ঢাকা: করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে এখনই পুরো দেশ লকডাউন করা দরকার বলে মনে করেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না।
মঙ্গলবার (২৪ মার্চ) অনলাইন প্রেস কনফারেন্সে এ মত দেন তিনি। পাশাপাশি করোনাভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবিলায় কিছু পরামর্শ তুলে ধরেন তিনি।
মান্না বলেন, ‘জানুয়ারি থেকে এই পর্যন্ত সাড়ে ছয় লাখ মানুষ বিদেশ থেকে এসেছে। এর মধ্যে মার্চ মাসের প্রথম ২০ দিনে এসেছে ২ লাখ ৯৩ হাজার। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক এসেছেন করোনা আক্রান্ত দেশগুলো থেকে। গতকাল পর্যন্ত কোয়ারেন্টাইনে গেছেন মাত্র ১৭ হাজার ৭৯০ জন। যারা কোয়ারেন্টাইনে আছেন, তারাও সঠিকভাবে কোয়ারেনটাইন মানছেন না।’
তিনি বলেন, ‘বিদেশ থেকে দেশে আসার সময় সঠিক ঠিকানা দেননি অনেকেই। ফলে পুলিশ তাদের খুঁজে পাচ্ছে না। এই মানুষগুলো বিধিনিষেধ না মেনে ঘোরাঘুরি করে মানুষের মধ্যে করোনা ছড়িয়ে দিয়েছে। ফলে পরিস্থিতি একটা ভয়াবহ পর্যায়ে চলে গেছে— তা বলাই যায়।’
‘সরকার ২৬ মার্চ চার এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে। অনুমিতভাবেই বহু লোক বাস, ট্রেনে চড়ে ঢাকা ছেড়ে যাবে। এ ঘটনা খুব খারাপভাবেই করোনার বিস্তৃতি ঘটাবে। পরিস্থিতি বিবেচনা করে এখনই সারাদেশ লকডাউন করে দেওয়া উচিত। কেবল মাত্র লকডাউনই পারে মরণঘাতী এই করোনাভাইরাস বিস্তার রোধ করতে’— বলেন মাহমুদুর রহমান মান্না।
তিনি বলেন, ‘গতকাল পর্যন্ত ভারতের ১৯ রাজ্য ও ৮৫টি শহর লকডাউন করা হয়েছে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন ইরান এবং ইতালিতে করোনাভাইরাস এতো ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে কারণ, তারা সব কিছু দেড়িতে বুঝেছে, লকডাউন করেনি এবং ব্যবস্থা নেয়নি।’
মান্না বলেন, “হ্যাঁ, আমি এটা বুঝি, বাংলাদেশের মতো দেশে সর্বত্রই লকডাউন করলে সমাজে নিম্ন আয়ের যেসব মানুষ অনানুষ্ঠানিক খাতে শ্রমিক হিসেবে কর্মরত এবং দিন আনে দিন খাই’র মতো করে জীবনযাপন করে তারা বিপর্যয়ের মধ্যে পড়বে। যারা উবার চালান, তারা এরইমধ্যে প্রায় বিধ্বস্ত হয়ে গেছেন। অনেকেই আছেন, তাদেরকে প্রতি সপ্তায় কিস্তি শোধ করতে হয়। এখন তারা কী করবেন?”
তিনি বলেন, ‘দেশ লকডাউন করলে এরা যেকোনো মূল্যে ঘর থেকে বের হওয়ার চেষ্টা করবে। এদের ঘরে আটকে রাখা সম্ভব হবে না। ফলে তারা নানাভাবে করোনা ছড়িয়ে দেবেন। তাই লকডাউনের সময় এ মানুষগুলোর জন্য ন্যুনতম খাবারের ব্যবস্থা করলে এদের নিচিন্ত জীবন নিশ্চিত হবে এবং করোনাভাইরাস বিস্তাররোধে মুখ্য ভূমিকা পালন করবে।’
বেশ কয়েকটি দেশ ও রাজ্যের উদাহরণ টেনে মান্না বলেন, ‘লকডাউনের পর নাগরিকদের সমস্ত দায়িত্ব কীভাবে রাষ্ট্র গ্রহণ করেছে, সেটা চীন, ইতালি, কানাডা বা ইরান থেকে শিক্ষা নেওয়ার প্রয়োজন নেই। পাশের দেশে রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ থেকেই নেওয়া যাবে। মাত্র দুই জন করোনা রোগী শনাক্ত হবার পরই সেখানের মুখ্যমন্ত্র রাজ্য লকডাউন করে দিয়েছেন। ঘোষণা দিয়েছেন আট কোটি মানুষ বিনামূল্যে চাল পাবেন ছয় মাস।’
‘আরেক রাজ্য কেরালা তার সকল নাগরিককে বিনামূল্যে খাবার সরবারহের ঘোষণা দিয়েছে। এছাড়া নাগরিকদের জন্য ২০ হাজার কোটি রুপি অর্থনৈতিক প্যাকেজ ঘোষণা করেছে। এটা আমরা পারি না? এ রকম একটা প্যাকেজের কথা আমরা বলতে চাই’— বলেন মান্না।
তিনি বলেন, ‘করোনা নিয়ে এখন পর্যন্ত সরকারের লোকজন যেভাবে রাজনীতি করেছে, নিজেদের বক্তব্য উপস্থাপন করেছে— তার জবাব দেওয়ার মতো মনমানসিকতা আজ আর নেই। কারণ, আজ আমি রাজনীতি করতে আসিনি। একেবারেই মানবতার দিক বিবেচনা করে প্রেস কনফারেন্সে এসেছি।’
দেশ লকডাউনের পর সরকারের করণীয় সম্পর্কে পরামর্শ তুলে ধরে মান্না বলেন, ‘আগামী তিন মাস দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করা মানুষদের এবং কম আয়ের মানুষদের চাল-ডাল দিতে হবে। গার্মেন্ট মালিকদের সহজ শর্তে ঋণ দিতে হবে। এনজিওগুলোকে বলতে হবে দরিদ্র্য মানুষের কিস্তি জুন মাস পর্যন্ত যেন মওকু করে। নির্দিষ্ট আয়ের মানুষকে আগামী তিন মাস গ্যাস-বিদ্যুতের বিল মওকু করতে হবে। যেসব লোক বাড়ি ভাড়া দিতে পারবে না, তাদের বাড়িভাড়া বাবদ বাড়ির মালিককে ভর্তুকি দিতে হবে। এটার জন্য একটা নীতিমালা তৈরি করতে হবে দ্রুত।
‘ডাক্তার ও নার্সদের জন্য পিপিই, হাসপাতালে প্রয়োজনীয় ইক্যুপমেন্ট, আইসোলেশন ইউনিট ও আইসিইউ বাড়ানোর ব্যাপারে সরকার দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ারও পরামর্শ দেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না।