Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

দেয়ালচিত্রে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে মোশতাক, সমালোচনায় চসিক


১৭ মার্চ ২০২০ ১৭:৫৮

চট্টগ্রাম ব্যুরো: মুজিববর্ষ উপলক্ষে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে খন্দকার মোশতাক আহমেদের ছবি দিয়ে দেয়ালচিত্র এঁকে ক্ষোভের মুখে পড়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক)। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে সমালোচনা। ক্ষুব্ধ হয়ে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের একটি সংগঠনের সদস্য ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জড়ো হয়ে বিভিন্ন জায়গায় আঁকা খন্দকার মোশতাকের ছবি মুছে ফেলার উদ্যোগ নিয়েছেন।

চট্টগ্রাম নগরীর সরকারি হাজী মুহম্মদ মহসীন কলেজের দেয়ালে আঁকা একটি চিত্রে গলায় মালা দেওয়া বঙ্গবন্ধুর ডানপাশে আঙুল উঁচিয়ে আছেন জাতীয় নেতা তাজউদ্দিন আহমেদ, বাম পাশে সৈয়দ নজরুল ইসলাম। তার পাশেই দেখা যাচ্ছে মাথায় টুপি পরিহিত খন্দকার মোশতাক। এই দেয়াল চিত্রের পাশে ‘আ জ ম নাছির উদ্দীন, মেয়র, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন’ লেখা আছে।

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষের দিনটিকে সামনে রেখে গত এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে নগরীর বিভিন্ন দেয়ালে আঁকা হয়েছে এসব চিত্র। কোথাও কোথাও কেবল বঙ্গবন্ধুর একক ছবি আঁকা হয়েছে। আবার কোথাও বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে অন্যান্য নেতাদের ছবিও আছে, যার মধ্যে একজন খন্দকার মোশতাক, ইতিহাস যাকে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার অন্যতম কুশীলব হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

নগরীর কয়েকটি স্থানে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে খন্দকার মোশতাকের ছবিও আঁকা হয়ে গেছে বলে স্বীকার করেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ রেজাউল করিম। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘পুরো মুজিববর্ষে আমাদের ওয়াল পেইন্টিংয়ের কর্মসূচি আছে। দু’টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। যেসব শিল্পীরা আঁকছেন, সম্ভবত তারা নতুন প্রজন্মের। তারা হয়তো খন্দকার মোশতাককে চিনতেই পারেনি। ইতিহাস না জানলে যা হয় আর কী! একটা মহসীন কলেজের ওখানে আছে। আরেকটা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের ওখানে আছে শুনেছি। এগুলো আমরা দ্রুত মুছে দেওয়ার ব্যবস্থা করছি।’

মঙ্গলবার (১৭ মার্চ) বিকেল ৪টার দিকে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড নামে একটি সংগঠনের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সরওয়ার আলম মণি খন্দকার মোশতাকের ছবি দিয়ে আঁকা দেয়ালচিত্রের ছবি দিয়ে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন। সেখানে তিনি লেখেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে চট্টগ্রামের বিভিন্ন দেয়ালে খন্দকার মোশতাকের ছবি আঁকা হয়েছে। তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। হায়রে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন!!!!’

এরপরই মূলত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা ও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া আসতে থাকে। মণি’র স্ট্যাটাসের কমেন্টে সাজেদ আনোয়ার সাজিদ নামে একজন লেখেন, ‘ছবিটি জটিল হয়েছে, চিত্রশিল্পীকে নোবেল দেওয়া উচিত। কারণ চিত্রশিল্পী বুঝিয়ে দিয়ে গেল, দেশ এখনো স্বাধীন হয়নি। এখনো মোশতাকরা ছায়া হয়ে চারপাশে ঘুরছে। এটা বুঝা উচিত।’

বিকেল ৫টার দিকে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের কয়েকজন সদস্য এবং চট্টগ্রাম কলেজ ও মহসীন কলেজ ছাত্রলীগের কিছু নেতাকর্মী বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে দেয়ালচিত্র আঁকার স্থানে যান। তারা খন্দকার মোশতাকের ছবি কালি দিয়ে মুছে দেন।

চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুল করিম সারাবাংলাকে বলেন, ‘জাতির জনকের জন্মশতবর্ষের দিন এমন একটা ঘৃণ্য কর্মকাণ্ড আমাদের দেখতে হবে, সেটা ভাবিনি। এসব দেয়াল চিত্র দুয়েকদিনের মধ্যে অনেকটা রাতারাতি আঁকা হয়েছে। সেখানে জাতীয় চার নেতার মধ্যে ক্যাপ্টেন মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামরুজ্জামানের ছবি নেই। অথচ খুনি মোশতাকের ছবি আছে। এই দেয়ালচিত্র নজরে আসার পর আমরা মোশতাকের ছবি মুছে দিয়েছি। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে বসে কারা এমন ষড়যন্ত্র করেছে, সেটা তদন্তের দাবি জানাচ্ছি।’

এসময় উপস্থিত ছিলেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান নওশাদ মাহমুদ রানা, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সীমান্ত তালুকদার, মোহাম্মদ শাহজাহান, গাজী জাফরউল্লাহ, শিবুপ্রসাদ চৌধুরী ও ফরিদ নেওয়াজ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সরওয়ার আলম চৌধুরী মনি, চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মিজানুর রহমান সজিব ও সদস্য সচিব কাজী মুহাম্মাদ রাজিশ ইমরান, জেলা কমিটির সদস্য সচিব কামরুল হুদা পাভেল, সদস্য ওমর ফারুক রাসেল, সৈয়দ ওমর আলী, জয়নুদ্দিন জয়, এস এম ইশতিয়াক রুমি, মঈনুল আলম সৌরভ, কামাল হোসেন টিটু, আবুল কাশেম, মনির আহমেদ বিজয়, হারুন অর রশিদ, মাসুম করিম, রিপন ও কাওসার চৌধুরী।

এছাড়া চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মাহমুদুল করিম, সহসভাপতি মনির ইসলাম, জাবেদুল ইসলাম জিতু, আব্দুল্লাহ আল সাইমুন, ডাবলমুরিং থানা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ তৌহিদুল ইসলাম আরদিন, চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রলীগ নেতা সাইফুল ইসলাম, ওয়াহিদুর রহমান সুজন, সাফায়েত হোসেন রাজু ও মো. জুবায়েরও উপস্থিত ছিলেন।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভায় খন্দকার মোশতাক আহমেদ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৫ সালে তিনি অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছিলেন। ওই বছরের ১৫ আগস্ট কিছু বিপথগামী সেনা কর্মকর্তা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নৃশংসভাবে হত্যা করে। এরপর খন্দকার মোশতাক ৮৩ দিন রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন। রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নেওয়ার পর তিনি বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার না করার বিধান সম্বলিত কুখ্যাত ইনডেমনিটি বিল পাশ করেন। ওই বছরের ৫ নভেম্বর সেনাবিদ্রোহে তিনি অপসারিত হন।

খন্দকার মোশতাক চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেওয়ালচিত্র মুজিববর্ষ


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর