করোনা সতর্কতায় বন্ধ হচ্ছে আবাসিক হোটেল
২২ মার্চ ২০২০ ০৮:০৫
ঢাকা: করোনাভাইরাস প্রতিরোধে এরই মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের জনসমাগম এড়িয়ে চলার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সব ধরনের সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও না করতে বলা হয়েছে। বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে রেস্তোরাঁ বার, ক্লাব বার। করোনা পরিস্থিতিতে এবার রাজধানীর আবাসিক হোটেলগুলোও বন্ধ হতে যাচ্ছে। করোনাভাইরাস ঘিরে আতঙ্ক ও সপ্তাহখানেক ধরে আবাসিক হোটেলগুলোতে অতিথি না আসায় কয়েকটি হোটেল বন্ধই হয়ে গেছে। চলমান পরিস্থিতিতে সার্বিকভাবেই হোটেল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন হোটেল মালিকরাই।
শুক্রবার (২০ মার্চ) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বেশকিছু আবাসিক হোটেল ঘুরে এমন তথ্যই পাওয়া গেল। এসময় বেশকিছু হোটেল বন্ধও দেখতে পাওয়া যা।
গুলিস্তানের বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে ইম্পেরিয়াল হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট গত বৃহস্পতিবার (১৯ মার্চ) বিকেলে বন্ধ করে দেয় হোটেল কর্তৃপক্ষ। হোটেলটির নোটিশ বোর্ডে জেনারেল ম্যানেজার নুরুল ইসলামের সই করা নোটিশে বলা হয়, করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ইম্পেরিয়াল হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্ট বন্ধ থাকবে।
জানতে চাইলে জেনারেল ম্যানেজার নুরুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে গ্রাহক পাচ্ছি না। তাছাড়া করোনাভাইরাস প্রতিরোধের বিষয়টিও আছে। তাই হোটেল বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে মালিক কর্তৃপক্ষ। মালিকদের নির্দেশেই হোটেলটিকে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
নুরুল ইসলাম জানান, আপাতত ১ এপ্রিল পর্যন্ত হোটেলটি বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। পরিস্থিতি বিবেচনায় এর মেয়াদ বাড়তেও পারে।
দৈনিক বাংলা মোড়ে অবস্থিত হোটেল হাসান ইন্টারন্যাশনাল। গত চার দিনে এই হোটেল অতিথি এসেছেন মাত্র সাত জন। শুক্রবার কোনো অতিথি আসেননি হোটেলটিতে। নেই আগাম বুকিংও। আনুষ্ঠানিক ঘোষণা না এলেও তাই এই হোটেলটিও বন্ধ হতে যাচ্ছে বলে বলে জানালেন ম্যানেজার আরাফাত সিদ্দিক।
ফকিরাপুল এলাকার ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ১০০ হোটেলও ‘গেস্ট’ সংকটে ভুগছে। বেশিরভাগ হোটেলের ম্যানেজার জানান, করোনাভাইরাস আতঙ্কে আগামী কয়েকদিন হোটেলগুলো বন্ধ রাখা হতে পারে।
অন্যদিকে গুলশান-বনানীর হোটেলগুলোর অবস্থাও একই। বিশেষ করে যেসব হোটেলে বারের অনুমতি রয়েছে, ওইসব হোটেল তো বৃহস্পতিবার (১৯ মার্চ) থেকেই মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের পক্ষ থেকে নির্দেশনা জারি করে বন্ধ করা হয়েছে।
রাজধানীর ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, কল্যাণপুর, মিরপুর, এলিফ্যান্ট রোড, ধানমন্ডি ও মগবাজার এলাকার আবাসিক হোটেলগুলোতেও দেখা গেছে একই অবস্থা।
ফার্মগেট আবাসিক হোটেলের ম্যানেজার আতিকুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, যেখানে আমরা গেস্ট ফেরত পাঠাই, সেখানে গত কয়েকদিন থেকে আমরা গেস্টই পাচ্ছি না। আশপাশের সব হোটেলের একই অবস্থা তৈরি হয়েছে।
কারণ হিসেবে আতিকুল বলেন, করোনা আতঙ্কে গাড়ি চলাচল বন্ধ হচ্ছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়েছে, কেউ বাসার বাইরে আসতে চাইছে না, ঢাকায় লোকজন আসা বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে হোটেলগুলোতে কোনো বোর্ডার পাওয়া যাচ্ছে না। আগামী দুয়েকদিনের মধ্যেই হোটেল বন্ধের ঘোষণা আসতে পারে।
জানতে চাইলে পল্টন থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মো. সেন্টু মিয়া সারাবাংলাকে বলেন, আবাসিক হোটেলগুলো বন্ধ থাকবে— এমন শুনেছি। তবে এখনো ঘোষণা আসেনি। আর পুলিশের পক্ষ থেকেও এমন কোনো ঘোষণা দেওয়া হয়নি। ডিএমপির পক্ষ থেকে কোনো ঘোষণা এলে সঙ্গে সঙ্গে হোটেলগুলো বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরে আজম মিয়া বলেন, বনানী এলাকার সব হোটেলগু নজরদারির মধ্যে আনা হয়েছে। এরই মধ্যে যেসব হোটেলে বার ছিল, সেগুলো বন্ধ করা হয়েছে। কেউ যেন খুলতে না পারে, সেজন্য নজরদারি করা হচ্ছে। তাছাড়া অন্যান্য আবাসিক হোটেলেও যেন কোনো ধরনের গ্যাদারিং না হয়, তা নিশ্চিত করতে পুলিশ কাজ করছে।