করোনার সর্বোচ্চ ঝুঁকিতে চট্টগ্রাম, ঠেকানোর প্রস্তুতি ‘কাগজ-কলমে’
১৭ মার্চ ২০২০ ১২:২২
চট্টগ্রাম ব্যুরো: সমুদ্রবন্দর ও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কারণে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম সর্বোচ্চ ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। কিন্তু মোকাবিলার প্রস্তুতি এখনও কাগজে-কলমে সীমাবদ্ধ। যে সমুদ্রবন্দর নিয়ে খোদ স্বাস্থ্য বিভাগেরই এত আতঙ্ক সেখানে নাবিকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা চলছে সাধারণ ইনফ্রায়েড থার্মোমিটার দিয়ে। জরুরি ভিত্তিতে শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে থার্মাল স্ক্যানার বসানো হলেও চট্টগ্রাম বন্দরে যন্ত্রটি নেই।
তবে করোনাভাইরাস বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে বিমান আসা-যাওয়া কমে গেছে। কমেছে যাত্রীর সংখ্যাও। এমনকি চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজ আসার পরিমাণও কমেছে।
চট্টগ্রাম বিমানবন্দরের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা (সিভিল সার্জন পদমর্যাদার) মোহাম্মদ মোতাহার হোসেন সারাবাংলাকে জানান, গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৬ মার্চ পর্যন্ত সমুদ্র ও বিমানবন্দরে যাত্রী ও নাবিক মিলিয়ে প্রায় ৫৫ হাজার জনকে পরীক্ষা করা হয়েছে। এর মধ্যে বিমানবন্দরে ৪৯ হাজার ২০০ জন এবং সমুদ্রবন্দরে ৫ হাজার ৭০০ জন পরীক্ষার আওতায় এসেছে। তবে এদের মধ্যে কাউকে করোনা সংক্রমণের সন্দেহভাজন হিসেবে শনাক্ত করা যায়নি।
চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সিভিল এভিয়েশন বিভাগের ব্যবস্থাপক উইং কমান্ডার সরওয়ার ই জাহান সারাবাংলাকে জানান, শাহ আমানত বিমানবন্দরে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক মিলিয়ে প্রতিদিন গড়ে ৮০টি এবং সপ্তাহে গড়ে ৫৬০টি বিমান ওঠানামা করে। প্রতিদিন গড়ে যাত্রী আসা-যাওয়া করে আড়াই হাজারের মতো। এখন বিমান ও যাত্রীর সংখ্যা আগের চেয়ে কমে গেছে।
স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মোতাহার হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রথমদিকে আমরা বিমানবন্দরে প্রতিদিন ১৭০০ থেকে ১৮০০ যাত্রীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতাম। গত এক সপ্তাহ ধরে মাত্র ৫টি বিমান ওঠানামা করেছে। গতকাল (রোববার) অবশ্য ৯টি বিমান ওঠানামা করেছে। যাত্রীর সংখ্যাও এক হাজারের মধ্যে নেমে এসেছে।’
চট্টগ্রাম বন্দর সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, চট্টগ্রাম বন্দরে গড়ে ১২ থেকে ১৬টি জাহাজ প্রতিদিন জেটিতে ভেড়ে। এখন জাহাজ আসার পরিমাণ কমেছে। তবে বন্দরের নির্দেশনা অনুযায়ী, চীন থেকে সরাসরি অথবা চীনের কোনো বন্দর হয়ে আসা জাহাজকে বাধ্যতামূলকভাবে ১৪ দিন পার করেই জেটিতে আসতে দেওয়া হচ্ছে।
চীনে করোনা ছড়িয়ে পড়ার পর গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে ৯ মার্চ পর্যন্ত ইনফ্রায়েড থার্মোমিটার দিয়ে করোনা ভাইরাসের উপসর্গ শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করে আসছিল স্বাস্থ্য বিভাগের টিম। দেশে করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্তের পর তড়িঘড়ি করে মন্ত্রণালয় থেকে গত ১০ মার্চ দুটি থার্মাল স্ক্যানার চট্টগ্রামে পাঠানো হয়। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এর একটি বিমানবন্দরে এবং আরেকটি সমুদ্রবন্দরে স্থাপনের কথা ছিল। কিন্তু ওইদিনই আবার একটি থার্মাল স্ক্যানার ঢাকায় শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নিয়ে যাওয়া হয়। আরেকটি শাহ আমানত বিমানবন্দরে স্থাপন করা হয়। সেটি দিয়ে এখন যাত্রীদের শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা চলছে।
স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মোতাহার হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিমানবন্দরে থার্মাল স্ক্যানার বসানোর কারণে আমরা এখন একসঙ্গে ৮-১০ জনের তাপমাত্রা রেকর্ড করতে পারছি। এটা স্বয়ংক্রিয় আর ইনফ্রায়েডটা সনাতন পদ্ধতির। স্বাভাবিকভাবেই থার্মালের কারণে আমরা কিছু সুবিধা পাচ্ছি। চট্টগ্রাম বন্দরেরটাও বেশি প্রয়োজন। মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের আশ্বাস দিয়েছে, এ মাসের মধ্যে স্ক্যানার পাঠাবে।’
চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গত ৩১ জানুয়ারি থেকেই বিদেশফেরত যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা শুরু হয়। তবে প্রথমদিকে শুধু চীন থেকে আসা যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছিল। এখন সবাইকে স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর ভাইরাসমুক্ত সনদ নিয়ে তারপর বিমানবন্দর ত্যাগের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। তবে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষিত ৬টি দেশ থেকে আসা যাত্রীদের ওপর বাড়তি নজর দিচ্ছেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা। দেশগুলো হচ্ছে- চীন, ইতালি, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড ও ইরান।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন সেখ ফজলে রাব্বি জানিয়েছেন, সোমবার সকাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম জেলায় মোট ২৯ জন ‘হোম কোয়ারেনটাইনে’ আছেন। তাদের অধিকাংশই বিদেশ ফেরত।
তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম জেলা সর্বোচ্চ ঝুঁকির মধ্যে। কারণ এখানে বিমান ও সমুদ্রবন্দর আছে। আমাদের প্রথম কাজ এন্ট্রি পয়েন্টে আক্রান্ত কেউ থাকলে চিহ্নিত করা। চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে একটি থার্মাল স্ক্যানার থাকলেও চট্টগ্রাম বন্দরে এখনও হ্যান্ড হেল্ড ইনফ্রারেড থার্মোমিটার দিয়ে যাত্রীদের শরীরের তাপমাত্রা পরিমাপ করা হচ্ছে। দুটোই সমান উপযোগী।’
চট্টগ্রাম সর্বোচ্চ ঝুঁকির মধ্যে থাকলেও করোনা মোকাবিলার প্রস্তুতি নিয়ে সীমাবদ্ধতার কথা স্বীকার করেছেন সিভিল সার্জন। তিনি বলেন, ‘আমাদের যা কিছু আছে তা দিয়েই আমরা সার্বিক প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমাদের সম্পদের সীমাবদ্ধতা আছে। তবে সব প্রস্তুতি আমরা নিচ্ছি। সরঞ্জাম আমাদের পর্যাপ্ত আছে। আমরা একটা চেইন তৈরি করতে পেরেছি। কিছুদিন পরপর সরঞ্জাম পাব। সংকট হবে না।’
করোনা আক্রান্তদের শনাক্তকরণের কিটস চট্টগ্রামে আছে কি-না?- এমন প্রশ্নের জবাবে ফজলে রাব্বি বলেন, ‘কারও মধ্যে যদি করোনার প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দেয় তবে ঢাকা থেকে আইইডিসিআর’র লোক এসে স্যাম্পল নিয়ে যাবেন। সেখানে পরীক্ষার তিন ঘণ্টা পরই ফল জানা যাবে। এ ধরণের রোগের ক্ষেত্রে কিট বাইরে চলে এলে সেগুলো নিয়ে আবার ব্যবসা শুরু হয়ে যায়। যেমনটা ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে দেখা গেছে। নীতিগত সিদ্ধান্ত যদি হয়, কিট ঢাকার বাইরে যাবে- তাহলে চট্টগ্রাম বিআইটিআইডি এবং কক্সবাজারের বিষয়টি আলোচনায় আছে।’
সংক্রমণ বাড়তে থাকলে অবশ্যই চট্টগ্রামে কিট আনা হবে বলে জানান সেখ ফজলে রাব্বি।