ঢাকা ফাঁকা, দূরপাল্লার যাত্রী কমেছে ৭৫ শতাংশ
১৯ মার্চ ২০২০ ১৮:৩৯
ঢাকা: সিফাত আহমেদ সারাহ। গুলশানে একটি অফিসে চাকরি করেন। সেখান থেকে সাড়ে চার কিলোমিটার দূরে বাসা। অন্যান্য দিন বাসা থেকে অফিসে যেতে সময় লাগে ঘণ্টা দেড়েক। কিন্তু আজ লাগলো মাত্র আট মিনিট। এর আগে সকালে তিনি সদরঘাট থেকে মিরপুরে গেছেন আধঘণ্টায়।
সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে ঢাকার নিয়মিত চিত্র যেমনটা থাকে তেমনটা আজ চোখে পড়েনি। অন্যান্য সময়ের সঙ্গে আজকের দিনটার পার্থক্য বেশ চোখে পড়ার মতো।
বৃহস্পতিবার (১৯ মার্চ) রাজধানীর রাস্তা জুড়ে নেই যানজট। ফাঁকা যাচ্ছে বাস। কোথাও কোথাও ড্রাইভাররা বাস থামিয়ে বসে আছেন। যাত্রী জন্য দীর্ঘক্ষণ হাঁকডাক করছেন হেলপাররা। যে কজন যাত্রী উঠছেন তাদের অধিকাংশের মুখে মাস্ক।
https://www.facebook.com/Sarabangla.net/videos/693001971437854/
চীনের উাহান থেকে সারাবিশ্বে ছড়িয়ে পড়া করোনায় এ পর্যন্ত দুই লাখ ১৬ হাজার মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে মারা গেছে সাড়ে আট হাজার মানুষ। বাংলাদেশও এই আক্রমণ থেকে বাদ যায়নি। এ পর্যন্ত দেশে ১৭ জন ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হয়েছে এবং মারা গেছেন একজন। এরই মধ্যে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। রাজনৈতিক দল থেকে শুরু করে বিভিন্ন সংগঠন প্রকাশ্য জনসমাবেশ বাতিল করেছে। করোনা আতঙ্কে বন্ধ হয়েছে পর্যটন স্পটগুলোও। এছাড়া দেশের স্থলবন্দরগুলো দিয়ে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার পাশাপাশি বিমানের অধিকাংশ ফ্লাইটই বাতিল করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে সারাদেশের মতো রাজধানীর নাগরিকরাও করোনা আতঙ্কে ভুগছে। তাই তাদের চলাফেরায় নিয়ন্ত্রণ এসেছে। গুরুত্বপূর্ণ কাজ ছাড়া কেউ বাইরে বের হচ্ছেন না।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, ‘বাসের যাত্রী কমে গেছে। অনেকেই বাড়ি চলে গেছেন। তবে যাত্রী পাওয়ার ভিত্তিতে বাস চলছে।’
পরিবহন মালিক সমিতি থেকে তাদের উদ্যোগের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘প্রতিটি টার্মিনালের বাসে স্প্রে এবং দূরপাল্লার রুটের বাসের যাত্রীদের মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার সরবরাহ করা হচ্ছে।’
শ্যামলী এন আর ট্রাভেলসের ম্যানেজিং ডিরেক্টর রাকেশ ঘোষ জানান, তাদের বিভিন্ন রুটের বাস চলাচল সীমিত হয়ে এসেছে। যাত্রী মিলছে না। অনেকেই অগ্রিম টিকিট কেটেছিলেন তারা ফেরত দিয়ে গেছেন। কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, সিলেটসহ পর্যটন স্পটগুলোতে যাওয়ার জন্য অনেকগুলো বাস রিজার্ভ করা ছিল। সেসব বাতিল হয়ে গেছে আগেই।
উত্তরা থেকে বাড্ডা রোড হয়ে সদরঘাট রোডে চলাচলকারি ভিক্টর পরিবহনের একজন হেলপার জানান, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত উত্তরা-সদরঘাটে দুই বার ঘুরে বাসের সব সিট পুরো করতে পারেননি। অথচ অন্যান্য বৃহস্পতিবার হলে দাঁড়িয়েও জায়গা থাকে না বাসে। সিঁড়িতে পর্যন্ত যাত্রী ঝুলে যেতে থাকেন।
রাইদা পরিবহনের আরেকজন চালক জানান, এভাবে যাত্রী না পেলে তারাও পরের টিপে বের হবেন না। কারণ সন্ধ্যায় মালিককে পুরো দিনের জমার টাকা দেওয়া সম্ভব হবে না।
এদিকে করোনা আতঙ্কে দূরপাল্লার বাসে ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। পরিবহন মালিকরা বলছেন, মাত্র ২৫ শতাংশ যাত্রী নিয়ে এখন চলছে বাস। এনা পরিবহনের জেনারেল ম্যানেজার সৈয়দ আতিক জানান, এই সময় সাধারণত তাদের বাসে শতভাগ যাত্রী থাকে। কিন্তু করোনা আতঙ্ক ও সতর্কতার কারণে যাত্রী ৭৫ শতাংশ কমে গেছে।
রাজধানীতে বাস চলাচল বন্ধ হবে কি-না?- এমন প্রশ্নের জবাবে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, ‘রাজধানীতে বাস চলাচল সীমিত হতে পারে। তবে বন্ধ হবে না।’
এ বিষয়ে তারা এখন পর্যন্ত সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় থেকে কোনো নির্দেশনা পাননি বলে জানান এনায়েত উল্যাহ।