‘বাংলাদেশে এখনো কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হয়নি, হলে জানাব’
২৩ মার্চ ২০২০ ০২:৪৫
ঢাকা: বৈশ্বিক মহামারিতে রূপ নেওয়া নভেল করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ২৭ জন, মারা গেছেন দু’জন। তবে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে এই ভাইরাসটি ‘কমিউনিটি ট্রান্সমিশন’ পর্যায়ে পৌঁছেনি বলে জানিয়েছেন রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা।
তিনি জানিয়েছেন, এ বিষয়টি নিয়ে তারা বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করছেন। কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হলে তারাই জানিয়ে দেবেন।
রোববার (২২ মার্চ) করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত নিয়মিত ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
আইইডিসিআর পরিচালক অধ্যাপক ফ্লোরা বলেন, মিরপুর টোলারবাগে যে রোগীর কথা বলা হচ্ছে, তার ক্ষেত্রে আমরা বিদেশ থেকে আসা দু’জনের সংস্পর্শে আসার তথ্য পেয়েছি। আমরা তাদের নমুনাও সংগ্রহ করেছি। তাদের মাঝে সংক্রমণ ছিল কি না, আমরা সেটিও দেখার চেষ্টা করছি। আবার ওই ব্যক্তি থেকে করোনাভাইরাস তাদের মধ্যে সংক্রমিত হয়েছে কি না, সেটিও দেখছি। আমরা কনটাক্ট ট্রেসিং করছি। প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমরা ‘সোর্স অব ইনফেকশন’ (সংক্রমণের উৎস) শনাক্ত করার চেষ্টা করি। এ ক্ষেত্রেও সেই চেষ্টা করছি।
ডা. ফ্লোরা আরও বলেন, কমিউনিটি ট্রান্সমিশন আমরা তখনই বলতে পারি যখন ‘সোর্স অব ইনফেকশন’ আমরা শনাক্ত করতে পারি না। এই ‘সোর্স অব ইনফেকশন’টা শনাক্ত করতে পারলে পরবর্তী সংক্রমণ প্রতিরোধ করা যাবে। সেজন্য আমরা ১৪ দিন পেছনে গিয়ে তাদের সব তথ্য সংগ্রহ করছি। এমনকি তারা যেখানে যেখানে গেছেন, সেখানকার সিসিটিভি ফুটেজ পর্যন্ত আমরা সংগ্রহ করেছি। অবজার্ভ করছি, সেখানে সংক্রমণের উৎস হতে পারেন, এমন কেউ আছেন কি না। এখন আমাদের সব তথ্য সংগ্রহ শেষ হয়নি। আমরা তথ্য যখন পেয়ে যাব, তখন যদি কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হয় সেটাও আপনাদের জানাব। আর যদি তা না হয়, সেটাও আপনাদের জানাব।
তথ্য সংগ্রহ করতে কত সময় লাগতে পারে— এ বিষয়ে আইইডিসিআর পরিচালক বলেন, আমরা চেষ্টা করছি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সব তথ্য সংগ্রহ করার জন্য। কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় যাকে আমরা আইডেন্টিফাই করলাম, তাকে পাওয়া যাচ্ছে না। একেকজনের ক্ষেত্রে দেখা যায় শতাধিক কন্টাক্ট থাকে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে মিসিং কন্টাক্ট থাকে। এ বিষয়ে স্পেসিফিক টাইম বলাটা খুব মুশকিল। তবে যতক্ষণ পর্যন্ত তথ্য পাওয়া যাবে, আমরা তথ্য নিতে থাকব। যখন দেখব এটা রেডি হয়ে গেছে, আমরা তখন জানাব।
কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের বিষয়টি অস্বীকার করা হচ্ছে না দাবি করে অধ্যাপক ফ্লোরা বলেন, এখন পর্যন্ত আমাদের দেশে লোকাল ট্রান্সমিশন হয়েছে। এর পরবর্তী পর্যায় হলো কমিউনিটি ট্রান্সমিশন। যতক্ষণ না আমরা নিশ্চিত হব, ততক্ষণ আমরা এটা বলব না। যথাযথ প্রমাণ ছাড়া এ বিষয়ে বলা যাবে না। কারণ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কাছেও আমাদের প্রতিবেদন দিতে হবে। তথ্য-প্রমাণ ছাড়া তাদের প্রতিবেদন দিতে পারব না। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আমাদের কাছে জানতে চাইবে, আপনারা কী পরিমাণ অনুসন্ধান করেছেন যে বলে দিলেন কমিউনিটি ট্রান্সমিশন? তাই কমিউনিটি ট্রান্সমিশন ঘোষণার আগে আমাদের নিশ্চিত হতে হবে যে আমরা ‘সোর্স অব ইনফেকশন’ পাইনি।
মৃত ব্যক্তির পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, তার নমুনা আইইডিসিআর পরীক্ষা করতে চায়নি— এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সংস্থাটির পরিচালক বলেন, এখানে স্বীকার অস্বীকার করার কোনো বিষয় নেই। এখানে এভিডেন্স যা বলবে, আমরা তাই বলব। আমরা কী করেছি না করেছি, তার চেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে সেদিনই তার নমুনা আনা হয়েছে, পরীক্ষা করা হয়েছে এবং তিনি আমাদেরই পর্যবেক্ষণে ছিলেন। তিনি মারা যাওয়ার পর আমাদের একটি টিম তার পাশে থেকে সৎকার কাজে সহযোগিতা করেছে। আমরা কাউকে ফিরিয়ে দিচ্ছি না।
তিনি বলেন, আগে যাদের লক্ষণ-উপসর্গ দেখে এবং বিদেশ থেকে আসা দেখে আমরা লক্ষণ-উপসর্গ যাচাই করতাম, এখন আমরা সেটা করছি না। বিদেশ থেকে আসা দেখেই আমরা নমুনা সংগ্রহ করছি না। আমাদের কাছে যাদের ‘স্ট্রংলি সাসপেক্টেড’ মনে হয়, তখনই আমরা তার নমুনা সংগ্রহ করি। বিভিন্ন বাসা ও বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এজন্যেই গত ২৪ ঘণ্টায় আমরা ৬৫ জনের নমুনা সংগ্রহ করেছি, যেটা একসময় দুই থেকে তিন জন ছিল।
সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক ফ্লোরা জানান, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত যে দু’জন মারা গেছেন, তারা আগে থেকেই অন্য রোগে আক্রান্ত ছিলেন। অন্য রোগের চিকিৎসা নিতে গিয়েই তারা হাসপাতালে গিয়েছিলেন। সঙ্গে শ্বাসকষ্টও ছিল। জ্বর ছিল। সেসব লক্ষণের কারণে তাদের পরীক্ষা করানো হয় এবং পরীক্ষায় তারা পজিটিভ প্রমাণিত হন।
অধ্যাপক ডা. মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা আইইডিসিআর কমিউনিটি ট্রান্সমিশন করোনাভাইরাস কোভিড-১৯ লোকাল ট্রান্সমিশন