কোভিড-১৯: কারাগারে নতুন ও অসুস্থদের আলাদা রাখার ব্যবস্থা
১৫ মার্চ ২০২০ ১০:১৭
ঢাকা: দেশে করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার পর দেশের কারাগারগুলোতে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। কারা মহাপরিদর্শকের এক নির্দেশনায় কারাগারগুলোতে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বিশেষ ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। বিশেষ করে যারা সর্দি, জ্বর ও কাশিতে আক্রান্ত, তাদের থাকার জন্য আলাদা ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। এছাড়া নতুন করে যাদের কারাগারে পাঠানো হচ্ছে, তাদেরও কারা ফটকে পরীক্ষা করে প্রবেশ করাতে বলা হয়েছে। এমনকি নতুন বন্দিদেরও আলাদা করে রাখতে বলা হয়েছে।
শুক্রবার (১৩ মার্চ) অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল আবরার হোসেন করোনাভাইরাস প্রতিরোধে কারাগারগুলোর প্রস্তুতি বিষয়ে এসব তথ্য জানান সারাবাংলাকে।
কর্নেল আবরার বলেন, মারাত্মক ভাইরাস করোনা প্রতিরোধে কারাগারগুলোতে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। নতুন বন্দিদের জন্য গেটে পরীক্ষার ব্যবস্থা রাখতে বলা হয়েছে। অসুস্থ রোগীদের আলাদা করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। এছাড়া প্রত্যেক কারাগারে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বিতরণ, জীবাণুনাশক স্প্রে করাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
কারা মহাপরিদর্শক বলেন, নির্দেশনা পেয়ে এরই মধ্যে সব কারাগারে জ্বর-সর্দিতে আক্রান্তদের হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। সাধারণ বন্দিদের থেকে আলাদা করে রাখা হয়েছে। দিনের বেলাতেও তাদের সঙ্গে সাধারণ বন্দিদের মিশতে দেওয়া হচ্ছে না। নতুন বন্দিদেরও আলাদা রেখে মনিটরিং করা হচ্ছে। মনিটরিং শেষে তাদের সাধারণ সেলে থাকার অনুমতি মিলছে।
কারাগারে গৃহীত বিভিন্ন সর্তকর্তামূলক ব্যবস্থা তুলে ধরে অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক আরও বলেন, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারসহ বিভাগীয় কারাগারগুলোর গেটে পরীক্ষার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তাদের প্রয়োজনীয় শারীরিক চেকআপ করার পর জীবাণুনাশক দিয়ে হাত ধুয়ে ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে। প্রয়োজন ছাড়া স্বজনদের সাক্ষাতেও নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। দর্শনার্থী পাস কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে একটি মামলায় ১৫ দিন পর শুক্রবার (১৩ মার্চ) সকালে জামিনে বেরিয়েছেন আকবর আলী। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, কারাগারে যাওয়ার পর শরীরে জ্বর আসে। করোনাভাইরাসের ভয়ে আমাকে আলাদা করে রাখা হয়েছিল। চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়েছে। কারও সঙ্গে মিশতে দেওয়া হয়নি। ঘরের মধ্যেই সবসময় থাকতে হয়েছে। এখন কারাগারেও সবাই মাস্ক পড়ে চলাফেরা করছে। তাছাড়া নতুন বন্দিদেরও আলাদা সেল করে সেখানে রাখা হচ্ছে। সকাল-বিকেল শরীরের তাপমাত্রা মাপা হচ্ছে।
নরসিংদীর জেল সুপার নুরুন্নবী চৌধুরীর সঙ্গে কথা হয় মোবাইলে। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, কারাগারে করোনা প্রতিরোধে সব ধরনের ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। কারা হাসপাতাল প্রস্তুত করেছি, পাশাপাশি কোনো রোগীকে যেন অন্য হাসপাতালে স্থানান্তর করা যায়, সে বিষয়েও প্রস্তুতি রাখা হয়েছে।
দিনাজপুর জেলা কারাগারের কারারক্ষী আব্দুল কাদের সারাবাংলাকে বলেন, কারা অধিদফতরের নির্দেশনা অনুযায়ী করোনাভাইরাস প্রতিরোধে বন্দিদের নানা সতর্কতামূলক বার্তা দেওয়া হয়েছে। খাবার আগে ও খাবার পরে ভালো করে হাত ধুতে বলা হয়েছে। গোসল বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ঘরের ভেতরে কাপড় শুকাতে বারণ করা হয়েছে। যথাসম্ভব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে বলা হয়েছে।
আব্দুল কাদের আরও বলেন, কারও জ্বরের উপসর্গ দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে তাকে আলাদা করে রাখার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। কারাগারের ডাক্তার ছাড়াও বাইরে থেকে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের দিয়ে চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা করা হয়েছে। দর্শনার্থীদের প্রবেশে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে। বন্দিদেরও বলা হয়েছে, খুব বেশি প্রয়োজন ছাড়া স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাৎ মিলবে না। কারাগারে আসা নতুন বন্দিদের আলাদাভাবে রেখে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে।