Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির মামলা: আরসিবিসির আবেদন খারিজ


২৩ মার্চ ২০২০ ২০:৩৫

ঢাকা: বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়ের করা মামলার বিপরীতে বিবাদীদের আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন যুক্তরাস্ট্রের নিউইয়র্কের সাউদান ডিস্ট্রিক কোর্ট। ফিলিপাইনের রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং করপোরেশনসহ (আরসিবিসি) কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এই মামলার বিবাদী ছিল।

তাদের আবেদন খারিজ করে দিয়ে নিউইয়র্কের সাউদান ডিস্ট্রিক কোর্ট বলেছেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি নিউইয়র্কে অবস্থিত মার্কিন প্রতিষ্ঠান ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউইয়র্ক থেকে হয়েছিল। এটি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত যে জালিয়াতির মাধ্যমে পেমেন্ট অর্ডার, বিভিন্ন করেসপন্ডেন্ট অ্যাকাউন্টে চুরি করা অর্থের লেনদেন এবং এসব অ্যাকাউন্ট থেকে দেশের বাইরে অর্থ পাঠানো— সবই নিউইয়র্কে সংঘটিত হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক ও সহকারী মুখপাত্র জি এম আবুল কালাম আজাদের পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

অন্যদিকে রিজার্ভ চুরি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আদালতে (ইউএস ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট ফর দ্য সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্ট অব নিউইয়র্ক) বাংলাদেশ ব্যাংক যে মামলাটি করেছিল, তা খারিজ হয়ে গেছে বলে ফিলিপাইনের পুঁজিবাজারে তথ্য প্রকাশ করেছে ব্লুমবেরি রিসোর্ট করপোরেশন। এই প্রতিষ্ঠানটি মামলার অন্যতম বিবাদী।

ফিলিপাইনের ইনকোয়েরার ও সিএনএন ফিলিপাইনের অনলাইনে সংস্করণের খবরে বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠানটি ক্যাসিনো পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান ব্লুমবেরি রিসোর্ট অ্যান্ড হোটেলস ইনকরপোরেশনের মালিক। তারা ফিলিপাইনের শেয়ারবাজারে দেওয়া ঘোষণায় গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট আদালতের দেওয়া মতামত ও রায় উদ্ধৃত করে বলেছে, বাদীপক্ষ সংশ্লিষ্ট আইনের অধীনে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। পাশাপাশি আদালত আর মামলাটি শুনবেন না বলেও ঘোষণায় উল্লেখ করে ব্লুমবেরি।

বিজ্ঞাপন

তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আরসিবিসি, সোলায়ার রিসোর্ট ও ক্যাসিনো, মাইডাস রিসোর্ট ও ক্যাসিনো এবং অন্যদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়ের করা মামলার বিপরীতে বিবাদীদের আবেদন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট খারিজ করেছে।

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মামলার বিষয়বস্তু সংশ্লিষ্ট কোর্টের এখতিয়ার বহির্ভূত মর্মে আরসিবিসি ও অন্যরা যে আবেদন করেছিল, তা ফোরাম নন-কনভিনিয়েন্স ডকট্রিন (forum non conveniens doctrine) অনুযায়ী আদালত খারিজ করে দিয়েছেন। আদালতের আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে, এ চুরি নিউইয়র্কে  অবস্থিত মার্কিন প্রতিষ্ঠান ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক অব নিউ ইয়র্ক থেকে হয়েছিল এবং সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত যে জালিয়াতির মাধ্যমে পেমেন্ট অর্ডার, বিভিন্ন করেসপন্ডেন্ট অ্যাকাউন্টে চুরি করা অর্থের লেনদেন এবং এসব অ্যাকাউন্ট থেকে দেশের বাইরে অর্থ পাঠানো— সবই নিউইয়র্কে সংঘটিত হয়েছে।

