Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মাটি খুঁড়তেই বেরিয়ে এলো ১২শ বছরের ইতিহাস


২৪ মার্চ ২০২০ ০৮:৩০

মুন্সীগঞ্জ: মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার নাটেশ্বর। ২০১৩ সালে মাটি খুঁড়তেই এখানে পাওয়া যায় প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। এরপর গত ছয় বছর ধরে চলছে খনন। তাতে বেরিয়ে এসেছে বৌদ্ধ মন্দির, অষ্টকোণাকৃতি স্তূপ, ইটের তৈরি রাস্তা, ইটের তৈরি নালা বা ড্রেনের মতো নানা নিদর্শন। প্রায় সাত বছর খননে এবারে সেই নাটেশ্বরেই বেরিয়ে এসেছে ১২শ বছর আগের এক নিদর্শন। পিরামিড আকৃতির এত বড় নান্দনিক এমন স্তূপের নজির এই অঞ্চলে বিরল। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাঁচী, ভারহুত, অমরাবতী, সারনাথের মহাস্তূপগুলোর সঙ্গে তুলনীয় নাটেশ্বরের নতুন আবিষ্কৃত এই স্তূপটি।

বিজ্ঞাপন

অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে বিক্রমপুর অঞ্চলে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন ও গবেষণা প্রকল্প পরিচালিত হয়ে আসছে ২০১৩ সাল থেকে। ২০১৯ সাল পর্যন্ত এই দেউল খননের মাধ্যমে উন্মোচিত হয়েছে ছয় হাজার বর্গমিটারের বেশি এলাকা। বৌদ্ধ মন্দির, অষ্টকোণ আকৃতির স্তূপ, ইটের রাস্তা-নালা— কী ছিল না এই এলাকায়। তবে গত কয়েকদিনে ৪৪ ফুট উচ্চতা আর প্রায় দুই হাজার বর্গমিটার আয়তনের পিরামিড আকৃতির যে স্তূপটি বেরিয়ে এসেছে, তার সঙ্গে তুলনীয় নয় এই দেউলের অন্য কিছুই।

বিজ্ঞাপন

খননকাজে নিযুক্তদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত দুই বছরে এ স্থাপত্যটির উত্তর ও পূর্ব বাহুর অংশবিশেষ উন্মোচিত হয়েছিল। তবে এবার ২০১৯-২০ অর্থবছরের খননে পিরামিড আকৃতির স্তূপটির দক্ষিণের প্রায় পুরো বাহুটি উন্মোচিত হয়েছে। তাতে করেই মূলত মূল স্তূপটি পরিস্ফূট হয়েছে। নতুন বেরিয়ে আসা এই অংশটি ৪৪ মিটার দীর্ঘ। এর দেয়াল ৬৪ সেন্টিমিটার উঁচু, প্রস্থ প্রায় তিন মিটার। ঢালু অংশের কোনো কোনো স্থান তিন মিটার পর্যন্ত টিকে রয়েছে। দেয়ালের বাইরের অংশটি চারটি প্যানেলে বিভক্ত। তাতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে নকশা। কেন্দ্র অংশটি মাটি দিয়ে ভরাট করা হয়েছে। এর ফলে স্তূপটি নিরেট আকার ধারণ করেছে। আবিষ্কৃত পিরামিড আকৃতির স্তূপটির ‍উচ্চতা ৪৪ দশমিক ৬৪ মিটার।

অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, পিরামিড আকৃতির স্তূপটির সময়কাল জানার জন্য মার্কিন একটি ল্যাবে নমুনা পাঠানো হয়েছিল। কার্বন-১৪ পরীক্ষার মাধ্যমে জানা যায়, স্তূপটি ৭৮০ থেকে ৯৫০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে কোনো এক সময় নির্মিত। অর্থাৎ এটি ন্যূনতম ১২শ বছরের পুরনো। এরই মধ্যে মেদির চারপাশে ইট বিছানো প্রদক্ষিণ পথের চিহ্নও আবিষ্কৃত হয়েছে। প্রদক্ষিণ পথটি এখনো প্রায় আড়াই মিটার টিকে আছে।

বৌদ্ধ ধর্মে স্তূপ একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপত্য। এ ধরনের স্তূপ মুখ্যত সমাধি। তবে এটি বৌদ্ধ ধর্ম, দর্শন ও সংস্কৃতিকেও প্রতিনিধিত্ব করে। গৌতম বুদ্ধ ও তার প্রবর্তিত বৌদ্ধ ধর্মকেও প্রতীকায়ন করা হয় এসব স্তূপের মাধ্যমে। এর মূল অংশটি সাধারণত গম্বুজাকৃতি হয়। কিন্তু  নাটেশ্বরের স্তূপটি কিছুটা ব্যতিক্রমী, দুষ্প্রাপ্য পিরামিড আকৃতির। এরকম স্তূপ বাংলাদেশে এর আগে পাওয়া যায়নি বলেই জানালেন সংশ্লিষ্টরা।

বিক্রমপুর অঞ্চলে প্রত্নতাত্ত্বিক খনন ও গবেষণা পরিচালক ড. সুফি মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে কথা হয়। তিনি সারাবাংলাকে জানান, সম্প্রতিক প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণায় আবিষ্কৃত বিশাল আকৃতির পিরামিডটি একটি অনন্য নিদর্শন। এই অঞ্চলে এ ধরনের স্থাপত্যের নজির দেখা যায় না। তাই এই স্তূপ নিয়ে যেমন গবেষণা প্রয়োজন, তেমনি প্রয়োজন এই অঞ্চলটি আরও ভালোভাবে খনন করা। কারণ এর মাধ্যমে আরও বিরল ইতিহাস বেরিয়ে আসতে পারে।

সুফি মোস্তাফিজুর আরও বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে খনন ও গবেষণা কাজে যে অর্থ পাওয়া যাচ্ছে, তা পর্যাপ্ত নয়। সহযোগিতার পরিমাণ বাড়ানো হলো খনন কাজ আরও বেগবান হবে। তাছাড়া স্তূপগুলো সংরক্ষণে উদ্যোগ নেওয়াটাও জরুরি। কারণ এটি বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হবে।

অগ্রসর বিক্রমপুর ফাউন্ডেশনের সভাপতি ড. নূহ-উল-আলম লেনিন বলেন, এ প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারে সরকারের অর্থ সহযোগিতা রয়েছে। তবে নাটেশ্বর আবিষ্কৃত প্রাচীন বৌদ্ধ নগরীর অংশবিশেষ সংরক্ষণ করা জন্য আরও সহযোগিতা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ বিত্তশালী ব্যক্তিদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।

১২০০ বছর ইতিহাস নাটেশ্বর বৌদ্ধ মন্দির

বিজ্ঞাপন

খুলনায় যুবকের পেটে মিলল ইয়াবা
২২ নভেম্বর ২০২৪ ১২:০২

আরো

সম্পর্কিত খবর