Saturday 07 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

করোনার প্রভাব: মার্চেই বিমানের ক্ষতি ৩২০ কোটি টাকা


২৫ মার্চ ২০২০ ১২:৪৯
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ঢাকা: চীনের হুবেই প্রদেশের উহান থেকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) মৃতের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে। থমকে গেছে গোটা পৃথিবী। চীনের পর ইউরোপের উন্নত দেশগুলোতে করোনা চরমভাবে আঘাত হেনেছে। করোনা মহামারির কারণে বিশ্ব অর্থনীতি এখন স্থবির। আর এই স্থবিরতার আঘাত লেগেছে যোগাযোগ ব্যবস্থায়। এরই মধ্যে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে সমগ্র পৃথিবীর আকাশ যোগাযোগ। এর প্রভাব এসে লেগেছে বাংলাদেশ বিমানেও। ১৮টি আন্তর্জাতিক রুটে বাংলাদেশ বিমান যাত্রী বহন করতো। এখন চালু রয়েছে মাত্র দুটি রুটি। বলতে গেলে বাংলাদেশের সঙ্গে আন্তর্জাতিক রুটের আকাশ যোগাযোগ পুরোপুরিই বন্ধ হতে চলেছে। আর এতে লোকসানে পড়েছে সরকারি এই সংস্থাটি। শুধু মার্চ মাসেই বাংলাদেশ বিমানকে ৩২০ কোটি টাকার ক্ষতির মুখোমুখি হতে হবে।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (২৩ মার্চ) রাতে সারাবাংলাকে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন বাংলাদেশ বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোকাব্বির হোসেন।

তিনি উদ্বেগভরা কণ্ঠে এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘গতকাল বিমান থেকে নির্বাহী আদেশ জারি করা হয়েছে দুটি গ্রুপের জন্য। প্রথমত, যাদের কাজ নেই তাদের কোনো অভারটাইম দেওয়া হবে না। এর মাধ্যমে ওভারটাইমও বন্ধ হয়ে গেছে। আর ব্যয় কমানোর জন্য অফিসারদের ১০ শতাংশ বেতন কর্তন করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আমরা তবুও অফিসারদের বেতন দিচ্ছি। অনেক এয়ারলাইন্স তো শঙ্কায় রয়েছে বেঁচে থাকা নিয়ে। আমাদের অপারেশন এখন অনেক কম। সোমবার পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৩ হাজার কর্মকর্তা ছুটিতে গেছেন। যাদের কাজ নেই তাদের অত্যাবশ্যকীয় ছুটিতে পাঠানো হয়েছে।’

মো. মোকাব্বির হোসেন জানান, গত ১৫ মার্চ একটি মিটিং হয়। সেখানে কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হলো, কীভাবে খরচ কমানো যায়। এর জন্য ষষ্ঠ থেকে এর উপরের কর্মকর্তা তথা ককপিট এবং কেবিন ক্রুদের মার্চ মাস থেকে মূল বেতনের ১০ শতাংশ কেটে রাখা; প্রশাসনিক, কারিগরি ও অপারেশনাল কর্মচারি এবং প্রকৌশল কর্মকর্তাদের মার্চ মাস থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ওভারটাইম বন্ধ। এছাড়া কেবিন ক্রুদের উড্ডয়ন ঘণ্টার ভিত্তিতে প্রতি ঘণ্টায় ২১ দশমিক ৪৩ মার্কিন ডলার হারে আউটস্ট্যান্ডিং মিল অথবা ওভারসিজ অ্যালাউন্স দেওয়া হবে।

তিনি আরও জানান, এগুলোর বাইরে চলতি মাস থেকে নির্বাহী পরিচালক, মহাব্যবস্থাপক ও সমমানের কর্মকর্তা, উপমহাব্যবস্থাপক বা সমমর্যাদার কর্মকর্তাসহ অন্যদের আপ্যায়ন ভাতা ৫০ শতাংশ কমানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য প্রযোজ্য ফুড সাবসিডি ভাতা বন্ধ করা হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত পূর্ত ও সেবামূলক কাজের অর্থ পরিশোধ স্থগিত করা হয়েছে। বিমানের প্রকৌশল পরিদফতর ও অন্যান্য পরিদফতরের কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত গাড়ির জন্য জ্বালানি বা এ সংক্রান্ত ব্যয় বাবদ কোনো অর্থ দেওয়া হবে না।

বিমানের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘গত ২ মাসে আমাদের ১৫০ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে। কিন্তু মার্চ মাসেই শুধু ক্ষতি হবে ৩২০ কোটি টাকা। এই ক্ষতি পুষিয়ে ওঠা আমাদের জন্য কঠিন হয়ে যাবে। তবুও চেষ্টা করব, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সবকিছু আগের অবস্থানে ফিরিয়ে আনতে।’

এদিকে বিমান সূত্রে জানা গেছে, করোনার কারণে আগামী ২৫ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ সব ফ্লাইট বাতিল করেছে বাংলাদেশ বিমান। রোববার (২২ মার্চ) বাংলাদেশ বিমান এই ঘোষণা দেয়। এর আগে বাংলাদেশ বিমান সিঙ্গাপুর, ব্যাংকক, মালয়েশিয়া, সৌদি, কাতার, ভারত, ওমান, মালয়েশিয়ার, আরব আমিরাতের ফ্লাইট বন্ধ করে। সব মিলিয়ে আন্তর্জাতিক রুটে বাংলাদেশ বিমানের প্রায় সব ফ্লাইট বন্ধ হয়ে গেছে।

বাংলাদেশ বিমানের অর্থনৈতিক ক্ষতির বিষয়ে বিমান বিশেষজ্ঞ ও ভ্রমণবিষয়ক নিউজ পোর্টাল ‘বাংলাদেশ মনিটর’র সম্পাদক কাজী ওয়াহিদুল আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘এভিয়েশনখাত এখন পুরোটাই হুমকির মুখে। এই অবস্থা থেকে ফিরতে হলে আমাদের অনেক লড়াই করতে হবে। সেটা অনেক কঠিন। শুধু বাংলাদেশ বিমান নয়, বেসরকারি এয়ারলাইন্সগুলোও ধ্বংসের মুখে। বাংলাদেশ বিমান সরকারি খাত থেকে ভর্তুকি পাবে। কিন্তু বেসরকারি বিমান সংস্থাগুলোক বাঁচাতে হলে এখনই পরিকল্পনা করে সরকারের সহযোগিতার হাত বাড়ানো উচিত। নয়তো দেশের এভিয়েশন ও ট্যুরিজম দুটোই ধ্বংস হয়ে যাবে। এ জন্য আমাদের সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’

করোনাভাইরাস ক্ষতি বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স মার্চ ২০২০