আদালতের রায়ে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ফেডারেল রিজার্ভে ব্যাংক অব নিউইয়র্কের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট তার ঘোষণায় দৃঢ়ভাবে উল্লেখ করেছেন, ফেডারেল রিজার্ভ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যে একটি আনুষ্ঠানিক চুক্তি রয়েছে যাতে ফেডারেল রিজার্ভ বাংলাদেশ ব্যাংককে তার মামলা-মোকদ্দমার ক্ষেত্রে কারিগরি সহায়তা দেবে। এসব তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট বলেছেন, জনস্বার্থের দিকগুলো বিবেচনায় নিউইয়র্ক এ মামলা পরিচালনার জন্য যথাযথ ফোরাম, যেখানে ডিস্ট্রিক্টের একটি ফেডারেল প্রতিষ্ঠান সাইবার হামলার শিকার হয়েছে।

আদালত বাংলাদেশ ব্যাংকের আওতায় আরসিবিসি ব্যাংক ও জড়িত অন্যান্যদের বিরুদ্ধে করা অভিযোগটি টেকনিক্যাল বিষয় বিবেচনায় ফেডারেল আদালতে বিচারের জন্য গ্রহণ করেননি। অর্থাৎ এ সিদ্ধান্তের ফলে আরসিবিসি, সোলায়ার, মাইডাস ও অন্য বিবাদীদের বিরুদ্ধে প্রতারণা, চুরি, রূপান্তরের ষড়যন্ত্র এবং অন্যান্য অভিযোগগুলোর বিষয়ে সাউদার্ন ডিস্ট্রিক্ট কোর্টের (এসডিএনওয়াই) পরিবর্তে নিউইয়র্ক স্টেট আদালতে মামলা দায়ের করা যাবে। এক্ষেত্রে মামলাটি নিউইয়র্কের আদালতের বিচারিক এখতিয়ারভুক্ত প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক আরসিবিসি ও অন্য বিবাদীদের থেকে ক্ষয়ক্ষতি আদায়ের জন্য পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে সক্ষম হবে।

২০১৬ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি করে নেয় হ্যাকাররা। এ ঘটনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের তৎকালীন গভর্নর ড. আতিউর রহমানকে পদত্যাগ করতে হয়। দুই ডেপুটি গভর্নরকেও সরিয়ে দেয় সরকার। ঘটনা তদন্তে সাবেক গভর্নর মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনকে প্রধান করে কমিটি করে সরকার। কমিটি প্রতিবেদন জমা দিলেও তা প্রকাশ করা হয়নি।

যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক থেকে সুইফট কোডের মাধ্যমে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এই অর্থ চুরি করা হয়। চুরি হওয়া অর্থের মধ্যে শ্রীলঙ্কায় ২ কোটি ডলার এবং বাকি ৮ কোটি ১০ লাখ ডলার প্রথমে ফিলিপাইনের রাজধানী ম্যানিলায় অবস্থিত রিজাল কমার্শিয়াল ব্যাংকিং কর্পোরেশনের (আরসিবিসি) একটি শাখায় পাঠানো হয়। পরে এই অর্থ আরসিবিসি থেকে চলে যায় ফিলিপাইনের জুয়ার আসরে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে ১০ কোটি ১০ লাখ ডলার চুরি হওয়ার ১০ মাসের মধ্যে ৩ কোটি ৪৫ লাখ ডলার ফেরত আনা হয়। এর মধ্যে রিজার্ভ চুরির ঘটনা প্রকাশ পাওয়ার আগেই ২০১৬ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি শ্রীলঙ্কা থেকে ২ কোটি ডলার ফেরত আনা হয়। একই বছরের ১২ নভেম্বর ফিলিপাইন থেকে আরও ১ কোটি ৪৫ লাখ ডলার ফেরত আনা হয়েছে। পরবর্তী ২ বছরের বেশি সময়ে আর কোনো টাকা উদ্ধার করা যায়নি। ফলে ফিলিপাইনে থাকা অবশিষ্ট ৬ কোটি ৬৪ লাখ ডলার (৫৫৭ কোটি টাকা) ফেরত আনা সম্ভব হয়নি। পরে ২০১৯ সালের ৩১ জানুয়ারি ফিলিপাইনের আরসিবিসিসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে  মামলাটি দায়ের করা হয়।

নিউইয়র্কের সাউদান ডিস্ট্রিক কোর্ট বাংলাদেশ ব্যাংক বিবাদীদের আবেদন খারিজ যুক্তরাষ্ট্রের আদালতৎ রিজার্ভ চুরি

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর