পুঁজিবাজারে করোনা আতঙ্ক: ৭ দিনে ৪৪ হাজার কোটি টাকা উধাও
১৮ মার্চ ২০২০ ১৫:৫৩
ঢাকা: করোনাভাইরাস আতঙ্কে মন্দা পুঁজিবাজারে পতনের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাংক ও আর্থিক খাতের বিপর্যয়ের কারণে পুঁজিবজারে মন্দাবস্থা বিরাজ করছিল। এরসঙ্গে নতুন করে আতঙ্ক হিসাবে দেখা দিয়েছে করোনভাইরাস।
গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে করোনাভাইরাস আক্রান্ত রোগীর সন্ধান পাওয়ার পর থেকে পুঁজিবাজারে টালমাটাল অবস্থা। করোনা আতঙ্কে সবশেষ সাত কার্যদিবসে দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) থেকে ৪৪ হাজার ১২৮ কোটি টাকা বাজার মূলধন উধাও হয়েছে। একই সময়ে ডিএসই সূচক হারিয়েছে ৬৮৩ পয়েন্ট।
বাজার বিশ্লেষকদের মতে, করোনাভাইরাস আতঙ্কে বিভিন্ন দেশের পুঁজিবাজারে বড় ধরনের ধস নেমেছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারেও। তবে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা দরপতনের কারণে বিনিয়োগকারীরা আগে থেকেই ক্ষতিগ্রস্থ ছিল। এরসঙ্গে করোনাভাইরাস আতঙ্কে পতনের মাত্রা আরও বেড়ে যাওয়ায় বিনিয়োগকারীরা বড় ধরনের লোকসানের কবলে পড়েছে। পুঁজি হারিয়ে প্রায় প্রতিদিনই নিঃস্থ থেকে আরও নিঃস্থ হচ্ছে বিনিয়োগকারীরা। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ আতঙ্কিত হয়ে কম দামে শেয়ার বিক্রি না করা।
এদিকে বুধবার (১৮ মার্চ) লেনদেন শুরুর প্রথম ৩৫ মিনিট পুঁজিবাজার ঊর্ধ্বমুখী থাকলে শেষ পর্যন্ত তা ধরে রাখা যায়নি। সকাল ১১টা থেকে সূচক ঋণাত্নক হতে শুরু করে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পতনের মাত্রাও বাড়তে থাকে। দিনশেষে ডিএসইর প্রধান সূচক আগের দিনের চেয়ে ১৬৮ পয়েন্ট কমে ৩ হাজার ৬০৩ পয়েন্টে নেমে আসে। এটি আগের সাত বছরের মধ্যে সূচকের সর্বনিম্ন অবস্থান। এর আগে ২০১৩ সালের ৯ মে‘র পর ডিএসইর প্রধান সূচক ছিল ৩ হাজার ৫৫৯ পয়েন্ট। ওইদিনের পর আজ সূচকের সর্বনিম্ন অবস্থানে নেমে আসে।
এর আগে গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার দিন ডিএসই বাজার মূলধন ছিল ৩ লাখ ৩১ হাজার ৫১০ কোটি টাকা। একইদিনে ডিএসইর প্রধান সূচক ছিল ৪ হাজার ২৮৭ পয়েন্ট। মাত্র সাত কার্যদিবসে বড় ধরপতনের কারণে বুধবার ডিএসইর মূলধন ৪৪ হাজার ১২৮ কোটি টাকা কমে ২ লাখ ৮৭ হাজার ৩৮২ কোটি টাকায় নেমে আসে। একই সময়ে ডিএসইর প্রধান সূচক ৬৮৩ পয়েন্ট কমে ৩ হাজার ৬০৩ পয়েন্টে নেমে আসে।
এদিকে মঙ্গলবার ডিএসইতে ৩৫৬টি কোম্পানির ১৭ কোটি ৮৪ লাখ ৮৯ হাজার ৩৪৯টি শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের লেনদেন হয়েছে। লেনদেন হওয়া এসব শেয়ার ও ইউনিটের মধ্যে দাম বেড়েছে মাত্র ১৩টির, কমেছে ৩৩৩টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১০টির দাম। দিনশেষে ডিএসইতে আর্থিক লেনদেনের পরিমাণ দাঁড়ায় ৪২৯ কোটি ৩ লাখ টাকা। দিনশেষে ডিএসই ব্রড ইনডেক্স আগের কার্যদিবসের চেয়ে ১৬৮ পয়েন্ট কমে ৩ হাজার ৬০৩ পয়েন্টে নেমে আসে। এদিন ডিএসই শরিয়া সূচক ৩৯ পয়েন্ট কমে ৮৩৪ পয়েন্ট, ডিএসইএ-৩০ সূচক ৬১ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ২০৩ পয়েন্টে নেমে আসে।
অন্যদিকে বুধবার চট্রগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) ২৪৮টি কোম্পানির ১ কোটি ১ লাখ ৭ হাজার ৫১৬টি শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের লেনদেন হয়েছে। লেনদেন হওয়া এসব শেয়ার ও ইউনিটের মধ্যে দাম বেড়েছে মাত্র ১৯টির, কমেছে ২২২টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে সাতটি কোম্পানির শেয়ারের দাম। দিনশেষে সিএসইতে ১৫ কোটি ৬০ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছে। এদিন সিএসইর প্রধান সূচক আগের দিনের চেয়ে ৪৮৩ পয়েন্ট কমে ১১ হাজার ৯৩ পয়েন্ট নেমে আসে।