৩ দিনে দেশে এসেছে ১৮ হাজার, কোয়ারেনটাইনে আছে ৯ হাজার
২২ মার্চ ২০২০ ০৫:৪৫
ঢাকা: বৈশ্বিক মহামারী ঘোষণার পরে বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশই আন্তর্জাতিকভাবে আক্রান্ত দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করেছে। তবে এই ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম বাংলাদেশ। ২৪ জনের মধ্যে করোনাভাইরাস সংক্রমণ হলেও দেশে এখনো বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আসছে যাত্রীরা।
১৭ মার্চ থেকে ২০ মার্চ সকাল পর্যন্ত ৭২ ঘণ্টার তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, বিভিন্ন সমুদ্র, স্থল ও বিমানবন্দর দিয়ে ১৮ হাজার ৮৮১ জন যাত্রী বিভিন্ন দেশ থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এর মধ্যে বাংলাদেশে তিনটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে এসেছেন ৬ হাজার ৮৩৬ জন। স্থল বন্দর দিয়ে এসেছেন ১১ হাজার ২২৯ জন। দেশের সমুদ্র বন্দর দিয়ে এসেছেন ৮১৬ জন যাত্রী।
এদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, সৌদিন আরব, ওমান, সিঙ্গাপুর ও চীন থেকেও এসেছেন যাত্রীরা। এই দেশগুলো ইতোমধ্যেই করোনাভাইরাস আক্রান্ত। তবে তাদের মধ্য থেকে এই তিন দিনে হোম কোয়ারেনটাইনে পাঠানো হয়েছে ৯ হাজার ৪২৮ জনকে।
অর্থাৎ বাকি ৯ হাজার ৪৫৩ জন নেই কোয়ারেনটাইনের হিসেবে। দেশের বিভিন্ন জেলার প্রতিনিধিদের দেওয়া তথ্য ও সিভিল সার্জনদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।
স্থল বন্দর দিয়ে আসা কয়েকজন যাত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের আসলে হোম কোয়ারেনটাইনে থাকার বিষয়ে কোনো নির্দেশনা দেওয়ানি। স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে বাসায় চলে যেতে বলা হয়েছে। এর মধ্যে বেনাপোল স্থল বন্দর দিয়ে আসা একজনের সঙ্গে কথা বলে এই বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়।
বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত কমিউনিটি ট্রান্সমিশন ঘটেনি বলে দাবি করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। বিমানবন্দরসহ সকল স্থল বন্দর ও সমুদ্র বন্দর দিয়ে সবাইকে স্ক্রিনিং করেও হোম কোয়ারেনটাইনে বা প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেনটাইনে পাঠানো হচ্ছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, সবাইকেই কোয়ারেনটাইনে নেওয়া হচ্ছে। তবে তথ্যগতভাবে অনেক ডাটা মিস করে যাচ্ছে। তাই আসলে এটা নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না। সকল বিমান, সমুদ্র ও স্থলবন্দরের সবাইকে হোম কোয়ারেনটাইন ও কোয়ারেনটাইনে নেওয়া হচ্ছে এটা আমরা বলতে পারি। তবে কিছু ক্ষেত্রে যদি বিচ্যুতি হয়েও থাকে সেক্ষেত্রে অবশ্যই তাদের ট্র্যাক করে নেওয়া হবে।
ইতালি থেকে আসা যাত্রীদের সংখ্যা নিয়ে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এ এইচ এম তৌহিদ-উল-আহসান সারাবাংলাকে বলেন, ‘ইতালি থেকে কী পরিমান যাত্রী এসেছে তা আসলে স্পেশাল ব্রাঞ্চ বলতে পারবে। কারণ ইমিগ্রেশন শেষে সকল তথ্য তাদের কাছেই থাকে। উনাদের কাছে সবসময়েই তথ্য থাকে। পাসপোর্টের মাধ্যমে উনারা ডাটা এন্ট্রি করে থাকেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে এখনো যে সব স্থান থেকে ফ্লাইট আসছে সেসব স্থানে কোনো নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়নি বিমান আসার বিষয়ে। সুতরাং এটা নিয়ম মতেই হচ্ছে। আক্রান্ত এলাকা থেকে যে বিমানগুলো আসতে পারবে না এমন কোনো নির্দেশনা আসলে দেওয়া হয়নি। বাংলাদেশে যেকোনো ফ্লাইট আসতে পারবে না এমন কোনো নির্দেশনাও দেওয়া হয়নি। শুধু একটা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে যে, যুক্তরাজ্য ছাড়া ইউরোপ থেকে কোনো ফ্লাইট আসতে পারবে না। সেটা যে কোনো পাসপোর্টধারীই হোক। সেক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র বা অন্যান্য এলাকা থেকে আসতে পারবে।’
তিনি বলেন, ‘করোনা আক্রান্ত দেশ থেকে আসলে তাকে হোম কোয়ারেনটাইনে থাকতে হবে এটা নিশ্চিত করা হচ্ছে। এই নির্দেশনা আছে যা আমরা মানছি। একই সঙ্গে এখন অন এরাইভাল ভিসা দেওয়াও বন্ধ। ভিসা নিতে হলে যেকোনো ব্যক্তিকে স্বাস্থ্য সনদ নিয়ে আসতে হবে। এ ধরণের নির্দেশনাও আছে।’
হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সাজ্জাদ শাহরিয়ার সারাবাংলাকে বলেন, ‘বিমানবন্দরে যারা আসছেন তাদের সবার স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়েছে। এরপরে সবাইকে হোম কোয়ারেন্টাইন বা কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হচ্ছে।’
চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক উইং কমান্ডার সারওয়ার ই জামান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের নয়টি রুটে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চলাচল করে। তবে সেটি খুব দ্রুতই বন্ধ হতে যাচ্ছে। কোয়ারেনটাইনের বিষয়ে আপনাকে আমাদের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলতে হবে।’
চট্টগ্রামের শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. এ জে ড এ শরীফ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের এখানে যারা আসছে তাদের সবার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছি। এরপরে হোম কোয়ারেনটাইনে পাঠাচ্ছি। কাউকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেনটাইনে নেওয়ার বিষয়ে আমরা কোনো নির্দেশনা পাইনি। গত তিন দিন যাবত সবাইকে ট্র্যাকিং করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসন ও গোয়েন্দা বিভাগ থেকে এটা করা হচ্ছে। যারা হোম কোয়ারেনটাইনে আছে তাদের সকলের পেছনে তিন জন করে ব্যক্তি কাজ করছে ফলোআপে। আর ফৌজদারহাটে আমাদের যে নির্ধারিত জায়গা আছে সেখানে নেওয়ার জন্য সার্বক্ষণিক অ্যাম্বুলেন্স রেডি আছে। রানওয়েতে চারজন চিকিৎসকসহ অ্যাম্বুলেন্স থাকছে। কারও জ্বর পাওয়া গেলে তাকে সেখানে নিয়ে যাওয়া হবে।’
সিলেট জেলা সিভিল সার্জন কর্মকর্তা ডা. প্রেমানন্দ মণ্ডল সারাবাংলাকে বলেন, ‘দেশের বাইরে থেকে আসা সবাইকে হোম কোয়ারেনটাইনে থাকার নির্দেশনা দেওয়া আছে। এ ক্ষেত্রে হেলথ চেকআপ করে সবাইকে একটা হেলথ কার্ড দিচ্ছি। সেখানে পরিষ্কারভাবে হোম কোয়ারেনটাইনে থাকার বিষয়টি লেখা আছে। তারপরও আমরা খোঁজ-খবর নিয়ে রাখছি।’
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের বর্তমান সিনিয়র সচিব মহিবুল হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের আসলে মন্ত্রণালয় থেকে নির্দেশনা দেওয়া আছে ফ্লাইট বন্ধের বিষয়ে। কিন্তু আরব আমিরাতের দুবাই বিমানবন্দর, কাতারের দোহা বিমানবন্দরে দেখা যাচ্ছে তারা কোনো বাংলাদেশিকে এলাউ করবে না। ওদের দেশের কোনো নাগরিককে দেশের বাইরে যেতে দিচ্ছে না। অর্থাৎ আমাদের দেশের কেউ সেখানে যাচ্ছে না, ওদের দেশের কেউ আমাদের এখানে আসছে না। কিন্তু এরা যে অনৈতিক কাজ করেছে তা হলো, পৃথিবীর অন্যান্য দেশের যাত্রীকে ওদের দেশের বিমানবন্দর হয়ে আমাদের দেশে আসতে দিচ্ছে। আমরা এটা আগেও বলেছি। এগুলো আমরা বন্ধ করে দিচ্ছি। এটা কার্যকরী হওয়ার জন্য ২১ মার্চ থেকে আমরা ওদের ২৪ ঘণ্টা সময় দিচ্ছি। এরপরেই এটা কার্যকর হবে। ২২ তারিখ ১২টা ১ মিনিট থেকে এটা কার্যকর হবে। তখন কাতার এয়ারওয়েজ, অ্যামিরেটস, টার্কিশ এয়ারওয়েজ এমন কোনো ফ্লাইট আর আসবে না। অর্থাৎ ঢাকা ও চট্টগ্রামে কোনো ফ্লাইট আসবে না। যুক্তরাজ্য থেকে ফ্লাইট বন্ধের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সেটা নিয়েও বৈঠক হবে।’
এ বিষয়ে ওসি ইমিগ্রেশন ও এসবি ইমিগ্রেশনকে ফোন করা হলেও তারা ফোন ধরেননি। বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলীকে তার ব্যক্তিগত মোবাইলে নম্বরে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।