হোম কোয়ারেনটাইনে যা করবেন, যা করবেন না
১৮ মার্চ ২০২০ ১৩:৫৪
ঢাকা: বৈশ্বিক মহামারী হিসেবে ঘোষণা দেওয়া নভেল করোনাভাইরাস বা (কোভিড-১৯) সংক্রমণ রোধে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা। বাংলাদেশেও নেওয়া হয়েছে নানা প্রতিরোধ মূলক ব্যবস্থা। ইতোমধ্যেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে ফিরে আসা বাংলাদেশিদের হোম কোয়ারেনটাইন বা সেলফ কোয়ারেনটাইনে থাকার নির্দেশনা দিয়েছে সরকার।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও রোগ গবেষণা প্রশাসনের (আইইডিসিআর) পক্ষ থেকেও বিদেশ ফেরত যাত্রীদের হোম কোয়ারেনটাইনে থাকার অনুরোধ জানানো হয়েছে।
আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য বিধি (আইএইচআর -২০০৫)-এর আর্টিকেল ৩২ অনুসারে, যে সব দেশে নভেল করোনাভাইরাস বা (কোভিড-১৯)-এর স্থানীয় সংক্রমণ ঘটেছে সে সব দেশ থেকে যে সব যাত্রী এসেছেন এবং আসবেন (দেশি-বিদেশি যে কোনো নাগরিক), যারা দেশে শনাক্ত হওয়া কোভিড-১৯ আক্রান্ত ব্যক্তিদের সংস্পর্শে এসেছেন এবং যার অথবা যাদের কোনো শারীরিক উপসর্গ নেই, তাদের ১৪ দিন কোয়ারেনটাইনে পালন করা আবশ্যক।
কোয়ারেনটাইনের মাধ্যমে সেই সকল সুস্থ ব্যক্তিদের, যারা কোনো সংক্রামক রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে এসেছেন। তাদের অন্য সুস্থ ব্যক্তিদের থেকে আলাদা রাখা হয়, গতিবিধি নিয়ন্ত্রণ করা হয় এবং তারা একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ওই সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হন কি না তা পর্যবেক্ষণ করা হয়।
এক্ষেত্রে সেসব ব্যক্তিদের মধ্যে যাদের বাড়িতে কোয়ারেনটাইনের নির্দেশাবলী অনুযায়ী পর্যাপ্ত ব্যবস্থা করা সম্ভব, যারা নিজেরাও তাদের পরিবার স্বেচ্ছা বা গৃহ কোয়ারেনটাইনের সকল নিয়ম মানার জন্য প্রস্তুত এবং যাদের ক্ষেত্রে পারিবারিক ও সামাজিকভাবে কোয়ারেনটাইন থাকাকালীন প্রয়োজনীয় সকল সামগ্রী নিশ্চিত করা সম্ভব, তারা স্বেচ্ছা বা গৃহ কোয়ারেনটাইনে থাকতে পারেন।
স্বেচ্ছা বা গৃহ কোয়ারেনটাইনের জন্য নির্দেশাবলী
• অত্যাবশ্যকীয়ভাবে নিজ বাড়িতে থাকুন।
• হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নেওয়া ব্যতীত বাড়ির বাইরে যাবেন না।
• বাড়ির বাইরে কাজে, স্কুল, কলেজ অথবা জনসমাগমে যাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
• বাড়ির অন্যান্য সদস্যদের থেকে আলাদা থাকুন।
• আলো-বাতাসের সুব্যবস্থা সম্পন্ন আলাদা ঘরে থাকুন এবং অন্যান্য সদস্যদের থেকে আলাদাভাবে থাকুন।
• তা সম্ভব না হলে, অন্যদের থেকে অন্তত এক মিটার (৩ ফুট) দূরে থাকুন (ঘুমানোর জন্য পৃথক বিছানা ব্যবহার
করুন)।
• যদি সম্ভব হয় তাহলে আলাদা গোসলখানা এবং টয়লেট ব্যবহার করুন। সম্ভব না হলে, অন্যদের সঙ্গে ব্যবহার করতে হয় এমন স্থানের সংখ্যা কমান ও ওই স্থানগুলোতে জানালা খুলে রেখে পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের ব্যবস্থা করুন।
• বুকের দুধ খাওয়ান এমন মা-শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াবেন। শিশুর কাছে যাওয়ার সময় মাস্ক ব্যবহার করুন এবং ভালোভাবে হাত ধুয়ে নিন।
• আপনার সঙ্গে কোনো পশু-পাখি রাখবেন না।
• মাস্ক ব্যবহার করুন।
• বাড়ির অন্যান্য সদস্যদের সঙ্গে একই ঘরে অবস্থান করলে, বিশেষ করে এক মিটারের মধ্যে আসার সময় অত্যাবশ্যকীয় ভাবে মাস্ক ব্যবহার করুন।
• মাস্ক পরে থাকাকালীন এটি হাত দিয়ে ধরা থেকে বিরত থাকুন।
• মাস্ক ব্যবহারের সময় প্রদাহের (সর্দি, থুতু, কাশি, বমি ইত্যাদি) সংস্পর্শে আসলে সঙ্গে সঙ্গে মাস্ক খুলে ফেলুন এবং নতুন মাস্ক ব্যবহার করুন।
• মাস্ক ব্যবহারের পর ঢাকনিযুক্ত ময়লার পাত্রে ফেলুন এবং সাবান পানি দিয়ে ভাল ভাবে হাত ধুয়ে নিন।
হাত ধোয়া
• সাবান-পানি দিয়ে অন্তত ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোবেন (বিশেষ করে যদি হাত দেখতে নোংরা লাগে সাবান-পানি ব্যবহার করুন)। প্রয়োজনে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা যেতে পারে।
• অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক ও মুখ স্পর্শ করবেন না।
• সাবান-পানি ব্যবহারের পর টিস্যু দিয়ে হাত শুকনো করে ফেলুন। টিস্যু না থাকলে শুধু হাত মোছার জন্য নির্দিষ্ট তোয়ালে/ গামছা ব্যবহার করুন এবং ভিজে গেলে বদলে ফেলুন।
• মুখ ঢেকে হাঁচি কাশি দিন।
• কাশি শিষ্টাচার মেনে চলুন। হাঁচি কাশির সময় টিস্যু পেপার, মেডিকেল মাস্ক, কাপড়ের মাস্ক বা বাহুর ভাঁজে মুখ ও নাক ঢেকে রাখুন এবং উপরের নিয়মানুযায়ী হাত পরিষ্কার করুন।
• টিস্যু পেপার ও মেডিকেল মাস্ক ব্যবহারের পর ঢাকনাযুক্ত বিনে ফেলুন।
• ব্যক্তিগত ব্যবহার্য সামগ্রী অন্য কারও সঙ্গে ভাগাভাগি করে ব্যবহার করবেন না।
• আপনার খাওয়ার বাসনপত্র- থালা, গ্লাস, কাপ ইত্যাদি, তোয়ালে, বিছানার চাদর অন্য কারও সাথে
ভাগাভাগি করে ব্যবহার করবেন না ।
• এ সকল জিনিসপত্র ব্যবহারের পর সাবান-পানি দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করে ফেলুন।
কখন হোম কোয়ারেনটাইন শেষ হবে?
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কোয়ারেনটাইনের সময় শেষ হবে। চিকিৎসকের সিদ্ধান্তমতে একজন হতে অন্যজনের
কোয়ারেনটাইন-এর সময়সীমা আলাদা হতে পারে। তবে, এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে এ সময়সীমা ১৪
দিন।
আপনি কোয়ারেন্টিনে থাকাকালীন যা করতে পারেন-
• নভেল করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সম্পর্কে জানা যেতে পারে।। WHO, CDC, IEDCR-এর ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত হালনাগাদ তথ্য পেতে পারেন।
• পরিবার ও বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে ফোন, মোবাইল বা ইন্টারনেটের সাহায্যে যোগাযোগ রাখুন।
• শিশুকে তার জন্য প্রযোজ্যভাবে বোঝান। তাদেরকে পর্যাপ্ত খেলার সামগ্রী দিন এবং খেলনাগুলো খেলার পরে
জীবাণুমুক্ত করুন।
• আপনার দৈনন্দিন রুটিন, যেমন: খাওয়া, হালকা ব্যায়াম ইত্যাদি মেনে চলুন।
• সম্ভব হলে বাসা থেকে অফিসের কাজ করতে থাকুন।
• বইপড়া, গান শোনা, সিনেমা দেখা অথবা উপর্যুক্ত নিয়মগুলোর সঙ্গে পরিপন্থী নয় এমন যেকোনো বিনোদনমূলক কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করুন বা ব্যস্ত রাখুন।
পরিবারের সদস্যদের জন্য নির্দেশাবলী
• যিনি কোয়ারেটাইনে আছেন, তার ঘরে থাকা নিশ্চিত করুন। বর্তমানে সুস্থ আছেন এবং যার দীর্ঘমেয়াদী রোগসমূহ (যেমন: ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ক্যানসার, অ্যাজমা প্রভৃতি) নেই, এমন একজন নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে পরিচর্যাকারী হিসেবে নিয়োজিত হতে পারেন। তিনি ওই ঘরে বা পাশের ঘরে থাকবেন, অবস্থান বদল করবেন না।
• কোয়ারেনটাইনে আছেন এমন ব্যক্তির সঙ্গে কোন অতিথিকে দেখা করতে দিবেন না।
পরিচর্যাকারী নিন্মলিখিত যেকোনো কাজ করার পর প্রতিবার উপরের নিয়মে দুই হাত পরিষ্কার করবেন-
এছাড়া হাত ধুতে হবে
• কোয়ারেনটাইনে থাকা ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে বা তার ঘরে ঢুকলে।
• খাবার তৈরির আগে ও পরে এবং খাবার আগে।
• টয়লেট ব্যবহারের পরে।
• গ্লাভস পরার আগে ও খোলার পরে।
• যখনই হাত দেখে নোংরা মনে হয় তখন।
• খালি হাতে কোয়ারেনটাইনের ঘরের কোনো কিছু স্পর্শ করবেন না।
• কোয়ারেনটাইনে থাকা ব্যক্তির ব্যবহৃত বা তার পরিচর্যায় ব্যবহৃত মাস্ক, গ্লাভস, টিস্যু ইত্যাদি অথবা অন্য আবর্জনা ওই রুমে রাখা ঢাকনাযুক্ত ময়লার পাত্রে রাখুন। এ সকল আবর্জনা উন্মুক্ত স্থানে না ফেলে পুড়িয়ে ফেলুন।
• ঘরের মেঝে, আসবাবপত্রের সকল পৃষ্ঠতল, টয়লেট ও বাথরুম প্রতিদিন অন্তত একবার পরিষ্কার করুন।
• পরিষ্কারের জন্য এক লিটার পানির মধ্যে ২০ গ্রাম (২ টেবিল চামচ পরিমাণ) ব্লিচিং পাউডার মিশিয়ে দ্রবণ তৈরি করুন ও ওই দ্রবণ দিয়ে উক্ত সকল স্থান ভালোভাবে মুছে ফেলুন। তৈরিকৃত দ্রবণ সর্বোচ্চ ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত ব্যবহার করা যাবে।
• কোয়ারেনটাইনে থাকা ব্যক্তিকে নিজের কাপড়, বিছানার চাদর, তোয়ালে ইত্যাদি ব্যবহৃত কাপড় গুঁড়া সাবান বা কাপড় কাচা সাবান ও পানি দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করতে বলুন এবং পরে ভালোভাবে শুকিয়ে ফেলুন।
• নোংরা কাপড় একটি লন্ড্রি ব্যাগে আলাদা রাখুন। মলমূত্র বা নোংরা লাগা কাপড় ঝাঁকাবেন না এবং নিজের শরীর বা কাপড়ে যেন না লাগে তা খেয়াল করুন।
কোয়ারেনটাইনে থাকা ব্যক্তির জন্য বিশেষ নির্দেশনা
• স্থানীয় সরকারি হাসপাতাল এবং আইইডিসিআর-এ যোগাযোগের প্রয়োজনীয় ফোন নম্বরগুলো সংগ্রহে রাখুন।
• যদি কোয়ারেনটাইনে থাকাকালীন কোনো উপসর্গ দেখা দেয় (১০০০ ফারেনহাইট/ ৩৮০ সেলসিয়াসের বেশি কাশি, সর্দি, গলা ব্যথা, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি), তবে অতি দ্রুত আইইডিসিআর-এর হট-লাইন নম্বরে (০১৫৫০০৬৪৯০১-৫, ০১৪০১১৮৪৫৫১, ০১৪০১১৮৪৫৫৪, ০১৪০১১৮৪৫৫৫, ০১৪০১১৮৪৫৫৬, ০১৪০১১৮৪৫৫৯, ০১৪০১১৮৪৫৬০, ০১৪০১১৮৪৫৬৩, ০১৪০১১৮৪৫৬৮, ০১৯৩৭-১১০০১১, ০১৯৩৭-০০০০১১, ০১৯২৭-৭১১৭৮৪, ০১৯২৭-৭১১৭৮৫) অবশ্যই যোগাযোগ করুন এবং পরবর্তী করণীয় জেনে নিন।