‘ভোরের যাত্রীদের টার্গেট করত ছিনতাইকারী চক্র’
১৫ মার্চ ২০২০ ১৭:৫০
ঢাকা: রাজধানীর মুগদা এলাকা থেকে ছিনতাইকারী চক্রের চার সদস্যকে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। এই ছিনতাইকারী চক্রের আক্রমণেই গত ২৯ ফেব্রুয়ারি ভোরে রাজধানীর মুগদা এলাকায় রিকশা থেকে পড়ে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন তারিনা বেগম লিপা।
রোববার (১৫ মার্চ) দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার আবদুল বাতেন এসব তথ্য জানান। চক্রের গ্রেফতার চার জন হলেন— মিজুয়ান মিয়া, শেখ লিটন, মো. আব্দুল মজিদ ও রফিক হাওলাদার।
অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, “শনিবার (১৪ মার্চ) দিবাগত রাতে রাজধানীর মুগদা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে গুলিভর্তি একটি আগ্নেয়াস্ত্র, দু’টি ছুরি ও ছিনতাই কাজে ব্যবহৃত দু’টি প্রাইভেট কার এবং নিহতের একটি ট্যাব ও নগদ এক হাজার সাতশ টাকা উদ্ধার করা হয়।’
ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, ‘লিপা নামের ওই নারী মারা যাওয়ার বিষয়টি গণমাধ্যমে পরদিন দেখে তারা মিরপুরে গা ঢাকা দেয়। গতকাল শনিবার রাতেও চক্রটি ছিনতাইয়ের উদ্দেশে বের হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল। এ সময় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে মুগদা এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। চক্রটি রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় প্রাইভেটকার ব্যবহার করে রিক্সা যাত্রী ও পথচারীদের ব্যাগ ছিনতাই করতো।’
গ্রেফতার মিজুয়ানকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে তিনি জানান, গত ২৯ ফেব্রুয়ারি ভোরে বেলায় মুগদা এলাকার তারিনা বেগম লিপা ছিনতাইয়ের ঘটনায় তারা জড়িত ছিল। তারা খিলগাঁও ফ্লাইওভার থেকে কমলাপুর স্টেডিয়ামের মাঝামাঝি অবস্থান করছিল। ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে লিপা রিক্সা যাওয়ার সময় তার হাতে থাকা ব্যাগটি দেখে তা নেওয়ার জন্য টার্গেট করে এবং রিক্সাকে প্রাইভেটকারযোগে ধীর গতিতে অনুসরণ করতে থাকে। পরে দক্ষিণ মুগদার ইউনিক বাস কাউন্টার অতিক্রম করার পরে তারা লিপার হাতে থাকা ব্যাগ ধরে টান দেয়। এ সময় লিপা নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রিক্সা হতে পড়ে মাথায় মারাত্মক আঘাতপ্রাপ্ত হয়।
ছিনতাইকারীর হাতে নারী হত্যা: চার আসামি রিমান্ডে
মিজুয়ান জানায়, এসময় তাদের বড়ভাই মনা গাড়ি চালাচ্ছিলেন। পরে তারা টয়েনবি রোড ফকিরাপুল, মতিঝিল, মিরপুর টেকনিক্যালে আরও একটি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটায়। তারপর তারা বাসায় ফিরে যায়। গণমাধ্যমে প্রচারিত রিপার মৃত্যু সংবাদ শুনে তারা মিরপুরে বেশ কয়েকদিন গা ঢাকা দিয়েছিল।
আব্দুল বাতেন বলেন, এ ঘটনায় জড়িত মনা পলাতক আছে। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে। রাজধানীর বিভিন্ন থানায় গ্রেফতার শেখ লিটনের বিরুদ্ধে ৪টি মামলা রয়েছে। এছাড়াও পলাতক মনার বিরুদ্ধেও ৪টি মামলা আছে। তারা আগ্নেয়াস্ত্র ও ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করে রাজধানীর বিভিন্ন রাস্তায়, তাদের সুবিধামত স্থানে রাতে বা ভোররাতে রাস্তায় চলাচলকারী ব্যক্তিদেরকে গতিরোধ করে অস্ত্র ও ছরির মাধ্যমে ভয়ভীতি দেখিয়ে মালামাল নিয়ে যায়। গতকাল রাতেও তারা ছিনতাইযের প্রস্তুতি নিচ্ছিল।
এক প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত কমিশনার আব্দুল বাতেন বলেন, ‘ঢাকায় যারা প্রাইভেটকারে ছিনতাই করে তারা যদি ছিনতাইয়ের প্রস্তুতি না নেয় তাহলে শনাক্ত করা কঠিন। আর ছিনতাইকারীরাও টহল পুলিশ কিংবা পুলিশ পেট্রোল গাড়ির সামনে ছিনতাই করে না। তবে ছিনতাই এবং নগরবাসীর জানমাল রক্ষায় পুলিশ আরও বেশি প্রস্তুত থাকবে।’
উল্লেখ্য, গত ২৯ ফেব্রুয়ারি সিলেটের গোলাম কিবরিয়া ও তার স্ত্রী তারিনা বেগম লিপা দুই সন্তানসহ কমলাপুর রেলস্টেশনে যাওয়ার সময় ছিনতাইকারীদের একটি চক্র লিপার ব্যাগ ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় তিনি রিকশা থেকে পড়ে গুরুতর আহত হন। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে সেখানে তার মৃত্যু হয়।