Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

হাত কামড়াচ্ছে সরকার, দিন দশেক আগেও যদি সবাইকে খেদিয়ে ঘরে ঢুকাতাম


১৯ মার্চ ২০২০ ১১:২৯

‘… আমাদের হাতে তিন মাসের লম্বা সময় ছিল। যা আমরা হেলায় হারাচ্ছি, এবং সে সময়ে তাসের ঘরের মতো থুবড়ে পড়বে স্বাভাবিক প্রতিরোধটুকুও। বিপদের আন্দাজও করতে পারছি না, এত ভয়াবহ হবে সেটা।

স্পেন হল ইউরোপের উষ্ণতর, আলোকোজ্জ্বল দেশ। রোদে খটখটে সারাবছর। মরুভূমির মতো ভূপ্রকৃতি। লোকজনের আয়ুষ্কাল দীর্ঘ। জাপানিদের পরেই স্পেনের গড় আয়ু। ৯০ ভাগ দেশবাসি স্বাস্থ্যকর খাবার খায়, সুস্থ চলে। সুস্থ থাকে।

বিজ্ঞাপন

সামনেই সামার। পর্যটননির্ভর সুন্দর দেশটির রুটি-রুজির অন্যতম সময়। এ সময়ে করোনাভাইরাস নিয়ে মাতামাতি করতে কারোরই ভালো লাগছিল না।

করোনাভাইরাস যখন ইতালিতে বিষবাষ্প ছাড়ছে, তখনো স্পেন ছিল নির্বিকার। অথচ করোনা হাঁটিহাঁটি পা পা করে সপ্তাহ খানেকের মধ্যেই হানা দিল রাজধানি মাদ্রিদে।

কর্তারা তখনো শাক দিয়ে মাছ ঢাকছেন। সেরে যাবে, চলে যাবে, ছুঁহ ছুঁহ করছেন!

এক সপ্তাহ পরেই বোঝা গেল, করোনাভাইরাস না গরম মানে, না সুস্থ শরীর মানে, না নারী শিশু মানে। করোনাভাইরাস কোনো করুণা করছে না, বিদ্যুৎ বেগে ছড়াচ্ছে, যাকে বাগে পাচ্ছে আইসিইউ পর্যন্ত টেনে নিয়ে মেরে ফেলছে।

মরার পর কেউ ছুতে পারছে না। দেখতে পারছে না। মরার বুকে আছরে পরে কাঁদতে পারছে না। জানাজায় লোক হচ্ছে না, ফিউনারেল হচ্ছে না। দাফন হচ্ছে না। সরাসরি ক্রিমেশনে পুড়িয়ে ফেলছে।

সেই স্পেন থেকে বলছি।
আজ পাঁচদিন হয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে। রাস্তায় সেনা ও পুলিশ ঘুরছে। আপনি কেবল তিন কাজের জন্য বের হতে পারবেন!

খাদ্য কেনা
ওষধ কেনা
ও গ্রেফতার হবার শখ হওয়া!

জরিমানা গুনবেন ২০০ ইউরো, যদি কোয়ারাইন্টাইনের নিয়ম না মানেন। খোলা আছে শুধু ব্যাংক, মুদি দোকান আর ফার্মেসি। বাকিরা সিলগালা, তালা।

বিজ্ঞাপন

দূরপাল্লার বাস ট্রেন ৭৫ ভাগ বন্ধ করা হয়েছে। শহরের সিটি সার্ভিস ৫০ ভাগ কমানো হয়েছে। যেখানেই যাবেন, যুক্তি দেখাতে হবে। কেন, কিসের তাড়া? এই হল কোয়ারেনটাইন।

সকল সরকারি তো বটেই, বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক নেওয়া হয়েছে সরকারের আওতায়। সব নিয়ন্ত্রণ সরকারের। সকল ইন্টার্ন-এর মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। যেকোনো ডিসিপ্লিনের চিকিৎসক হলেই প্রস্তুত করা হচ্ছে করোনা সৈনিক হিসেবে! শেষ বর্ষের ছাত্র ছাত্রীদের যুক্ত করা হচ্ছে চিকিৎসকদের কাতারে। এরপর যুদ্ধ চলছে। হাসপাতালে হাসপাতালে। তবুও কমছে না মৃত্যু মিছিল।

হাত কামড়াচ্ছে সরকার, দুয়ো দিচ্ছে একে অন্যকে। আহা! আর একটা সপ্তাহ! আর দিন দশেক আগেও যদি সবাইকে খেদিয়ে ঘরে ঢুকাতাম, তো এই দাবানল রুখে দেওয়া যেত! যেমন, চীন রুখেছে, সাউথ কোরিয়া ও সিংগাপুর রুখেছে।

বাংলাদেশ ভালো থাকুক, সেটা কে না চায়! আমার সর্বস্ব সেখানেই। মরার পরের ঠিকানা সেটা। দেশ থেকে আমার কথা ভেবে ফোন আসলে অসহায় লাগে। আমি ভাবছি তাদের নিয়ে, তারা ভাবে আমাকে নিয়ে!

আমি ডাক্তারি পড়াশোনা করেছি, এসব ভাইরাস ব্যাকটেরিয়ার নাশকতা সম্পর্কে জানি। এখানে স্বচক্ষে ইউরোপের দুর্গতিও দেখছি। তবুও চাই, ভুল প্রমাণিত হোক আমার ধারণা। যাদুমন্ত্র বলে করোনা সরে যাক বাংলার আকাশ থেকে। নয় তো, আজাব আসন্ন। অতি আসন্ন।’

করোনা ভাইরাস সরকার স্পেন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর