করোনা থেকে সুরক্ষায় করণীয় স্মরণ করিয়ে দিলেন প্রধানমন্ত্রী
২৫ মার্চ ২০২০ ১৯:৩৩
ঢাকা: করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে মানুষদের রক্ষা করাকেই সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার বলে উল্লেখ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে এই ভাইরাস প্রতিরোধে করণীয়কে যুদ্ধের সঙ্গে তুলনা করে সেই যুদ্ধে জিততে হলে করণীয় কী, সেটিও তিনি সবাইকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। একাধিকবার বলেছেন, এই যুদ্ধে সবার করণীয় ঘরে থাকা, স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করা। সবাই সেটি মেনে চলছে এই ভাইরাসকে পরাজিত করা সম্ভব হবে।
বুধবার (২৫ মার্চ) সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতারে ভাষণটি সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে এই ভাইরাসের উৎপত্তি হয়েছিল। গতকাল (মঙ্গলবার) পর্যন্ত ৪ লাখ ২২ হাজার আটশরও বেশি মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। ১৮ হাজার ৯০৭ জন মানুষ মারা গেছেন। ১ লাখ ৯ হাজার ১০২ জন সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরে গেছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবকে প্যানডামিক বা মহামারি হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।
এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে করণীয় তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই ভাইরাস প্রতিরোধে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের উপদেশ আমাদের মেনে চলতে হবে। আমাদের যতদূর সম্ভব মানুষের ভিড় এড়িয়ে চলতে হবে। যারা করোনাভাইরাস আক্রান্ত দেশ থেকে স্বদেশে ফিরেছেন, সেসব প্রবাসী ভাইবোনদের কাছে অনুরোধ, আপনাদের হোম কোয়ারেনটাইন বা বাড়িতে সঙ্গ-নিরোধসহ যেসব নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, সেগুলো অক্ষরে অক্ষরে মেনে চলুন। মাত্র ১৪দিন আলাদা থাকুন। আপনার পরিবার, পাড়া-প্রতিবেশী, এলাকাবাসী এবং সর্বোপরি দেশের মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য এসব নির্দেশনা মেনে চলা প্রয়োজন।
স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঘনঘন সাবান-পানি দিয়ে হাত ধুতে হবে। হাঁচি-কাশি দিতে হলে রুমাল বা টিস্যু পেপার দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে নেবেন। যেখানে সেখানে কফ-থুথু ফেলবেন না। করমর্দন বা কোলাকুলি থেকে বিরত থাকুন। যতদূর সম্ভব ঘরে থাকবেন। অতি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যাবেন না। বাইরে জরুরি কাজ সেরে বাড়িতে থাকুন।
সামাজিক-ধর্মীয় সব ধরনের উৎসব ও জনসমাগম এড়িয়ে চলার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুসলমান ভাইয়েরা ঘরেই নামাজ আদায় করুন। অন্যান্য ধর্মের ভাইবোনদেরও ঘরে বসে প্রার্থনা করার অনুরোধ জানাচ্ছি।
করোনা প্রতিরোধে সরকারের পদক্ষেপ
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপগুলো সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এর আগেই সবাইকে জানিয়েছে। সেগুলো আরও একবার তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, দেশের সব স্কুল-কলেজ-কোচিং সেন্টার গত ১৭ মার্চ থেকে বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। স্থগিত করা হয়েছে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা। সব পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। যেকোন রাজনৈতিকনো সামাজিক ও ধর্মীয় সমাবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সব সরকারি-বেসরবারি অফিস বন্ধ থাকবে। কাঁচাবাজার, খাবার ও ওষুধের দোকান এবং হাসপাতালসহ জরুরি সেবা কার্যক্রম কেবল চালু থাকবে। গতরাত থেকে যাত্রীবাহী ট্রেন, নৌযান ও অভ্যন্তরীণ বিমান চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সীমিত আকারে ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু রাখবে। ২৪ মার্চ থেকে বিভাগীয় ও জেলা শহরগুলোতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা বলবৎ হয়েছে। করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন ও স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ ৫০০ চিকিৎসকের তালিকা তৈরি করেছে, যারা জনগণকে সেবা দেবেন।
সবাইকে একযোগে করোনাভাইরাস প্রতিরোধে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে ভাষণ শেষ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।