Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শত বছরে জাতির পিতা, মুজিববর্ষের উদযাপন শুরু


১৭ মার্চ ২০২০ ০০:০০

ঢাকা: ১৭ মার্চ। বাঙালি জাতির প্রতীক্ষিত উদযাপন শুরুর মাহেন্দ্রক্ষণ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী। শুরু হচ্ছে মুজিববর্ষ উদযাপন, চলবে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত। এবার ১৭ মার্চ মঙ্গলবার বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা, স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের মহান স্থপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে দেশে-বিদেশে উদযাপন করা হবে।

বিজ্ঞাপন

অবিভক্ত ভারতের পূর্ববঙ্গে তথা বর্তমানে বাংলাদেশের গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ রাত ৮টায় দিকে জন্মগ্রহণ করেন জাতির পিতা। অপরদিকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছরপূর্তি ২০২১ সালের ২৬ মার্চ ৫০ বছর পূর্তি হচ্ছে। দেশের স্বাধীনতা-সংগ্রামের আন্দোলনে অবিসংবাদিত নেতা ছিলেন তিনি। বাঙালি জাতির ইতিহাসে অবদানের কথা স্মরণ করে বর্ষটিকে ‘মুজিববর্ষ’ হিসাবে উদযাপনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার ও স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগ।

বিজ্ঞাপন

জাতীয় জীবনে মুজিববর্ষ উদযাপন ডামাঢোলের প্রাক্কালে বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় দেশেও করোনাভাইরাস আক্রন্ত রোগী শনাক্ত হয়। তাই গত ৮ মার্চ সরকার এবং জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি জনস্বার্থে ও জনকল্যাণে ১৭ মার্চের পূর্ব ঘোষিত অনুষ্ঠান জনসামাগম এড়িয়ে চলার লক্ষ্যে পুনর্বিন্যাস করেছে। আমন্ত্রিত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও বিদেশি অতিথিদের সফরও স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। সীমিত পরিসরে সারাদেশে উদযাপিত হতে যাচ্ছে এই মুজিববর্ষ।

আনুষ্ঠানিকভাবে মুজিববর্ষের ক্ষণগণনা শুরু হয় বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে। ১০ জানুয়ারি বিকাল ৫টা ১৭ মিনিটে রাজধানীর তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরে মুজিববর্ষের কাউন্টডাউন অনুষ্ঠানে মুজিববর্ষের লোগো উন্মোচন ও ক্ষণগণনা উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ও প্রধান সমন্বয়ক প্রধানমন্ত্রীর হাতে মুজিববর্ষের লোগো তুলে দেন তিনি। লোগো উন্মোচনের পর প্রধানমন্ত্রী সুইচ টিপে ক্ষণগণনার উদ্বোধন করেন, যা সারাদেশে একযোগে চালু হয়। সেদিন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধুর আরেক কন্যা শেখ রেহানা এবং বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয়।

১৯২০ সালের ১৭ই মার্চ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের ফরিদপুরের গোপালগঞ্জ মহকুমার টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন জাতির পিতা। পিতা শেখ লুৎফর রহমান এবং মাতা সায়েরা খাতুন। চার বোন এবং দুই ভাইয়ের মধ্যে শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন তৃতীয়। ডাকনাম ছিল ‘খোকা’। সময়ের সাহসিকতায় সেই খোকা নামের শিশুটিই শিক্ষা-দীক্ষা, সাহস, দক্ষতা ও দূরদর্শী নেতৃত্বে হয়ে ওঠেন স্বাধীন-সার্বভৌম জাতি-রাষ্ট্রের মহান স্থপতি, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

