যেভাবে হোম কোয়ারেনটাইন, নিশ্চিত করবেন যারা
১৭ মার্চ ২০২০ ০১:১০
ঢাকা: বিশ্বব্যাপী ভয়াবহ আকার ধারণ করা নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণ মোকাবিলায় হোম কোয়ারেনটাইন নিশ্চিত করার জন্য গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। গণবিজ্ঞপ্তিতে হোম কোয়ারেন্টাইনের নিশ্চিত করা জন্য গঠিত কমিটিগুলোর কার্যক্রম সুনির্দিষ্ট করে দিয়েছে মন্ত্রণালয়।
সোমবার (১৬ মার্চ) স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিব মো. আসাদুল ইসলাসের সই করা গণবিজ্ঞপ্তিটিতে ১০ দফা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলায় সারাবিশ্বে হোম কোয়ারেনটাইন (নিজ গৃহে সার্বক্ষণিক অবস্থান) একমাত্র কার্যকর উপায় হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। দেশে প্রত্যাগত প্রবাসী বাংলাদেশিদের মাধ্যমে বাংলাদেশে এই ভাইরাস সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে। এ অবস্থায় বিদেশ থেকে আসা নাগরিকদের হোম কোয়ারেনটাইন নিশ্চিত করা জরুরি।
জাতীয়, বিভাগীয়, সিটি করপোরেশন এলাকা, পৌরসভা, জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ পর্যায়ে কমিটি গঠিত হয়েছে উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, হোম কোয়ারেনটাইন নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কমিটি প্রযোজ্য ক্ষেত্রে যেসব কার্যক্রম নেবেন, সেগুলো হলো—
১. হোম কোয়ারেনটাইনে থাকা ব্যক্তিরা ১৪ দিন ঘরের বাইরে বের হবেন না। নিজ বাড়ির নির্ধারিত একটি কক্ষে অবস্থান করবেন।
২. পরিবারের অন্য সদস্য দেশে প্রত্যাগত সদস্যের হোম কোয়ারেনটাইন নিশ্চিত করবেন।
৩. গঠিত কমিটিগুলো সম্প্রতি বিদেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের বাড়ি চিহ্নিত করবেন। তাদের গৃহে সার্বক্ষণিক অবস্থানের বিষয়টি তদারকি করবেন।
৪. গঠিত কমিটিগুলো হোম কোয়ারেনটাইন নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট এলাকার জনপ্রতিনিধি, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি (যেমন— পৌর মেয়র, পৌর কাউন্সিলর, ইউপি চেয়ারম্যান, ওয়ার্ড মেম্বার, ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা, স্বাস্থ্য সহকারী, কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার, পরিবার কল্যাণ সহকারী, পরিবারকল্যাণ পরিদশির্কা, গ্রাম পুলিশ, স্থানীয় সাংবাদিক) বিদেশ থেকে আসা ব্যক্তি সম্পর্কে অবহিত করে হোম কোয়ারেনটাইন নিশ্চিত করতে প্রয়োজন অনুযায়ী সম্পৃক্ত করতে হবে।
৫. কোয়ারেনটাইনে থাকা ব্যক্তির আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ওই ব্যক্তির সংস্পর্শে আসতে পারবেন না।
৬. কোয়ারেনটাইনে থাকা ব্যক্তি নিয়ম ভাঙলে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা সংশ্লিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) সহায়তা নেবেন।
৭. প্রয়োজনে ৩ নম্বর দফায় উল্লেখ করা ব্যক্তিরা সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, উপজেলা চেয়ারম্যান, সিভিল সার্জন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তাকে অবহিত করবেন।
৮. হোম কোয়ারেনটাইনে থাকা ব্যক্তিরা অসুস্থ হলে স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ এবং প্রয়োজনে স্থানীয় সিভিল সার্জন, হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ও উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।
৯. কোয়ারেনটাইনে থাকা ব্যক্তিরা নিয়ম ভাঙলে সংক্রামক রোগ (প্রতিরোধ, নিয়ন্ত্রণ ও নির্মূল) আইন, ২০১৮ অনুযায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ওই আইনে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা ব্যবস্থা নেবেন।
১০. প্রতিদিন এ বিষয়ে জেলাভিত্তিক একটি প্রতিবেদন তৈরি করে সংশ্লিষ্ট সিভিল সার্জন নিয়ন্ত্রণ কক্ষ স্বাস্থ্য অধিদফতরের ইমেইলে ও মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের ইমেইল পাঠাবেন।
এর আগে, ১২ মার্চ নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) পরিস্থিতিতে কোয়ারেনটাইনের শর্ত না মানলে আইন অনুযায়ী তিন মাসের জেল, ৫০ হাজার টাকা জরিমানাসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদফতর।
অধিদফতর বলছে, এই ভাইরাস নিয়ে অনেকেই মিথ্যা তথ্য ও গুজব রটিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য অধিদফতর সংশ্লিষ্ট সবাইকে আইন অনুযায়ী যথাযথভাবে দায়িত্ব পালনের অনুরোধ জানাচ্ছে। তা না মানলে আইনের সংশ্লিষ্ট শাস্তিমূলক ধারা প্রয়োগ করা হবে।