খাদ্যে ভর্তুকির ঘোষণা আসতে পারে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে
২৪ মার্চ ২০২০ ১০:১০
ঢাকা: আগামী বুধবার (২৫ মার্চ) জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। চলমান পরিস্থিতিতে করোনাভাইরাস মোকাবিলা ও স্বাস্থ্যের নিরাপত্তায় নাগরিকদের করণীয় প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাবে। তারপরেই প্রধান্য পাবে খাদ্য সংশ্লিষ্ট বিষয়, যেখানে রাজধানীসহ শহুরে গরীবদের জন্য খাদ্যে ভর্তুকির ঘোষণাও আসতে পারে।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে, বুধবারের ভাষণে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবিলায় করণীয় সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দেবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই ভাইরাসজনিত বিষয়গুলোই প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাবে। নাগরিকরা তাদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তায় কী করবেন আর কী করবেন না এবং সরকার নাগরিকদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তায় কী পদক্ষেপ নিচ্ছে, সেগুলো উঠে আসবে প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে।
সূত্রগুলো জানাচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে রাজধানীসহ শহুরে গরীবদের জন্য খাদ্যে ভর্তুকির ঘোষণা আসতে পারে। কেননা করোনার আঘাতে দেশের অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এই ধাক্কায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন শহুরে গরীব শ্রেণির নাগরিকরা। তাই অর্থনীতির চাকা ঠিক রাখতে এই শ্রেণির মানুষের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা থাকতে পারে। আর তার অংশ হিসেবেই উঠে আসতে পারে এই শ্রেণির নাগরিকদের জন্য খাদ্যে ভর্তুকি দেওয়ার ঘোষণার কথা।
করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেশে ছড়িয়ে পড়ার আগে থেকেই অর্থনীতিবিদ ও সংশ্লিষ্টরা বলছিলেন, এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে অর্থনীতিতে। আর দেশে ছড়িয়ে পড়লে এটি বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষদের সংকটে ফেলবে।
গত শনিবার (২১ মার্চ) ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে সিপিডির পক্ষ থেকে সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, ‘যেসব দেশে আমদানি-রফতানি করা হয় তার সবগুলোই করোনায় আক্রান্ত। ফলে সামগ্রিকভাবে বহির্খাতে যে পারফরম্যান্স, তাতে সামনের দিনগুলোতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তৈরি পোশাক শিল্পে এখনই নেতিবাচক প্রভাব দেখছি। এটা সামনে আরও নেতিবাচক হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। রেমিট্যান্স ২০১৯ সালে ভালো ছিল। কিন্তু আগামীতে রেমিট্যান্সেও নেতিবাচক প্রভাবের সম্ভাবনা রয়েছে।’
ড. ফাহমিদা খাতুন আরও বলেন, ‘সরবরাহের সমস্যা দেখা দিয়েছে। সাপ্লাই চেইনে একটা নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। আমরা বিভিন্ন ধরনের পণ্যের দামে মোটামুটিভাবে কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী প্রভাব দেখছি। উৎপাদন ও আমদানির ক্ষেত্রেও সরবরাহজনিত সমস্যা দেখা যাচ্ছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা বেশি সমস্যায় পড়েছেন। তাদের প্রতি সরকারের বিশেষ নজর দিতে হবে। এছাড়া নিম্ন আয়ের মানুষদের প্রতিও সরকারকে দায়িত্বশীল হতে হবে।’
এদিকে, বিশ্বব্যাংকের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে চরম দারিদ্র হারের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে কিন্তু শহরের দারিদ্র্য বাড়ছে। ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০১০ সালের তুলনায় ২০১৬ সালে শহরে দরিদ্রের সংখ্যা বেশি ছিল।
করোনাভাইরাস নিয়ে এই সংকটের সময় তাই নিম্ন আয়ের এই মানুষগুলোর কথাই বারবার ঘুরে ফিরে আসছে। সরকারেরও যে বিষয়টি নজরে রয়েছে, সোমবার (২৩ মার্চ) ব্রিফিংয়ে ২৬ মার্চ থেকে ১০ দিনের জন্য সাধারণ ছুটি ঘোষণার সময়ও তার প্রতিফলন দেখা গেছে। ব্রিফিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব সরকার তথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে যে ১০টি নির্দেশনা তুলে ধরেন তার একাধিক নির্দেশনায় রয়েছে নিম্ন আয়ের মানুষের প্রসঙ্গ।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের কারণে নিম্ন আয়ের ব্যক্তিরা স্বাভাবিক জীবনযাপনে সক্ষম না হলে তারা সরকারের ‘ঘরে ফেরা কর্মসূচি’র আওতায় নিজ নিজ এলাকায় গিয়ে থাকতে পারবেন। জেলা প্রশাসকরা তাদের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন। ভাসানচরে সরকারের পক্ষ থেকে আবাসন ও জীবিকার যে ব্যবস্থা করা হয়েছে, সে সুযোগও উন্মুক্ত করা হয়েছে নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্য। এছাড়া দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আয় ও অন্নসংস্থানে অসুবিধা হলে জেলা প্রশাসকদের খাদ্য ও আর্থিক সহায়তা দেওয়ার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে।
এর আগে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকেও বিভিন্ন ধরনের সহায়তার কথা বলা হয়েছে। সোমবারই সচিবালয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালিক এক ব্রিফিংয়ে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সবাইকে কোয়ারেনটাইন মেনে চলা এবং প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের না হওয়ার নির্দেশনা অনুসরণ করার আহ্বান জানান। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সরকার প্রয়োজন হলে খাদ্য সহায়তাও দেবে বলে জানান তিনি।
সরকারের সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও সোমবার সচিবালয়ে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি বিশ্বাস রাখুন এবং সরকারের প্রতি আস্থা রাখুন। করোনা প্রতিরোধে যা যা প্রয়োজন, সরকার সবকিছু করবে। এ বিষয়ে ২৫ মার্চ জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে তিনি সবার করণীয় সম্পর্কে দিকনির্দেশনা দেবেন।’