সীমিত আকারে মসজিদে যাওয়ার পরামর্শ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর
১৫ মার্চ ২০২০ ২২:৫৯
ঢাকা: স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, ‘ইতোমধ্যেই ওমরাহ ভিসা বন্ধ হয়ে গেছে। মক্কায় কোয়াব সংখ্যাও সীমিত হয়ে গেছে। কাজেই আমাদের এখানেও মসজিদে মুসল্লির সংখ্যা কম আসলে ভালো হয়। যারা বিদেশ থেকে এসেছেন তারা এবং তাদের স্বজনরা যেনো মসজিদে না আসেন। বাসায় বসে ধর্মীয় কাজ করলে ভালো। এই বিষয়ে আমরা পরামর্শ দিয়েছি। আমরা যদিও বলছি যে, সীমিত আকারে মসজিদে আসার জন্য।’
এই কারণেই বর্তমানে ওমরাহ হজ পর্যন্ত বন্ধ রাখা হয়েছে। কাবা শরীফে তাওয়াফও কমে গেছে। সেক্ষেত্রে মসজিদ মসজিদেও মানুষ সীমিত আসাই ভালো।
রোববার (১৫ মার্চ) দুপুরে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয় উপায় শীর্ষক এক আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক শেষে এসব কথা বলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা দেখতেই পাচ্ছেন কিভাবে করোনা সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে। আর মানুষের সমাগমের কারণে আরও বাড়ছে। তাই ওয়াজ মাহফিল, কীর্তনসহ ধর্মীয় অনুষ্ঠান আপাতত বন্ধ রাখাই ভালো। কেন না এর ফলে একসঙ্গে অনেক লোকের সমাগম হয়। ধর্ম মন্ত্রণালয়কে বলেছি, আমাদের দেশে এই মুহূর্তে যাতে ওয়াজ মাহফিল বা অন্যান্য ধর্মের যে ধর্মীয় অনুষ্ঠান হয় এগুলি থেকে যাতে বিরত থাকে। তাতে হয়তো সংক্রমণটা আরও কমবে এবং কমার সম্ভাবনা থাকবে।’
তিনি বলেন, ‘এই বিষয়ে ইতোমধ্যেই পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। মসজিদে ইমামদের করোনা বিষয়ে মানুষকে সচেতন করার আহ্বান জানানো হয়েছে। ইমামরা যেন বাইরে থেকে আসা সবাইকেই মসজিদে আসতে বারণ করেন, তাদের কোয়ারেন্টাইনে থাকতে পরামর্শ দেন। কারণ তাদের কোয়ারেন্টাইন রাখা অনেক কষ্টের।’
স্কুল-কলেজ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত দেওয়ার এখতিয়ার স্বাস্থ্যমন্ত্রণালয়ের নেই জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘এই সিদ্ধান্ত শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে নিতে হবে। তবে এক্ষেত্রে আমরা স্কুল-কলেজগুলোর রুম পরিষ্কার করে শিক্ষার্থীদের বসার ব্যবস্থা করার অনুরোধ করেছি।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘শিল্প কারখানায় যে শ্রমিকরা কাজ করে, তাদের প্রতিদিন কারখানার প্রবেশমুখে তাপমাত্রা পরীক্ষার ব্যবস্থা রাখতে হবে। তাদের প্রত্যেকের জন্য হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহারের ব্যবস্থা রাখতে হবে। প্রবেশের সময় কারও তাপমাত্রা বেশি পেলে তাকে কাজ থেকে বিরত রাখতে হবে।’
সর্দি, কাশি ও জ্বর থাকলে গণপরিবহনে ভ্রমণ না করারও অনুরোধ জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘শরীরে জ্বর বা সর্দি-কাশি বেশি থাকলে সেক্ষেত্রে বর্তমান করোনাভাইরাস প্রকোপের সময়ে বাস, ট্রেন, লঞ্চসহ যানবাহনে ভ্রমণ করবেন না। একই সঙ্গে আক্রান্ত দেশে আত্মীয়-স্বজন থাকলে এই পরিস্থিতিতে দেশে আসতে নিষেধ করুন। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সব দিক দিয়ে পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। সর্দি- জ্বর-কাশি সেরে যাওয়ার পর তারা ভ্রমণ করবে এবং যানবাহন ব্যবহার করবে। লঞ্চ, ইস্টিমার ও ট্রেন— এগুলোতে প্রত্যেকবার যাত্রী নামার পরে পরিষ্কার করে নতুন যাত্রী তোলার জন্য বলা হয়েছে। দেশের মানুষের সতর্কতা ও সচেতনতাই করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ অনেক বেশি সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশে আমরা নতুন কেইস পেয়েছি। কাজেই এখন বলতে পারি না যে, বাংলাদেশে করোনাভাইরাস নাই। আছে এবং ছড়িয়ে যাতে না যায় সেদিকে আমরা বেশি সতর্কতা অবলম্বন করছি। চীন থেকে এই ভাইরাসের উপদ্রব শুরু হলেও এখন পুরো ইউরোপ এ ভাইরাসে জর্জরিত। আমেরিকায়ও শুরু হয়েছে।’
‘নতুন করে যে দুজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন, তারা একজন জার্মানি ও একজন ইতালি প্রবাসী। তারা দুই-তিন দিন আগে দেশে পৌঁছেছেন। আর পূর্বের আক্রান্ত তিন জন সুস্থ হয়ে গেছেন এবং তাদের বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হয়েছে’ বলেও জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলাম, স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আলী নূর, পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের মহাপরিচালক কাজী আ খ ম মহিউল ইসলাম।
এর আগে সকাল ১১টায় স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সভাপতিত্বে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে করোনাভাইরাসের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট শ্রম, বিমান, সমাজকল্যাণ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ অন্যান্য ১৮টি মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি হিসেবে সিনিয়র সচিব, সচিব ও অতিরিক্ত সচিব পর্যায়ের কর্মকর্তাগণের সাথে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয় উপায় নিয়ে জরুরি বৈঠক হয়।
বৈঠকে দেশে করোনাভাইরাস অধিক হারে চলে এলে কি করা হবে, কোন মন্ত্রণালয়ের কি কাজ করবে সে বিষয়ে উপস্থিত প্রতিনিধিদের স্বাস্থ্যমন্ত্রী নির্দেশনা দেন।
করোনাভাইরাসে দেশ আক্রান্ত হলে কিভাবে বিশ্ব ইজতেমা ময়দান ব্যবহার করা হবে, শিল্প-গার্মেন্টস ব্যবহারে করণীয় বিষয়াদি, হাসপাতাল ব্যাবস্থাপনা, মসজিদ-মন্দিরে স্বল্প সময়ে জমায়েত হওয়া, মার্কেট প্লেস, শপিংমল, রাজনৈতিক সমাবেশ পরিহারে করণীয় বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা করা হয়।