‘করোনার প্রভাবে ক্রয় আদেশ বাতিল করেছে ইতালি’
১৫ মার্চ ২০২০ ১৭:১৯
ঢাকা: মরণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রভাবে ইতালিসহ বেশকিছু দেশ তাদের ক্রয় আদেশ বাতিল করতে চাচ্ছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি বলেন, ‘ইতালি এই ভাইরাসের জন্য ব্যবসা বাণিজ্যে বড় রকমের বিধি-নিষেধ আরোপ করতে যাচ্ছে। এরইমধ্যে বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের ক্রয়াদেশও বাতিল করতে চাচ্ছে।’
রোববার (১৫ মার্চ) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।
ক্রয়াদেশ বাতিল করলে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে দেশের অর্থনীতিতে। তবে তৈরি পোশাক শিল্প বন্ধ করে দেওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়নি বলেও উল্লেখ করেন বাণিজ্যমন্ত্রী। তিনি জানান, গার্মেন্টস কর্মীদের সচেতন করা হচ্ছে। আর যে ক্ষতি বর্তমানে ব্যবসা বাণিজ্যে হচ্ছে তা কিভাবে পূরণ করা যায় সেই চেষ্টাই এখন চলছে।
বাণিজ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ‘যেখান থেকে কাঁচামাল আনা হয় সেখানে আমরা ধীরগতি দেখছি। সুখের বিষয় হলো চায়নাতে শ্রমিকরা আবার কারখানায় ফিরে গেছে। তারা আবার নতুন করে শুরু করেছে। এর কিছুটা প্রভাব পড়েছে আমাদের আমদানির ওপর। সেটা কিভাবে পূরণ করা যায় সেই চেষ্টা চলছে। এর থেকেও আরেকটা সমস্যা আমাদের নজরে এসেছে। কিছু কিছু দেশ তারা তাদের ক্রয়াদেশ বাতিল করতে চাচ্ছে অথবা অন্যকোনো খানে দিয়ে দিচ্ছে। ফলে আমার মনে হয় সেখানে আমাদের কিছুটা সমস্যা হবে। আরও তো সমস্যা সার্বিকভাবে সারা পৃথিবীজুড়ে রয়েছে। যোগাযোগ বন্ধ, ট্রাভেল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তার একটা প্রভাব যখন সারা পৃথিবীতে পড়বে তখন কিছু প্রভাব আমাদের দেশে পড়বে।’
তিনি বলেন, ‘দেশে করোনার প্রভাবের ভিত্তি তেমন বেশি মাত্রায় পায়নি। মাত্র তিন জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। তারা আবার সুস্থ্য হয়েও গেছে। বাণিজ্যমন্ত্রণালয়ও খুব শক্তভাবে বিষয়টি দেখছে। আমরা ঠিক করেছি প্রতিসপ্তাহেই বা এর বাইরেও বসতে পারি পুরোপুরি বিষয়টা কিভাবে সমাধান করা যায় সে বিষয়ে আমরা কাজ করবো।’
কোন কোন দেশ আদেশ বাতিল করতে চাচ্ছে জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ইতালি কিছু কিছু ক্রয়াদেশ বাতিল করেছে। এটা বড় সমস্যা হচ্ছে সঠিক সময় পণ্য না পাওয়ার কারণে তারা আদেশ বাতিল করতে চাচ্ছে। আবার তারা বলছে পণ্য বিমানে করে পাঠাও। সেখানে সমস্যা রয়েছে। যে সময়ে পণ্যটা বিক্রি হবে তার থেকে যদি পিছিয়ে যায়। তাছাড়া যে সমস্ত দেশ নেবে তাদেরও করোনার ভয় আছে। স্বার্বিক অবস্থা আপনারা সবাই জানেন, সারা পৃথিবী একটা অস্থির সময় পার করছে। আমরা আশা করছে খুব শিগগিরই এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে পারবো।’
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে জমায়েত স্থান পরিহার করতে সেক্ষেত্রে বড় বড় গার্মেন্টস শিল্পে তিন চার হাজার শ্রমিক কাজ করে তাদের ক্ষেত্রে কী ভাবা হচ্ছে জানতে চাইলে টিপু মুনশি বলেন, ‘বাংলাদেশে যে তিন জন করোনা আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। তারা তিনজনই সুস্থ আছেন।’ এখনো সে রকম কোনো সমস্যা হয়নি যে গার্মেন্টস শিল্পে এধরনের প্রভাব পড়বেনা বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
গার্মেন্টস শিল্পে একটা সচেতনতা তৈরি করা হয়েছে। অধিকাংশ কারখানায় মাস্ক, হাত ধোয়ার জন্য সাবানসহ স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কোনো গার্মেন্টস শিল্পে এমন কোনো অবস্থা তৈরি হয়নি যে বন্ধ করে দিতে হবে। আর স্কুলগুলো এখনও বন্ধের চিন্তা করা হয়নি।
দেশের বাইরে থেকে যারা আসছে তারা তো বিভিন্ন স্থানে লোকজনের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে এখানে আপনারা কি পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছেন জানতে চাইলে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বিদেশ থেকে আসা কমে গেছে। আপনারা জানেন যে গত কয়েক বছরে আমাদের দক্ষতা বাড়ানোর পর বিদেশ থেকে এমনিতেই লোকজন আসা কমে গেছে। এখন আমরা ডিজিটাল অর্ডার নেই, দাম নির্ধারণ করে থাকি। আজ থেকে ২৫ থেকে ৩০ বছর আগে যে পরিস্থিতি ছিল সেটা কিন্তু এখন আর নেই। আজকাল অর্ডারতো সরাসরি কেউ এসে দেখে না। এজন্য অর্ডারে কোনো সমস্যা নেই। সমস্যা হচ্ছে কাঁচামালে। আমাদের নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ৬০ শতাংশ কাঁচামাল আমদানি করতে হয়। যেটা নিটিং, ওভেন খাতে ৯০ শতাংশ আমরা নিজেরাই তৈরি করি। ফলে সাপ্লাই ও সেলিং দুই খাতেই সমস্যা। এটা শুধু আমাদের জন্য না সারা পৃথিবী সমস্যায় পড়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আশার কথা হলো চায়নাতে করোনায় আক্রান্ত রোগীদের কিছুটা উন্নিত হয়েছে। নতুন করে ইউরোপে গেছে। আমার ধারনা ইউরোপ উন্নত দেশ তারা এব্যপারটা তারাতারি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। কাঁচামাল আমদানিতে কিছুটা ধীর ছিল কারণ। কিছু দিন আগে তাদের নববর্ষ উপলক্ষে ছুটি গেল। সেই ছুটি কিছুটা বাড়িয়েছে। চায়নার সব প্রদেশেই এরকম ঝামেলা তা কিন্তু নয়। কয়েকটি প্রদেশে হয়েছে। অন্যান্য স্থানে তেমন কারখানা বন্ধ হয়নি। সাময়িক সমস্যার জন্য নববর্ষের ছুটি বাড়িয়েছিল। তবে যে উহুানে সবচেয়ে বেশি সমস্যা হয়েছিল সেখানে অনেকটা নরমাল হয়ে গেছে। তাদের ৯০ শতাংশ লোক কাজে ফিরে গেছে। এছাড়া গত ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে বাংলাদেশে পণ্য রফতানি শুরু করছে।