এনইসি’তে উঠছে ১ লাখ ৯৩ হাজার কোটি টাকার সংশোধিত এডিপি
১৬ মার্চ ২০২০ ০৮:০২
ঢাকা: বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) সংশোধনের খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। ২ লাখ ২ হাজার ৭২১ কোটি টাকার মূল এডিপির জায়গায় সংশোধিত এডিপি’র (আরএডিপি) আকার দাঁড়াচ্ছে ১ লাখ ৯২ হাজার ৯২১ কোটি টাকা। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (এনইসি) পরবর্তী বৈঠকেই অনুমোদনের জন্য উত্থাপন করা হবে এই আরএডিপি। আগামী বৃহস্পতিবার (১৯ মার্চ) এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্রে জানা গেছে, আরএডিপি’র ১ লাখ ৯২ হাজার ৯২১ কোটি টাকার মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে থাকছে ১ লাখ ৩০ হাজার ৯২১ কোটি টাকা। আর বৈদেশিক সহায়তা থেকে বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৬২ হাজার কোটি টাকা। অর্থবছরের মূল ২ লাখ ২ হাজার ৭২১ কোটি টাকার এডিপি’র বৈদেশিক সহায়তা অংশ থেকে বাদ যাচ্ছে ৯ হাজার ৮০০ কোটি টাকা।
পরিকল্পনা বিভাগের সচিব মো. নূরুল আমিন রোববার (১৫ মার্চ) সারাবাংলাকে বলেন, আশা করছি আগামী ১৯ মার্চের এনইসি বৈঠকে সংশোধিত এডিপি’র খসড় অনুমোদন পাবে। আমরা এরই মধ্যে মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর সঙ্গে বৈঠক করেই বরাদ্দ নির্ধারণ করেছি। তবে কিছু কিছু মন্ত্রণালয়ের সরকারি তহবিলের অর্থের চাহিদা রয়েছে। সেটি পূরণে আমরা এনইসি বৈঠকে উপস্থাপন করব। গত অর্থবছর এরকম চাহিদা কারণে প্রধানমন্ত্রী ১ হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ বাড়িয়ে দিয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে আমরা সেই অর্থ চাহিদা অনুযায়ী ভাগ করে দিয়েছি। এ অর্থবছরও তিনি ইচ্ছা করলে বাড়িয়ে দিতে পারেন।
বৈদেশিক অর্থ কাঁটছাট করা হলেও সরকারি অর্থের চাহিদা কেন— এমন প্রশ্নের জবাবে নূরুল আমিন বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকারি তহবিলের অর্থপ্রাপ্তি সহজ করা হয়েছে। ফলে প্রকল্প পরিচালকেরা সহজেই অর্থ খরচ করতে পারছেন। অন্যদিকে বৈদেশিক অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে ঋণ চুক্তি সই ও কার্যকর করতে বেশ সময় লেগে যায়। তাছাড়া দরপত্র মূল্যায়নের সময় উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার কনকারেন্স পেতে যথেষ্ট বিলম্ব হয়। এরকম নানা জটিলতা থাকে।
সূত্র জানায়, মূল এডিপিতে প্রকল্প ছিল ১ হাজার ৪৭৫টি (সায়ত্তশাসিত সংস্থা বাদে)। সেখান থেকে ২৬৯টি বেড়ে আরএডিপিতে প্রকল্প সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ১ হাজার ৭৪৪টি। তবে এর মধ্যে নতুনভাবে অনুমোদিত প্রকল্প রয়েছে ২৪৬টি এবং মূল এডিপিতে অন্তর্ভুক্ত নেই— এমন ২৩টি প্রকল্প রয়েছে।
