ঢাকা: নভেল করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) দেশে আরও তিনজন আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)। এ নিয়ে দেশে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়ালো আটজন।
সোমবার (১৬ মার্চ) রাজধানীর মহাখালীতে আইইডিসিআর কার্যালয়ে করোনাভাইরাস নিয়ে আয়োজিত নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সাবরিনা ফ্লোরা।
অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সাবরিনা ফ্লোরা বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১০ জনের নমুনা শনাক্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে তিনজনের শরীরে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। অর্থাৎ দেশে নতুন করে আরও তিনজন করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। গত ১৪ মার্চ জার্মানি ও ইতালি থেকে আসা যে দুই ব্যক্তির করোনা আক্রান্তের খবর নিশ্চিত হওয়া গিয়েছিল, তাদেরই একজনের পরিবারের তিন সদস্য নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে একজন ২৫ বছর বয়ষ্ক নারী, দুইটি শিশু। শিশু দুইজনের মধ্যে একটি ছেলে (৬) ও একটি মেয়ে (২)।
তিনি বলেন, নতুন করে আক্রান্ত এই তিন জনের সংক্রমণ মৃদু। তাদের বাড়িতে রেখেই চিকিৎসা দেওয়া সম্ভব ছিল। কিন্তু তাদের মাধ্যমে অন্যরা যাতে আক্রান্ত না হন, তাই তাদের হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
আইইডিসিআর পরিচালক বলেন, ভাইরাসের লোকাল ট্রান্সমিশন হচ্ছে। যে কারণে একটি উপজেলার সব শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান, সভা-সমাবেশ ও সমাগম বন্ধের জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে বলা হয়েছে। এই উপজেলার সভা-সমাবেশ, মসজিদে জামাতে নামাজও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ১০ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ নিয়ে সর্বমোট ২৪১ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হলো। আক্রান্ত আটজন ছাড়া আর কারো মধ্যে করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায় নি। বর্তমানে ১০ জন আইসোলেশনে আছেন, প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেনটাইনে আছেন চার জন।
যে কোনো ধরণের গণজমায়েত বন্ধ রাখার আহ্বান জানিয়ে অধ্যাপক ফ্লোরা বলেন, যেখানে অপরিচিত মানুষের সমাবেশ হতে পারে সেগুলো অব্যশই বন্ধ রাখতে হবে। বয়স্ক এবং যারা দীর্ঘমেয়াদি অসুস্থতায় ভুগছেন, তাদের বাড়িতে থাকার নির্দেশ দিয়ে তিনি বলেন, অত্যাবশ্যকীয় হলে যেন বয়স্ক এবং অসুস্থ ব্যক্তিরা মাস্ক ব্যবহার করে বাইরে যান।
তিনি বলেন, জনগণের অংশগ্রহণ ছাড়া এ রোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না। বিভিন্ন দেশের তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রোগীরা মৃদু লক্ষণ-উপসর্গে ভুগছেন। যাদের ক্ষেত্রে হাসপাতালে যাওয়ার কোনও প্রয়োজন পরে না। তাই আমরা জোর দিচ্ছি সতর্কতায়।
তিনি আরও বলেন, হোম কোয়ারেনটাইনের নির্দেশনা না মানলে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। জেলা প্রশাসকরা সেটি করবেন। আমরা প্রাথমিকভাবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে স্থানীয় ও জেলা প্রশাসনকে জরিমানা করার কথা বলেছি।
উল্লেখ্য, ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো তিন জন করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী সনাক্ত হয়। এর মধ্যে দুইজন ইতালি থেকে আসা বাংলাদেশি ও দেশে থাকা তাদের একজনের আত্মীয়। ১৪ মার্চ আরও দুইজন করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী সনাক্ত হয় দেশে। এর মধ্যে একজন ইতালিফেরত ও আরেকজন জার্মানি ফেরত বলে জানায় আইইডিসিআর।
সোমবার (১৬ মার্চ) আক্রান্ত হওয়া তিনজন দেশে মোট আটজন করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগী সনাক্ত হলো। ইতোমধ্যেই প্রথম তিনজন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। বর্তমানে পাঁচজন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।