টুঙ্গিপাড়ার চিরায়ত গ্রাম-বাংলার সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না আবেগ-অনুভূতি শিশুকাল থেকে গভীরভাবে প্রত্যক্ষ করেছেন। শৈশব থেকে তৎকালীন সমাজ জীবনে তিনি জমিদার, তালুকদার ও মহাজনদের অত্যাচার, শোষণ ও প্রজা পীড়ন দেখে চরমভাবে ব্যথিত হতেন। সম্প্রীতির সামাজিক আবহে দীক্ষা পান অসাম্প্রদায়িক চেতনার। কিশোর বয়সেই সক্রিয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেন তিনি। গোপালগঞ্জের মিশন স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে অধ্যয়নকালে তৎকালীন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যোগদানের কারণে শেখ মুজিবুর রহমান প্রথমবারের মতো গ্রেফতার হয়ে কারাবরণ করেন। এরপর থেকে শুরু হয় আজীবন সংগ্রামী জীবনের অভিযাত্রা। সারাজীবন এদেশের মাটি ও মানুষের অধিকার আদায় ও কল্যাণের জন্য সংগ্রাম করেছেন। বাঙালি জাতির মুক্তির জন্য জীবনের ১৪টি বছর পাকিস্তানি কারাগারের অন্ধপ্রকোষ্ঠে বন্দি থেকেছেন, দুইবার ফাঁসির মঞ্চে মৃত্যুর মুখোমুখি হয়েছেন। কিন্তু বাঙালি জাতির অধিকার আদায়ের প্রশ্নে কখনো আপস করেননি, মাথা নত করেননি।

দীর্ঘ ২৩ বছরের আন্দোলন-সংগ্রামের পথপরিক্রমায় বঙ্গবন্ধু তার সহকর্মীদের নিয়ে ১৯৪৮ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ এবং পরবর্তীতে ১৯৪৯ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ গঠন করেন। ১৯৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ’৫৪-এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ’৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৬-এর ছয় দফা আন্দোলন, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান পেরিয়ে ’৭০ সালের ঐতিহাসিক নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন। বঙ্গবন্ধুর সাহসী, দৃঢ়চেতা, আপসহীন নেতৃত্ব ও বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামে অনুপ্রাণিত হয়ে জেগে ওঠে শত বছরের নির্যাতিত-নিপীড়িত পরাধীন বাঙালি জাতি। মুক্তির অদম্য স্পৃহায় উদ্বুদ্ধ করে তিনি বাঙালি জাতিকে স্বাধীনতার চূড়ান্ত সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ করে তোলেন। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ঐতিহাসিক ভাষণে ঘোষণা করলেন ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম…এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’

৭ মার্চে বঙ্গবন্ধুর এই ঐতিহাসিক ঘোষণার পর দেশজুড়ে শুরু হয় সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন। ১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চের প্রথম প্রহরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হওয়ার পূর্বে আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। মহান মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবিসংবাদিত নেতৃত্বে ৯ মাসব্যাপী রক্তক্ষয়ী সশস্ত্র যুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের আত্মদান ও ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানির বিনিময়ে অর্জিত হয় স্বাধীনতা। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বিশ্বমানচিত্রে অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের।

শেখ মুজিব মানেই বাংলাদেশ। তিনি চিরন্তন-চিরঞ্জীব। বাঙালির প্রজন্ম থেকে প্রজন্মের মাঝে অবিনাশী চেতনার অমর নাম। তিনি বাঙালির অসীম সাহসীকতার প্রতীক সমগ্র বাঙালি জাতির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বীর। কালের পরিক্রমায় বঙ্গবন্ধু আজ শুধু বাংলাদেশের নেতা নন, তিনি বিশ্বের নেতা, বিশ্বচেতনা। দেশ স্বাধীনের সাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় জাতির পিতা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাত্রিতে বিশ্বাসঘাতকদের নির্মম বুলেটে সপরিবারে নিহত হন। অবৈধভাবে ক্ষমতাদখল করে জাতির পিতার খুনি স্বৈরশাসকরা। স্বাধীন বাংলাদেশে পাকিস্তানি ভাবধারার বিকৃত ইতিহাস ও মূল্যবোধের বিস্তার ঘটানোর পাঁয়তারা চালায়। খুনিরা ইতিহাসের পাতা থেকে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলতে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে নানা ধরনের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়।

