Friday 27 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

করোনাভাইরাস মোকাবিলায় যা করেছিল দক্ষিণ কোরিয়া


২১ মার্চ ২০২০ ১৪:২৭

দক্ষিণ কোরিয়া সবসময়ই তার প্রতিবেশী উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র ভয়ে ভীত থাকে। উত্তর কোরিয়ার একের পর এক পারমাণবিক পরীক্ষার পর দক্ষিণ কোরিয়াকে ধ্বংস করে দেওয়ার হুমকির বিষয়ে দেশটির নীতি হলো, ‘শান্ত থাকো এবং চালিয়ে যাও’। বিশ্ব মহামারি করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) রোগের বিরুদ্ধে দক্ষিণ কোরিয়ার নীতিও এর ব্যতিক্রম নয়।

চীনে যখন করোনাভাইরাস ব্যাপক তাণ্ডবলীলা চালিয়েছে তখন দক্ষিণ কোরিয়ার সরকার বুঝতে পেরেছিলো, ভাইরাসটি তাদের দেশেও আসছে। ২০০৩ সালে সার্স মহামারির অভিজ্ঞতা কাজে লেগেছে এক্ষেত্রে। শুরুতেই দেশটির বিভিন্ন সরকারি শাখা যেমন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, সমাজকল্যান মন্ত্রণালয় এবং আঞ্চলিক সরকার যেমন পৌরসভার সঙ্গে প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ের সমন্বয় করে দেশটি। যার ফলে দেশটিতে মৃত্যুর হার অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়েছে। ব্যাপকভাবে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা না দিয়েও বরং দেশব্যাপী কঠোর কোয়ারেনটাইন নীতি ও প্রচুর পরিমাণে পরীক্ষার মাধ্যমে তারা এতে সফল হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

১৬ জানুয়ারি দক্ষিণ কোরিয়ার বায়োটেক নির্বাহী জুন জং ইয়ন চীনের পরিস্থিতি দেখে নোভেল করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে তার গবেষণাগারকে প্রস্তুত করেন। সেখানে কাজ শুরু হয়। এর কিছু দিনের মধ্যেই তারা এমন একটি শনাক্তকরণ কিট (টেস্টিং কিট) আবিষ্কার করে যা এখন বিশ্বব্যাপী ব্যবহৃত হচ্ছে। এখন তারা তাদের উৎপাদিত বিদেশেও রফতানি করছে। যেমন এ সপ্তাহে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ৫১ হাজার কিট রফতানি করেছে দক্ষিণ কোরিয়া।

আরেকটি ব্যাপার রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। দেশটির নাগরিকদের মধ্যে একটি সাধারণ ঐক্যমত আছে। তাদের নীতি হলো সরকারি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ, চিকিৎসক ও বিশেষজ্ঞদের ওপর বিশ্বাস রাখা ও তাদের পরামর্শ মেনে চলা।

বিজ্ঞাপন

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে কাজটি করেছিলো দক্ষিণ কোরিয়া তা হল, শুরু থেকেই লাখ লাখ মানুষের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা শুরু করেছিলো। এছাড়া দক্ষিণ কোরিয়া ‘করোনা১০০মিটার’ নামে একটি কেন্দ্রীয় ট্র্যাকিং অ্যাপ চালু করে। এই অ্যাপের মাধ্যমে ব্যবহারকারীর ১০০ মিটারের মধ্যে যদি কোন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী থাকেন তবে তার সতর্ক বার্তা পাওয়া যায়। এটি সম্ভব হয়েছে ব্যাপক মাত্রায় পরীক্ষা করার কারণে। পরীক্ষা করলে নাগরিকের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত  তথ্য পাওয়া সহজ হয়।

সরকার নাগরিকদের ঘরে রাখার জন্য কিছু উদ্যোগও নেয়। গত ১৭ মার্চ, দেশটির ৪ লাখ ৫৪ হাজার ৯০০ নাগরিককে ৩৬০ ডলার হারে এক মাসের জন্য ভাতা প্রদান করে। এছাড়া যারা সেলফ আইসোলেশনে ছিলেন তাদেরও একই পরিমাণ অর্থ প্রদান করা হয়। যদিও টাকার এই অংকটি বেশি বড় নয়, তবুও একমাস সেদেশে তাদের জীবনযাপনের জন্য যথেষ্ট।

২৯ ফেব্রুয়ারি দায়েগো শহরে শুরুতে ৭০০ জনের শরীরে করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। কিন্তু এর ১৫ দিন পর ১৫ মার্চ আর মাত্র ৪১ জন আক্রান্ত হয় এ ভাইরাসে। তবে এতে সন্তুষ্ট হওয়ার কোনো ছিল না। কেননা আক্রান্ত এলাকার মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাচ্ছিলো। এরপর ১৮ মার্চ থেকে রাজধানী সিউলে আক্রান্তের সংখ্যা আবার বাড়তে থাকে। এর মধ্যেই দক্ষিণ সিউলের একটি চার্চে লবণ পানির মাধ্যমে এই ভাইরাস ঠেকানো যায় উল্লেখ করা হলে, সেইখানে আগ্রহী অনেকের ভিড় তৈরি হয়। ওই ভিড়ের ভেতর থেকে ৪৬ জন পরবর্তীতে পরীক্ষায় করোনাভাইরাস আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হন। তখনই চীনাদের ব্যাপারে জাতিগত ঘৃণা ছড়ানো শুরু হয়। জনগণ স্বাস্থ্য বিভাগের ওপর থেকে আস্থা হারানোও শুরু করে।

১৯ মার্চ থেকে দক্ষিণ কোরিয়ার বিমানবন্দরগুলোতে কঠোর স্ক্রিনিং ব্যবস্থা চালু করা হয়। বিমানবন্দরে আসা বিদেশি এবং কোরিয়ান সবাইকে ওই স্ক্রিনিংয়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়। সেদিন থেকেই দক্ষিণ কোরিয়ার হাসপাতালগুলোতে শয্যা সংখ্যা দ্বিগুণ করে ফেলা হয়। এবং নাগরিকদের জন্য নির্দেশনা জারি করে যে, তারা নির্দিষ্ট মূল্যের অর্ধেক পরিশোধ করেই বিভিন্ন প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করাতে পারবেন। এই ঐতিহাসিক উদ্যোগের পরই সাধারণ জনগণ চিকিৎসক এবং গবেষকদের ব্যাপারে আরও আস্থা রাখা শুরু করেন।

– গার্ডিয়ান অবলম্বনে

করোনা ১০০মিটার করোনাভাইরাস দক্ষিণ কোরিয়া

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

২৪ বলে ০ রানে জাকিরের লজ্জার রেকর্ড
২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৫:১৮

সম্পর্কিত খবর