আতশবাজি আর ফানুস উড়িয়ে বঙ্গবন্ধুর জন্মক্ষণ উদযাপন

ঢাকা: জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী ও জাতীয় শিশু দিবসে জন্মক্ষণে রাত ৮টায় সারাদেশে একযোগে আতশবাজি প্রদর্শনী ও ফানুস ওড়ানো হয়েছে। মঙ্গলবার (১৭ মার্চ) রাত ৮টা বাজার সঙ্গে সঙ্গে রবীন্দ্র সরোবরে এই কর্মসূচির উদ্বোধন করা হয়।

কেন্দ্রীয়ভাবে আওয়ামী লীগের উদ্যোগে ধানমন্ডি-৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু ভবনের সামনে, ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয়, ধানমন্ডি রবীন্দ্র সরোবর, হাতিরঝিল, সোরাওয়ার্দী উদ্যান, টিএসসি ও জাতীয় সংসদ ভবন এলাকায় আতশবাজি ও ফানুস প্রদর্শনী করা হয়।

মুজিববর্ষ উদযাপন উপলক্ষে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়সহ রাজধানীর প্রধান প্রধান সড়কে আলোকসজ্জা করা হয়েছে।

মুজিববর্ষ উদযাপনে উদ্বোধনী কর্মসূচিতে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এবার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মদিনের কর্মসূচির মধ্য দিয়ে মুজিববর্ষ উদযাপনের উদ্বোধনী শুরু হয়েছে।

২০২০ সালের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত মুজিববর্ষ উদযাপন করা হবে।

মঙ্গলবার সকাল ৭টার পরে বোন শেখ রেহানা, কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকে সঙ্গে নিয়ে বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে উপস্থিত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর তাদের সঙ্গ নিয়ে বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করেন।

এসময় দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য ও উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। শ্রদ্ধা নিবেদনের পর কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকেন তিনি। এরপর বোন শেখ রেহানা এবং কন্যা পুতুলকে সঙ্গে নিয়ে বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে প্রবেশ করেন তিনি। পরে টুঙ্গিপাড়ায় চির নিদ্রায়য় শায়িত কবরে শ্রদ্ধা নিবেদনের উদ্দেশ্য রওনা করেন এবং শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

এদিকে মুজিববর্ষ উদযাপন ডামাঢোলের প্রাক্কালে বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে দেশে মুজিববর্ষের ঘোষিত কর্মসূচি পুনঃবিন্যাস করে উদযাপন করা হচ্ছে।

গত ৮ মার্চ সরকার এবং জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি জনস্বার্থে ও জনকল্যাণে ১৭ মার্চের পূর্ব ঘোষিত অনুষ্ঠান জনসামাগম এড়িয়ে চলার লক্ষ্যে পুনঃবিন্যাস করেছে। আমন্ত্রিত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান ও বিদেশী অতিথিতের সফরও স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে।

আনুষ্ঠানিকভাবে মুজিববর্ষের ক্ষণগণনা শুরু হয় বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে। ১০ জানুয়ারি বিকাল ৫টা ১৭মিনিটে রাজধানীর তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরে মুজিববর্ষের কাউন্টডাউন অনুষ্ঠানে মুজিববর্ষের লোগো উন্মোচন ও ক্ষণগণনা উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি ও প্রধান সমন্বয়ক প্রধানমন্ত্রীর হাতে মুজিববর্ষের লোগো তুলে দেন তিনি। লোগো উন্মোচনের পর প্রধানমন্ত্রী সুইচ টিপে ক্ষণগণনার উদ্বোধন করেন, যা সারাদেশে একযোগে চালু হয়। সেদিন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধুর আরেক কন্যা শেখ রেহানা এবং বঙ্গবন্ধুর দৌহিত্র সজীব ওয়াজেদ জয়।মুজিববর্ষ উদযাপন শুরুর প্রতীক্ষার অবসান হয় ১৭মার্চ।

দিনব্যাপী বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে সকাল সাড়ে ৬টায় বঙ্গবন্ধু ভবন, কেন্দ্রীয় কার্যালয় এবং সারাদেশে সংগঠনের সকল কার্যালয়ে জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন। সকাল সাতটায় বঙ্গবন্ধু ভবন প্রাঙ্গণে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করে। অনুরূপ কর্মসূচি সারাদেশে অনুষ্ঠিতত হয়।

এছাড়া সকাল ১০টায় আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের প্রতিনিধি দল টুঙ্গীপাড়ায় চিরনিদ্রায় শায়িত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন এবং দোয়া ও মিলাদ মাহফিলে অংশগ্রহণ করেন।

টুঙ্গীপাড়ার এ কর্মসূচিতে কেন্দ্রীয় নেতাদের মধ্যে সভাপতিমন্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ, ডা. দীপু মণি, ড. হাছান মাহমুদ এমপি, আ. ফ. ম বাহাউদ্দিন নাছিম, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য শ্রী মুকুল বোস, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন, কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ এমপি, শ্রম ও জনশক্তি বিষয়ক সম্পাদক হাবিবুর রহমান সিরাজ, শিক্ষা ও মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক শামসুন্নাহার চাঁপা, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, ধর্ম প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহসহ অনেকে।

সারাদেশে জাতির পিতার জন্মদিনে দোয়া মাহফিল ও বিশেষ প্রার্থনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। মসজিদ, মন্দির, প্যাগোডা, গির্জাসহ সকল ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে দেশব্যাপী বিশেষ প্রার্থনা কর্মসূচির অংশ হিসেবে বাদ জোহর বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদসহ দেশের সকল মসজিদে দোয়া ও মিলাদ মাহফিল হয়। সকাল ৮টায় তেজগাঁও গির্জায়, সকাল ৯টায় মিরপুর ব্যাপ্টিস্ট চার্চ (৩/৭-এ সেনপাড়া, পবর্তা, মিরপুর-১০)-এ খ্রিস্টান সম্প্রদায়, সকাল ১০টায় রাজধানীর মেরুল বাড্ডার আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারে বৌদ্ধ সম্প্রদায় এবং সকাল সাড়ে ১১টায় ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে হিন্দু সম্প্রদায় প্রার্থনা সভার আয়োজন করা হয়। এতিম ও দুঃস্ত মানুষের মাঝে খাবার ও মিষ্টি বিতরণ করা হয়।

দুপুর ১২টায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ বিষয়ক উপ-কমিটির উদ্যোগে আজিমপুর এতিমখানা প্রাঙ্গণে অসহায়, দুস্থ ও এতিমদের মাঝে খাবার, বস্ত্র ও করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে ব্যবহার্য সামগ্রী বিতরণ করা হয়। দুপুর ১টায় ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের উদ্যোগে বনানী করাইল বস্তিতে এবং ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের উদ্যোগে ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এতিম ও দুঃস্থ মানুষের মাঝে খাবার ও মিষ্টি বিতরণ করা হয়।

এছাড়া বাদ আসর রাজধানীর প্রতিটি ওয়ার্ডে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ দুস্থ মানুষের মাঝে খাবার ও মিষ্টি বিতরণ করে। সারাদেশে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে অনুরূপ কর্মসূচি পালন করা হয়। রাত ৮টার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী জাতীয় ও বাস্তবায়ন কমিটির আয়োজনে একযোগে সকল গণমাধ্যমে প্রচারিত অনুষ্ঠান ঘরে বসে দেখার অনুরোধ করা হয়।

১৯২০ সালের ১৭ মার্চ রাত আটটায় দিকে অবিভক্ত ভারতের পূর্ববঙ্গে তথা বর্তমানে বাংলাদেশের গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন জাতির পিতা। অপরদিকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছরপূর্তি ২০২১ সালের ২৬মার্চ ৫০বছর পূর্তি হচ্ছে। দেশের স্বাধীনতা-সংগ্রামের আন্দোলনে অবিসংবাদিত নেতা ছিলেন তিনি। বাঙালি জাতির ইতিহাসে অবদানের কথা স্মরণ করে বর্ষটিকে মুজিববর্ষ’ হিসাবে উদযাপনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার ও স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বের আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগ।

রবীন্দ্র সরোবরে কেন্দ্রীয়ভাবে ফানুস ও আতশবাজি প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এসময় উপস্থিত ছিলেন দলের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক হারুনুর রশিদ, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক রোকেয়া সুলতানা, উপ প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন, উপ দপ্তর সম্পাদক সায়েম খান, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য শাহাবুদ্দিন ফরাজী, আনিসুর রহমান আনিস, মহিলা লীগের সভাপতি সাফিয়া খাতুন, যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল, সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হোসেনসহ অনেকে। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন আওয়ামীলীগেরর সাংস্কৃতিক সম্পাদক অসীম কুমার উকিল।