ছুটি চান গার্মেন্টস শ্রমিকরা
২৫ মার্চ ২০২০ ১৯:২৬
ঢাকা: ‘সবাই এখন ছুটির চিন্তা করছে। কারখানায় সারাদিন এখন একই আলোচনা। সবার মতো আমরাও ছুটি চাই।’- নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে এসব কথা বলছিলেন গাজীপুরের একটি কারখানার এক পোশাক শ্রমিক।
রাজধানীর মগবাজারের একটি কারখানার শ্রমিক কুদ্দুস সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমাদের এখন শোচনীয় অবস্থা। গার্মেন্টস বন্ধ এবং বেতন দুটোই দরকার। আমরা অশান্তিতে আছি। মানসিক বিপর্যয়ে আছি। কারণ সবাই ছুটিতে যাচ্ছে। করোনাভাইরাস হলে তো সবার হবে। ছুটি ১৫ দিনের বেশি হলেও বেতন যেন দেওয়া হয়। দীর্ঘসময় কারখানা বন্ধ থাকলে সরকারের পক্ষ থেকে শ্রমিকদের যেন প্রণোদনা দেওয়া হয়।’- এই দুই শ্রমিকের অনেক পোশাক শ্রমিকের ভাষ্য প্রায় একই।
আর অনেক ক্ষোভ প্রকাশ করে সাভারের একটি কারখানার শ্রমিক কবীর সারাবাংলাকে বলেন, ‘কারখানায় ছুটি দিতে হলে তো বেতন দিয়ে দিতে হবে, এ জন্য হয়ত বিজিএমইএ সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষা করছে। অনেক কারখানা বেতন দিয়ে বন্ধ ঘোষণা করেছে। আমাদের রানিং মাসের বেতন দিয়েছে। কিন্তু এ মাসের বেতন কখন পাবো তা তো জানি না। বেতন না পেলেও ছুটি দিলে বাড়ি চলে যাব। যেতে না পারলে বাসায় নিরাপদে থাকার চেষ্টা করব।’
তবে শ্রমিকরা এখন বেতন ও ছুটি দুই-ই চায়। আপাতত ছুটিই তাদের প্রাধান্য। সাধারণত পোশাক কারখানায় ১০ তারিখের মধ্যে বেতন দেওয়া হয়। এর মধ্যে কারখানা খুলে গেলে তারা বেতন পাবে বলেই তাদের প্রত্যাশা।
জানতে চাইলে শ্রমিক লীগের সভাপতি ফজলুল হক মন্টু সারাবাংলাকে বলেন, ‘এরইমধ্যে কয়েকটি গার্মেন্টস বন্ধ হয়ে গেছে। সরকার, বিজিএমইএ ও আমাদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে কোনো মালিক যদি ছুটি দিতে চায় তাহলে শ্রম বিধি অনুযায়ী ছুটি দিয়ে দেবে। বিজিএমইএ’র পক্ষ থেকে এখনও অনুষ্ঠানিক কিছু বলা হবে না। আমরাও এর বেশি কিছু বলতে চাই না। আমাদের শ্রমিক ও মালিক দুইপক্ষের স্বার্থই দেখতে হবে।’
বাংলাদেশ জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম রনি সারাবাংলাকে বলেন, আমরা শ্রমিকদের নিরাপদ স্থানে রাখার দাবি করছি। বিভিন্ন মিটিংয়ে ছুটি দেওয়ার কথা বলেছি। এখন মনে হয় ছুটি দেওয়াই শ্রেয়। ছুটি দিলেও শ্রমিকরা যেন যার যার অবস্থানে থাকে তাও নিশ্চিত করতে হবে। কয়েকদিনের জন্যে হলেও তারা যেন বাসাবাড়িতে থাকে। ছুটি পাওয়ার পর এক সঙ্গে গ্রামে গেলে আবার করোনার ভয় থেকেই যাবে।’
এক প্রশ্নের উত্তরে রনি বলেন, ‘বেতন তো দিতেই হবে। ছুটি দিয়ে চলতি মাসের বেতন দিয়ে দেওয়া উচিৎ। শ্রমিকদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ও ভবিষ্যতের স্বার্থেই তা করা উচিৎ।’
সম্মিলিত গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি নাজমা আক্তার সারাবাংলাকে বলেন, যেহেতু ২৬ তারিখ থেকে সব কিছু বন্ধ থাকবে, অবশ্যই গার্মেন্টসেও ছুটি দিতে হবে৷ মহামারি এটা সবার জন্যেই। বিশেষ কোনো গোষ্ঠীর জন্য নয়। সবাইকে বেতন দিয়ে গার্মেন্টস বন্ধ করা হবে বলে আমরা মনে করি। ভারতেও শ্রমিকদের ৫ হাজার টাকা করে সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। আপতকালীন সময়ে দেশেও শ্রমিকদের প্রণোদনা দেওয়া উচিত।
পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক জানিয়েছেন বেতন নিয়ে শ্রমিকদের শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। তবে গার্মেন্টস বন্ধের সিদ্ধান্তের জন্য তারা এখনও সরকারের অপেক্ষায় রয়েছে। রুবানা হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘কোন কারণে পোশাক কারখানা বন্ধ হলেও শ্রমিকরা বেতন পাবেন। শ্রম বিধি অনুযায়ীই তাদের কারখানা বন্ধ করতে হবে।’
নীট গার্মেন্টস ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিকেএমইএ সভাপতি সেলিম ওসমান সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, রিস্ক নিয়ে কারখানা চালাবেন না। আমরা প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ পর্যন্ত অপেক্ষা করছি। তারপরে সিদ্ধান্ত নেব।
কারখানা বন্ধের বিষয়ে একই রকম ভাষ্য বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হকের। তবে তারা এখনই শ্রমিকদের বেতন নিয়ে শঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন।