Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘আমার গফরগাঁওয়ের খসরু এসেছে’


১৭ মার্চ ২০২০ ১১:০৮

ময়মনসিংহ: বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. শফিকুল আমিন খসরু। জন্ম ২ নভেম্বর ১৯৪৬। পাঁচ ভাই দুই বোন। ময়মনসিংহ গফরগাঁওয়ের মশাখালী ইউনিয়ন সাবেক চেয়ারম্যান। ১৯৬২ সালে মেট্রিকুলেশন পাশ করেছিলেন মশাখালী কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ হাই স্কুল থেকে (তবে ১৯৭২ সালে তিনি স্কুল পরিচালনার কমিটির সভাপতি হলে প্রথমেই স্কুলের নাম পরিবর্তন করে রাখেন মশাখালী হাই স্কুল)। এরপর ১৯৬৩ তে ময়মনসিংহে আনন্দমোহন কলেজে ভর্তি হন। শুরু হয় রাজনৈতিক জীবন। রাজনৈতিক কারণে মামলায় জড়িয়ে পড়াশোনা আর এগোয়নি।

বিজ্ঞাপন

১৯৬৪ সালে ময়মনসিংহ ছাত্রলীগের কার্যনির্বাহী পরিষদ সদস্য হিসেবে গিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে আলফা ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে যান এই নেতা। পরে ১৯৬৫ সালেও ৩২ ধানমন্ডিতে দেখা হয় বঙ্গবন্ধুর সাথে। সেখানেই প্রথম তার নাম জিজ্ঞেস করেন বঙ্গবন্ধু। তিনি ওই একবার নাম বলেছিলেন, পরে আর কোনদিন বলতে হয়নি। দূর থেকে দেখে তাকে দেখলেই বঙ্গবন্ধু বলে ওঠতেন, ‘এ্যাই তোরা সরে যা, আমার গফরগাঁওয়ের খসরু এসেছে, খসরু ভিতরে আয়।’

বিজ্ঞাপন

বঙ্গবন্ধর স্মৃতিচারণ করে মো. শফিকুল আমিন খসরু জানান, ৬ দফা ও ১৯৭০ সালের নির্বাচনের সময় ময়মনসিংহ সার্কিট হাউজের জনসভায় যাচ্ছিলেন জাতির পিতা। পথে মশাখালি স্টেশনে নেমে স্থানীয় জনতার উদ্দেশে কথা বলার অনুরোধ করলে তারই কাঁধে ভর দিয়ে ট্রেন থেকে নামেন ব্ঙ্গবন্ধু। এসময় নেতাকে মঞ্চে রেখে তার সামনে দু’একটা কথা বলার সাহস দেখাতে গিয়েছিলেন তিনি। তখন সার্কিট হাউজে জনসভায় যাওয়ার বিলম্ব হয় কিনা ভেবে পেছন থেকে বঙ্গবন্ধু কাছে এসে গালে চড় দিয়ে তাকে থামিয়ে নিজে বক্তব্য দেওয়া শুরু করেন। জনসভা শেষে আবার তিনি আমায় কাছে ডাকেন ও গালে হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করেন, ‘খসরু তোর কি খুব লেগেছে?’ তখন ‘হ্যাঁ’ বলে আমি বললাম, ‘লেগেছে তবে আদরে এখন ভুলে গেছি’। ওই ট্রেনে চেপেই তিনি বঙ্গবন্ধুর সাথে জনসভায় গিয়েছিলেন।


বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. শফিকুল আমিন খসরু’র সংসারে স্ত্রী, তিন ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। রয়েছে সহযোদ্ধারা, বন্ধুবৎসল বহুগুণগ্রাহী। বড় বড় অনুষ্ঠানে জেলা থেকে দাওয়াত পান। সেই সময় থেকে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, রফিক উদ্দিন ভুইঁয়া, অধ্যক্ষ মতিউর রহমান, বর্তমান সভাপতি অ্যাডভোকেট জহিরুল হক খোকা ও সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুলসহ পুরোনো লোকজন এখনো খোঁজ নেন। তার রাজনৈতিক গুরু ছিলেন সাবেক পানিসম্পদ মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক।

মুক্তিযুদ্ধে ১১ সেক্টরে যুদ্ধ করেছিলেন খসরু। তুরা শহরে প্রশিক্ষণ নিয়ে মে মাসে প্রথম সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেন। ধানুয়া-কামালপুর, হালুয়াঘাট তেলিখালী ও ঠাকুরাকোনায় ব্রিজ উড়িয়ে দেওয়ার যুদ্ধদিনের স্মৃতি এখনও মনে পড়ে। নয় ডিসেম্বর পাকবাহিনী পেছাতে শুরু করলে মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্রবাহিনী একত্রে হালুয়াঘাট থেকে ময়মনসিংহ সদরে প্রবেশ করে সার্কিট হাউজে লাল সবুজের বিজয় পতাকা উড়িয়ে দেন।

তিনি জানান, দেশকে স্বাধীন করার লক্ষে বঙ্গবন্ধুর ডাকে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন যুদ্ধে। যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বাবার মৃত্যু হয়। বাবার শেষ চেহারাও দেখতে পারেন নাই।

স্থানীয় আরেক মুক্তিযোদ্ধা বর্তমানে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সেলিম আহমেদ সেই সময়ের স্মৃতি মনে করে বলেন, ‘১৯৭০ সালের সেই দিনের কথা সবারই মনে আছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ট্রেন থেকে নেমে মঞ্চে বক্তব্য দেওয়ার সময় লোকজনের ভিড়ে দেবদারু গাছে থাকা মৌচাক থেকে মৌমাছি বের হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর বজ্রকণ্ঠে পিন পতন নীরবতায় সব মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে শুনছিল সেই বক্তব্য।’

খসরু গফরগাঁও ময়মনসিংহ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর