Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চসিক নির্বাচন স্থগিত, চট্টগ্রামে স্বস্তি


২১ মার্চ ২০২০ ১৮:৪৩

চট্টগ্রাম ব্যুরো: চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন স্থগিত ঘোষণায় স্বস্তি মিলেছে বন্দরগনরীর মানুষের মধ্যে। এমনকি নির্বাচনের প্রার্থী এবং তাদের সমর্থকরাও এই সিদ্ধান্তকে ইতিবাচকভাবে নিয়েছেন। আর ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তারাও যেন হাফ ছেড়ে বেঁচেছেন!

আগামী ২৯ মার্চ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দেওয়ার পর থেকে বন্দরনগরীর বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের পক্ষ থেকে নির্বাচন স্থগিতের দাবি আসছিল। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফেসবুকে গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে নির্বাচন পেছানোর জোরালো দাবি উঠে আসছিল।

বিজ্ঞাপন

বিএনপির মেয়র প্রার্থী শাহাদাত হোসেনের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট দলটির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান নির্বাচন স্থগিতের দাবি জানিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে চিঠি দেন। শাহাদাত হোসেন স্থগিত না করলে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এম রেজাউল করিম চৌধুরীও নির্বাচন স্থগিত বা পেছানো নিয়ে কমিশন কোনো সিদ্ধান্ত নিলে তা ইতিবাচকভাবে দেখার কথা বলেছিলেন। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থীও নির্বাচন স্থগিতের জন্য ইসিকে ৭২ ঘণ্টা সময় বেঁধে দিয়েছিলেন।

স্বাস্থ্য বিভাগ এবং নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা মেনে গত বৃহস্পতিবার (১৯ মার্চ) থেকে চট্টগ্রাম নগরীতে কার্যত গণসংযোগ, জমায়েত বন্ধ করে দিয়েছিলেন প্রার্থীরা। কিন্তু নির্বাচন কমিশনই আবার তাদের নির্দেশনা ভঙ্গ করে শুক্রবার প্রায় ৫ হাজার ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তার প্রশিক্ষণের আয়োজন করে। এতে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা সৃষ্টি হয় এবং নির্বাচন পেছানোর দাবি আরও জোরালো হয়ে ওঠে।

বিজ্ঞাপন

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে শনিবার (২১ মার্চ) বৈঠকে বসেন নির্বাচন কমিশনাররা। বৈঠকে ২৯ মার্চ অনুষ্ঠিতব্য চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচন, বগুড়া-১ ও যশোর-৬ আসনের নির্বাচন স্থগিতের সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন। আনুষ্ঠানিক ঘোষণার আগে দুপুরের মধ্যেই গণমাধ্যমের বরাতে এ খবর ছড়িয়ে পড়লে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। অধিকাংশই ইসি’র সিদ্ধান্তে সন্তোষ প্রকাশ করে স্ট্যাটাস দেন।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও চসিক নির্বাচনের সহকারি রিটার্নিং কর্মকর্তা মুনীর হোসাইন খান সারাবাংলাকে বলেন, ‘নির্বাচন স্থগিত হয়েছে। সিদ্ধান্ত মৌখিকভাবে পাওয়ার পরই আমরা আজ (শনিবার) দুপুর ২টার দিকে প্রশিক্ষণ বন্ধ করে দিয়েছি। প্রশিক্ষণার্থী সবাইকে কমিশনের সিদ্ধান্ত জানিয়ে বলা হয়েছে, প্রশিক্ষণ আপাতত বন্ধ থাকবে। আর কমিশন থেকে লিখিত নির্দেশনা পাবার পর রিটার্নিং অফিসারের পক্ষ থেকে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে নির্বাচন সংক্রান্ত সব কার্যক্রম বন্ধ থাকার বিষয়টি জানানো হবে। কমিশন পুনরায় নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিলে আবারও আমরা এ সংক্রান্ত কর্মকাণ্ড চালু করব।’

নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়ে বিএনপির মেয়র প্রার্থী শাহাদাত হোসেন বলেন, ‘আমরা বারবার নির্বাচন স্থগিতের দাবি জানিয়ে আসছিলাম। চিঠিও দিয়েছি। কিন্তু নির্বাচন কমিশন এতদিন আমাদের কথায় কর্ণপাত করেনি। কিন্তু আজ (শনিবার) ঢাকা-১০ আসনের উপ-নির্বাচনের ভোটারের উপস্থিতি দেখে তারা একেবারে হতাশ হয়ে যায় এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের নির্বাচন স্থগিতের ঘোষণা দেয়। এরপরও আমরা নির্বাচন কমিশনের এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাচ্ছি। তাদের অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এখন আমাদের উচিৎ হবে রাজনৈতিক দলাদলি ভুলে মানুষের পাশে দাঁড়ানো, মানুষকে এই ভয়াবহ দুর্যোগ থেকে রক্ষা করা।’

শনিবার দুপুরে নির্বাচন স্থগিতের ঘোষণা আসার পর থেকে আর গণমাধ্যমের মুখোমুখি হননি আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী রেজাউল করিম চৌধুরী। বিকেল সাড়ে ৫টায় রেজাউলের সঙ্গে সার্বক্ষণিকভাবে থাকা সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ইলিয়াছ উদ্দিন সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, তিনি বিশ্রামে আছেন।

নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন সারাবাংলাকে বলেন, ‘জনগণকে সম্ভাব্য দুর্যোগ থেকে বাঁচাতে নির্বাচন কমিশন সিটি করপোরেশনের নির্বাচন স্থগিত করে একটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটা সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত। আমরা এতদিন ধরে এই নির্বাচন নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে কিছুটা অস্বস্তি দেখেছি। সেজন্য তিনদিন আগে থেকেই গণজমায়েত করে প্রচারণা বন্ধ করেছি। স্থগিত ঘোষণার পর সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বস্ত্বি ফিরেছে। এখন মানুষ যেহেতু ভোটকেন্দ্রে যাবে না, তাদের উচিৎ হবে সকল ধরনের জনসমাগম এড়িয়ে চলা। বিদেশ থেকে আসা মানুষের স্পর্শ থেকে দূরে থাকা।’

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মেয়র প্রার্থী জান্নাতুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়ে বলেছিলাম, নির্বাচন স্থগিত করুন। অন্যথায় ঘোষণা দিয়ে নির্বাচন বর্জন করবো বলেছিলাম। অনেক পরে হলেও নির্বাচন কমিশনের যে বিষয়টা বোধগম্য হয়েছে, সেজন্য তাদের ধন্যবাদ। বাংলাদেশের মধ্যে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চল বলা হচ্ছে চট্টগ্রামকে। কারণ এখানে সমুদ্রবন্দর ও বিমানবন্দর আছে। বিদেশে চট্টগ্রামের অনেক লোকজন থাকে। ভোট বন্ধ করা হয়েছে, ঠিক আছে। কিন্তু মানুষকে ভিড়ের মধ্যে যেতে না দেওয়া, স্বাস্থ্য সম্পর্কিত নির্দেশনা মেনে চলা- এসব বিষয়ে বাধ্য করতে সরকারের ওভার রিঅ্যাক্ট করা দরকার। বাংলাদেশের মানুষ এমনিতেই বেশি কৌতুহলী, চাপ প্রয়োগ না করলে তাদের সামলানো যাবে না।’

নির্বাচন স্থগিতের দাবি জানিয়েছিল বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিও (সিপিবি)। দলটির চট্টগ্রামের সাধারণ সম্পাদক অশোক সাহা সারাবাংলাকে বলেন, ‘জাতীয় দুর্যোগের সময়, মানুষের কষ্টের সময় ভোট হয় না। ভোট একটি উৎসব। কষ্টে থাকা মানুষ উৎসব করবে কিভাবে ? নির্বাচন কমিশনের এই সামান্য বিষয়টা মাথায় ছিল না, এটাই আশ্চর্যের বিষয়। এটার জন্য মানুষকে দাবি জানাতে হয়, এটা দুঃখজনক। এরপরও নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছি।’

নগরীর ৩২ নম্বর আন্দরকিল্লা ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী জহরলাল হাজারী সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি এক সপ্তাহ ধরে সভা, উঠান বৈঠক, জমায়েত করছি না। শুধু ২-৩ জন বাড়ি বাড়ি গিয়ে লিফলেট বিতরণ করে আসছিলাম। স্যানিটাইজার, মাস্কও বিতরণ করেছি। নির্বাচন স্থগিত হওয়াই কাম্য ছিল। আমরা মানুষের জন্য রাজনীতি করি। বর্তমান সরকার জনবান্ধব সরকার। জনগণের কষ্ট হয়, এমন কোনো সিদ্ধান্ত সরকার নিতে পারে না।’

সংরক্ষিত-১০ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী জেসমিনা খানম সারাবাংলাকে বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি। এটা ভোটের সময় নয়। এখন সম্মিলিতভাবে দুর্যোগ মোকাবিলার সময়।’

স্বস্ত্বি এসেছে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের মধ্যেও। ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সাবেক সভাপতি দেলোয়ার মজুমদার সারাবাংলাকে বলেন, ‘প্রার্থীরা প্রচারণার নামে শত, শত মানুষ নিয়ে হ্যান্ডশেক, কোলাকুলি করে রীতিমতো তাণ্ডব চালাচ্ছিল। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ নিয়ে কোনো নির্দেশনাই তারা মানছিলেন না। এর ফলে ভয়াবহ একটা সংকটে পড়তে যাচ্ছিলাম আমরা। এখনও যে সংকটের মুখোমুখি নেই, তা নয়। তবে নির্বাচন স্থগিত করে কমিশন বিলম্বে হলেও শুভবুদ্ধির পরিচয় দিয়েছে।’

চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের সচিব মো. আব্দুল আলীম সারাবাংলাকে বলেন, ‘কমিশন বুঝেশুনে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমি বলব, এটা ভালো সিদ্ধান্ত হয়েছে। চট্টগ্রামের ভোটাররাই এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন হোক, সেটা চাননি। জনমনে আতঙ্ক আছে, কমিশনের সিদ্ধান্তের ফলে এই আতঙ্ক দূর হবে।’

চসিক নির্বাচন নির্বাচন স্থগিত

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর