‘সোনার বাংলা’ গড়তে অঙ্গীকার করতে হবে সবাইকে
১৭ মার্চ ২০২০ ০০:৩৫
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে মুজিববর্ষে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। একতাবদ্ধ হিসেবে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার অঙ্গীকার করতে হবে সবাইকে। আর সেই সোনার বাংলা গড়তে দেশের আগামী ভবিষ্যৎ শিশুদের কল্যাণে সবাইকে কাজ করতে হবে। আর তা করতে পারলেই বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত স্বপ্ন পূরণ করা সম্ভব হবে।
মঙ্গলবার (১৭ মার্চ) জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে দেওয়া বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
বাণীতে রাষ্ট্রপতি বলেন, আজ ১৭ মার্চ, বাঙালি জাতির ইতিহাসে একটি স্মরণীয় দিন। এ বছর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী। বছরজুড়ে দেশ-বিদেশে সাড়ম্বরে এই জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের লক্ষ্যে সরকার ‘মুজিববর্ষ’ ঘোষণা করেছে। এই আয়োজন যথাযথ উৎসাহ ও উদ্দীপনার মাধ্যমে উদযাপন করতে তিনি দেশবাসী ও প্রবাসী বাঙালিদের প্রতি আহ্বান জানান।
রাষ্ট্রপতি বলেন, স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। ক্ষণজন্মা এই মহাপুরুষ শৈশব থেকেই ছিলেন অত্যন্ত মানবদরদী। কিন্তু অধিকার আদায়ে আপসহীন ছিলেন। বাঙালির মুক্তি ও অধিকার আদায়ে পরিচালিত প্রতিটি গণতান্ত্রিক ও স্বাধিকার আন্দোলনে তিনি নেতৃত্ব দেন। এজন্য তাকে বহুবার কারাবরণ করতে হয়েছে। সহ্য করতে হয়েছে নির্যাতন। কিন্তু বাঙালির অধিকারের প্রশ্নে তিনি কখনো শাসকগোষ্ঠীর সঙ্গে আপস করেননি।
আবদুল হামিদ বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী অতর্কিতে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর আক্রমণ চালালে ২৬ মার্চ ১৯৭১ জাতির পিতা ঘোষণা করেন বাঙালি জাতির বহুকাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা। তার নেতৃত্বে দীর্ঘ ৯ মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাঙালি অর্জন করে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ।
রাষ্ট্রপতি বলেন, স্বাধীনতার পর পাকিস্তান কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে জাতির পিতা ১০ জানুয়ারি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতির পুনর্গঠনে তিনি সর্বশক্তি নিয়োগ করেন। বাংলাদেশকে ‘সোনার বাংলা’ হিসেবে গড়ে তোলার সব প্রস্তুতি নেন। কিন্তু স্বাধীনতাবিরোধী ঘাতক চক্র ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তাকে সপরিবারে হত্যার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্ন পূরণ হতে দেয়নি।
আবদুল হামিদ আরও বলেন, রাজনীতিতে বঙ্গবন্ধু ছিলেন নীতি ও আদর্শের প্রতীক। বঙ্গবন্ধু রচিত ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ ও ‘কারাগারের রোজনামচা’সহ তার ওপর লিখিত গ্রন্থ অধ্যয়ন করে নতুন প্রজন্ম বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম সম্পর্কে জানতে পারবে এবং তার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে আগামীতে জাতি গঠনে অবদান রাখতে সক্ষম হবে।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু আমাদের মাঝে নেই। কিন্তু তার আদর্শ আমাদের চিরন্তন প্রেরণার উৎস। তার নীতি ও আদর্শ প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে ছড়িয়ে পড়ুক, গড়ে উঠুক সাহসী, ত্যাগী ও আদর্শবাদী নেতৃত্ব— এ প্রত্যাশা করি।’
এদিকে, বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার প্রত্যয়ে আমরা অঙ্গীকারাবদ্ধ। রূপকল্প ২০২১ ও ২০৪১ এবং ডেল্টা প্লান-২১০০ বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা জাতির পিতার স্বপ্নের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, সব শিশুর সমঅধিকার নিশ্চিত করার মধ্য দিয়ে সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নে পিতা-মাতা, পরিবার ও সমাজের ভূমিকা অপরিসীম। শিশুর প্রতি সহিংস আচারণ ও সব ধরনের নির্যাতন বন্ধ করার জন্য তিনি সবার প্রতি আহ্বান জানান।
শেখ হাসিনা বলেন, এবারের জাতীয় শিশু দিবসের প্রতিপাদ্য ‘মুজিববর্ষে সোনার বাংলা, ছড়ায় নতুন স্বপ্নাবেশ; শিশুর হাসি আনবে বয়ে, আলোর পরিবেশ’। জাতির পিতার জন্মদিনকে শিশুদের জন্য উৎসর্গ করেই এ দিনটিকে ‘জাতীয় শিশু দিবস’ ঘোষণা করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। বলেন, শিশুদের প্রতি বঙ্গবন্ধুর ছিল অপরিসীম মমতা। বাল্যকাল থেকেই তিনি ছিলেন নির্ভীক, অমিত সাহসী, মানবদরদী ও পরোপকারী। ছিলেন রাজনীতি ও অধিকার সচেতন।
জাতির পিতার জীবন ও কর্ম আপামর জনসাধারণের কাছে তুলে ধরতে আগামী এক বছর ‘মুজিববর্ষ’ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে এবং বাংলাদেশের পাশাপাশি ইউনেস্কোর উদ্যোগে বিশ্বব্যাপী এই ‘মুজিববর্ষ’ পালিত হচ্ছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে বাণীতে।
শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা ১৯৭৪ সালে শিশু আইন প্রণয়ন ও প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করেন। বর্তমান সরকার উন্নয়ন ও সুরক্ষার বিভিন্ন কার্যক্রমের সঙ্গে জাতীয় শিশু নীতি-২০১১, শিশু আইন-২০১৩, বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন-২০১৭ প্রণয়ন করেছে। এছাড়া জাতীয় ও আন্তর্জাতিক শিশু দিবস উদযাপন, সুবিধাবঞ্চিত পথ শিশুদের পুনর্বাসন এবং বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন শিশুর বিকাশ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকার প্রিয় মাতৃভূমিকে শিশুদের জন্য নিরাপদ আবাসভূমিতে পরিণত করতে বদ্ধপরিকর।
প্রায় শতভাগ শিশু স্কুলে যাচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা শিশুদের জন্য জাতির পিতার জীবন ও কর্মভিত্তিক বই প্রকাশ এবং পাঠ্য বইয়ে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস সংযোজন করেছি। শিশুদের মনে দেশপ্রেম জাগ্রত করে তাদের ব্যক্তিত্ব গঠন, সৃজনশীলতার বিকাশ ও আত্মবিশ্বাসী করে গড়ে তোলার লক্ষ্যে শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি ও খেলাধুলার বিভিন্ন শাখায় শিশুদের সম্পৃক্ত করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, স্কুলে পড়ার সময়েই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নেতৃত্বের গুণাবলি বিকাশ লাভ করতে থাকে। ধীরে ধীরে তিনি হয়ে ওঠেন বাংলার নিপীড়িত মানুষের অধিকার আদায়ের শেষ আশ্রয়স্থল।
জাতির পিতার নেতৃত্বেই বাংলাদেশ স্বাধীন হয় এবং স্বাধীনতার পর তিনি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে নিরলস চেষ্টা করেছেন বলে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, সব প্রতিবন্ধকতা মোকাবিলা করে বঙ্গবন্ধু যখন ‘সোনার বাংলা’ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিলেন, ঠিক তখনই স্বাধীনতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধী চক্র ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে পরিবারের প্রায় সকল সদস্যসহ নৃশংসভাবে হত্যা করে। দেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রাকে স্তব্ধ করে দেওয়া হয়। দীর্ঘ ২১ বছর পর জনগণের রায়ে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচার শুরু করে। এ হত্যাকাণ্ডের বিচারের রায় কার্যকরের মধ্য দিয়ে জাতি কলঙ্কমুক্ত হয়।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী এবং জাতীয় শিশু দিবস-২০২০ উপলক্ষে গৃহীত সব কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য ও আগামী দিনের কর্ণধার শিশু-কিশোরদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করেন। বাসস।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতীয় শিশু দিবস প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মুজিববর্ষ রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সোনার বাংলা