও আমরা জেনেছি।’
বাঘাইছড়ি উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (এমএন লারমা) প্রভাবশালী নেতা সুদর্শন চাকমা বলেন, ‘অপহৃতরা আমাদের দলের নেতাকর্মীদের আত্মীয়-স্বজন হওয়ায় সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জেএসএসের লোকজন তাদের অপহরণ করেছে। আমরা সকাল থেকে স্থানীয় মুরুব্বিদের মাধ্যমে অপহরণকারীদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছি। এখনো পর্যন্ত আমরা অপহরণকারীদের কাছ থেকে কোনো বার্তা পাইনি। এছাড়া আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীকেও বিষয়টি অবগত করা হয়েছে। তারাও অপহৃতদের উদ্ধারে চেষ্টা চালাচ্ছে।’
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ১৮ মার্চ পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (এমএন লারমা) প্রভাবশালী নেতা ও বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান সুদর্শন চাকমার কাছে হেরে যান সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) প্রার্থী ও তৎকালীন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বড়ঋষি চাকমা।
নির্বাচনে হেরে যাওয়া ও উপজেলার শীর্ষনেতারা বিভিন্ন মামলার আসামি হওয়ার পর নানান কারণে বাঘাইছড়ি উপজেলায় রাজনৈতিকভাবে আরো কোণঠাসা হয়ে পড়ে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জনসংহতি সমিতি (জেএসএস)। তবে শনিবারের অপহরণের ঘটনায় স্থানীয়দের ভাষ্য, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে চাপে রাখতেই তাদের পরিবারের সদস্য ও ইউপি সদস্যকে অপহরণ করেছে জেএসএস।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, আগামী ১৮ মার্চ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের একবছর পূর্ণ হতে যাচ্ছে। ২০১৯ সালের উপজেলা নির্বাচনে নিজেদের সমর্থিত প্রার্থী হেরে যাওয়ার বছরের মাথায় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নিজেদের রাজনৈতিক শক্তি ও অবস্থানকে জানান দিতে হতে পারে এমন অপহরণের ঘটনা। বিশ্লেষকরা আরো বলছেন, রাজনৈতিক কারণে পরিবারের সদস্যকে অপহরণ যদি করা হয়, তবে সেটা এক ধরণের হীন্য মানসিকতা।
তবে অপহরণের অভিযোগ প্রসঙ্গে বাঘাইছড়ি উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন জেমসএস’র বাঘাইছড়ি উপজেলা সাধারণ সম্পাদক বড়ঋষি চাকমার মুঠেফোনে একাধিবার চেষ্টা করেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি। অন্যদিকে জেএসএসের অন্যান্য নেতৃবৃন্দের মুঠোফোনে চেষ্টা করেও কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।