সংশোধিত এডিপি’র খসড়ায় দেখা যায়, বৈদেশিক সহায্যপ্রাপ্তির সুবিধার জন্য যুক্ত করা হচ্ছে ১৯০টি উন্নয়ন প্রকল্পের তালিকা, যা মূল এডিপিতে ছিল ২৪২টি। এছাড়া পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) লিংক প্রকল্প হিসেবে রাখা হচ্ছে ২২টি উন্নয়ন প্রকল্প, যা মূল এডিপিতে ছিল ৬২টি। বরাদ্দহীনভাবে অননুমোদিত নতুন প্রকল্পের সংখ্যা রয়েছে ৭৭১টি। মূল এডিপিতে এই তালিকায় ছিল ১ হাজার ৪৫টি প্রকল্প। সেই সঙ্গে স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্প রাখা হচ্ছে ১০৩টি, যা মূল এডিপিতে ছিল ৮৯টি প্রকল্প।
অন্যদিকে সংশোধিত এডিপিতে কমছে প্রকল্প সমাপ্তর লক্ষ্যমাত্রা। চলতি অর্থবছরের শুরুতেই ৩৫৫টি প্রকল্প সমাপ্ত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। এর মধ্য বিনিয়োগ প্রকল্প ছিল ৩৪১টি এবং কারিগরি সহায়তা প্রকল্প ১৪টি। কিন্তু সংশোধিত এডিপিতে এই লক্ষ্যমাত্রা ৩১৪টিতে নামিয়ে আনা হচ্ছে। এর মধ্যে বিনিয়োগ প্রকল্প ৩১২টি এবং কারিগরি সহায়তা প্রকল্প রয়েছে একটি। এক্ষেত্রে চলতি অর্থবছর ৪১টি প্রকল্প সমাপ্ত হচ্ছে না।
খাতভিত্তিক বরাদ্দ
আরএডিপিতে খাত হিসেবে সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে পরিবহন খাতে— ৪৭ হাজার ৫৫৪ কোটি ৩৬ লাখ টাকা, যা মোট সংশোধিত এডিপির ২৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে ভৌত পরিকল্পনা, পানি সরবরাহ ও গৃহায়ন খাতে। এ খাতে বরাদ্দ ধরা হচ্ছে ২৬ হাজার ৫১৫ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। এটি সংশোধিত এডিপি’র ১৩ দশমিক ৭৪ শতাংশ। আর বিদ্যুৎ খাতে তৃতীয় সর্বোচ্চ বরাদ্দ ধরা হয়েছে ২৩ হাজার ৭৬৫ কোটি ৪৯ লাখ টাকা, যা মোট আরএডিপির ১২ দশমিক ৩২ শতাংশ।
অন্যান্য খাতে দেওয়া প্রাথমিক বরাদ্দের মধ্যে রয়েছে— কৃষি খাতে ছয় হাজার ৭১৫ কোটি ৭১ লাখ টাকা; পল্লী উন্নয়ন ও পল্লী প্রতিষ্ঠান খাতে ১৫ হাজার ৭৫৪ কোটি ৭৩ লাখ টাকা; পানিসম্পদ খাতে ছয় হাজার ৩৬৭ কোটি ৭৯ লাখ টাকা; শিল্প খাতে তিন হাজার ৫৫০ কোটি ৪০ লাখ টাকা; তেল-গ্যাস ও প্রাকৃতিক সম্পদ খাতে দুই হাজার ৪১৭ কোটি টাকা; যোগাযোগে দুই হাজার ২২৮ কোটি টাকা; শিক্ষা ও ধর্মে ২০ হাজার ৪৩২ কোটি ৭৩ লাখ টাকা; ক্রীড়া ও সংস্কৃতিতে ৬১০ কোটি টাকা।
এছাড়া স্বাস্থ্য-পুষ্টি-জনসংখ্যা ও পরিবার কল্যাণে ১০ হাজার ৫২৬ কোটি টাকা; গণসংযোগে ১৯৮ কোটি টাকা; সমাজকল্যাণ-মহিলা বিষয়ক ও যুব উন্নয়নে ৭৯৮ কোটি টাকা; জনপ্রশাসনে পাঁচ হাজার ১৫৪ কোটি ৭২ লাখ টাকা; বিজ্ঞান, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে ১৬ হাজার ৭৯৫ কোটি টাকা এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান খাতে বরাদ্দ ধরা হচ্ছে ৫৪৪ কোটি ২৬ লাখ টাকা।
এই ১৭টি খাতে বরাদ্দ নির্ধারণ করা হয়েছে মোট ১ লাখ ৮৯ হাজার ৯২০ কোটি ৬১ লাখ টাকা। আর উন্নয়ন সহায়তা খাতে (ইউনিয়ন পরিষদসহ বিভিন্ন সংস্থার জন্য) বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে তিন হাজার কোটি টাকা।