বঙ্গবন্ধু হত্যার পর স্বাধীন বাংলাদেশে সামরিক-স্বৈরাচার তিন দশক ধরে প্রজন্মের পর প্রজন্মকে ভুল ইতিহাস শেখাবার অপচেষ্টা করা হয়। কিন্তু খুনিরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করলেও তার চেতনা ও আদর্শকে মুছে ফেলতে পারেনি। দীর্ঘ ২১ বছর বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর নাম পর্যন্ত উচ্চারণ করা যেত না। প্রতিকূল বৈরী পরিবেশে মুজিব আদর্শের সৈনিকরা জাতির পিতার অসমাপ্ত স্বপ্ন বাস্তবায়নে লড়াই সংগ্রাম করতে থাকেন। এতে কত মায়ের কোল খালি হয়, কত বোন বিধবা হন, কত নেত-কার্মীরা নিহত-আহত হয়, সেও এক করুণ নিরন্তর করুণ ইতিহাস। এমনকি ১৫ আগস্ট জাতির পিতার মৃত্যু দিবসে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক স্বৈরশাসক জিয়াউর রহমানের সহধর্মিনী বেগম খালেদা জিয়া নিজের ভুয়া জন্মদিনে জমকালো আয়োজনে কেক কেটে উদযাপন করতেন। কিন্তু সময়ের আবর্তে ইতিহাসের সেই মলিন অধ্যায় আজ আঁস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। কালো মেঘের আড়াল থেকে সত্যের সাহসী সূর্য বেরিয়ে এসেছে।

বঙ্গবন্ধু জাতির পিতার মহা আসনে অধিষ্ঠিত। গোটা বছরব্যাপী পালিত হবে মুজিববর্ষ। বাঙালি জাতির ইতিহাসে মুজিব যুগের একটি শাশ্বত অধ্যায় যুক্ত হয়েছে। তা আর কেউ কোনোদিন মুছে ফেলতে পারবে না। বঙ্গবন্ধুর অবিনাশী চেতনা ও আদর্শ চির অনির্বাণ শিখা প্রজ্বলিত থেকে আজ বাঙালির হৃদয় হয়ে বিশ্বব্যাপী প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু চিরকাল বাঙালি জাতিকে অনুপ্রাণিত করবেন পথ দেখাবে। বাঙালি জাতি শ্রদ্ধা, কৃতজ্ঞতা ও ভালবাসায় বাংলাদেশের ইতিহাস বিনির্মাণের কালজয়ী এ মহাপুরুষকে চিরকাল স্মরণ করবে। তাই কবির ভাষায় ‘যতদিন রবে পদ্মা-যমুনা গৌরী-মেঘনা বহমান ততদিন রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান।’

মুজিববর্ষে জাতির পিতার স্বপ্নের উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলা বিনির্মাণে তারই আদর্শের নির্দেশিত পথ ধরেই এগিয়ে যাবার দৃপ্ত শপথ নেওয়ার পালা বাঙালি জাতির। কালের পরিক্রমায় বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মুজিববর্ষ উদযাপনের দ্বারপ্রান্তে জাতি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে গড়ে ওঠা রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বিশ্বব্যাপী বাঙালি জাতিকে সঙ্গে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক জন্মশতবার্ষিকী ‘মুজিববর্ষ’ উদযাপনের উদ্বোধনিতে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

মুজিববর্ষ ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আব্দুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। জাতি যথাযোগ্য মর্যাদা ও উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে মুজিব বর্ষের সূচনা ও বঙ্গবন্ধুর জন্ম দিবসটি উদযাপন করবে। বিশ্বের অন্যান্য দেশে বাংলাদেশি দূতাবাসসমূহে দিবসটি যথাযথ মর্যাদায় উদ্যাপন করা হবে। দিনটিকে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাত ৮টায় রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধুর জন্মক্ষণে আতশবাজির মধ্যদিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর কর্মসূচির উদ্বোধন করা হবে। রাষ্ট্রপতি তার ভাষণের পরপর আতশবাজির মাধ্যমে জন্মশতবার্ষিকীর কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রেকর্ড করা ভাষণসহ অন্যান্য আনুষ্ঠানিক কর্মসূচি সরাসরি সম্প্রচার করা হবে। বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের রুহের মাগফেরাত কামনা করে সারাদেশে বিভিন্ন মসজিদে মিলাদ ও দোয়া মাহফিল, অন্যান্য উপাসনালয়ে প্রার্থনা সভা ও দুস্থ ও এতিমদের মধ্যে খাবার ও ত্রাণ বিতরণ করা হবে। শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানগুলোতে সীমিত আকারে কর্মসূচি পালন করা হবে।

উদযাপন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু মুজিববর্ষ শিশুদিবস

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর