বঙ্গবন্ধুর ঘাতকরা দেশকে ১০০ বছর পিছিয়ে দিয়েছে
২৬ মার্চ ২০২০ ১১:২৪
আরিফুল ইসলাম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
ঢাকা: ‘আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে একটি স্বাধীন দেশ পেলেও এখনো অর্থনৈতিকভাবে পুরোপুরি মুক্তি লাভ করতে পারিনি, বলে মন্তব্য করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ঢাকা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুর রহমান হাওলাদার।
সারাবাংলার সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের আলাপচারিতায় তিনি তার মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের উদ্দেশ্য ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে কথা বলেছেন।
হাওলাদার বলেন, ‘১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি এসএসসি পরিক্ষার্থী ছিলাম। সেই সময়ে আমি স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করি এবং পাকিস্তানি পাক হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে স্বাধীনতার রক্তিম সূর্য ছিনিয়ে আনি। কিন্তু যে উদ্দেশ্য আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি সেই উদ্দেশ্যই এখনো পূরণ হয়নি। আমরা পশ্চিম পাকিস্তানিদের থেকে স্বাধীনতা লাভ করলেও দেশকে এখনো অর্থনৈতিকভাবে মুক্তি করতে পারেনি।’
‘পাকিস্তানপন্থী বাঙালি বিশ্বাসঘাতক রাজাকারের দল ডিসেম্বরের শুরুতেই যুদ্ধের পরিণতি বুঝতে পেরে স্বাধীনতার ঠিক আগে আগে সুপরিকল্পিতভাবে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড ঘটায়। বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে তারা সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের অগ্রগতির পথ বন্ধ করে দেওয়াই ছিল তাদের মূল উদ্দেশ্য। কিন্তু আমরা সেই উদ্দেশ্য সফল হতে দেইনি।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা অর্থনৈতিকভাবে মুক্তি পাওয়ার আগেই একটি কুচক্রী মহল জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করে। আমরা স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধ করেছি অর্থনৈতিক মুক্তি পাওয়ার আশায়। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে বিশ্বের কাছে পরিচিতি করতে। জাতিসংঘ ইতোমধ্যে উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে স্বীকৃতিও দিয়েছে।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি মাদারীপুর জেলার রাজৈর থানার মুক্তিযোদ্ধা দলের কমান্ডর ছিলাম। শুরু থেকে আমি আইনজীবী পেশাকে অনেক পছন্দ করতাম। এজন্য আমি আমার জীবনে কখন কোনো চাকরীর পরীক্ষাও দেইনি। মাদারীপুর জেলায় রাজৈর থানার নয়ানগর গ্রামে আমার জম্ম। আমি দুটি সেক্টরে যোগ দিয়ে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করি। দ্বিতীয় সেক্টরে মেজর হাওলাদার এবং অষ্টম সেক্টরে মেজর জেনারেল এম এম মঞ্জুর অধীনে কাজ করেছিলাম।’
‘১৯৭১ সালের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলা বাঘ মারা ট্রেনিং কেন্দ্রে ২১ দিন সামরিক ট্রেনিং করি। মেলাঘর ফুলটডিং ক্যাম্পে ওই সময় মেজর হাওলাদার সেক্টর কমান্ডার। তৎকালীন প্রধান ক্যাপ্টেন শওকত আলী (পরবর্তীতে সাবেক ডেপুটি স্পিকার) নেতৃত্বে অস্ত্র নিয়ে কুমিল্লা, ঢাকা হয়ে নিজ এলাকায় পৌঁছায়। পথে কুমিল্লার চান্দিনা ও দাউদকান্দি থানা আক্রমণ করি এবং আমরা পাকহানাদার বাহিনীর লঞ্চ ডুবাতে সফল হয়।’
তিনি বলেন, ‘আমার সঙ্গে সহযোগী যোদ্ধা হিসাবে যারা ছিলেন তারা অনেকেই বেঁচে আছেন আবার অনেকেই শহীদ হয়েছেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন, মুক্তিযোদ্ধা নুরুল ইসলাম, আলী আকবার ও আজিজ ইসলাম মুনসীসহ অনকে।’
যুদ্ধের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার জীবনের স্বরণীয় ঘটনার মধ্যে একটি হলো-কুমিল্লার চান্দিনায় প্রথম যেদিন যুদ্ধ করতে যায়। সেই রাত্রে চান্দিনা থানা আক্রমন করার আগে আমাদের একটি ভুল হয়েছিল। সেখানে যখন যুদ্ধের জন্য যাচ্ছিলাম তখন পাকিস্তানী সৈন্য ও পাকহানাদার বাহিনীর দোসর রাজাকাররা আমাদের উপর আক্রমণ করে বসে। আমরা তখন সারারাত যুদ্ধ করি। আমার পাশের এক বীর সহযোদ্ধা শহীদ হন। সারারাত যুদ্ধ শেষে ভোরে পানি সাঁতরিয়ে অনেক দূর গিয়ে আমাদের অন্য সাথীদের সঙ্গে মিলিত হই। পরবর্তীতে আমরা সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে কুমিল্লার দাউদকান্দি থানায় আক্রমণ করি কিন্তু আমরা তা দখল করতে ব্যর্থ হয়।
জননেত্রী শেখ হাসিনা দ্বিতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রী হয়ে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠন করেন এবং যুদ্ধাপধীর বিচার শুরু করেন। আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ অবদান স্বাধীনতা যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করা এবং পরবর্তীতে যুদ্ধপরাধীর বিচার প্রক্রিয়ার প্রসিকিউটর (অতিরিক্ত এটর্নি জেনারেল) হয়ে যুদ্ধাপরাধীর বিচার কাজে অংশগ্রহণ করা।’
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে শোষণমুক্ত সমাজব্যবস্থা, অর্থনৈতিক মুক্তি ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করে দেশ গড়ার প্রত্যয় ছিল।
কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যা করে কুচক্রি মহল দেশটিকে একশ’ বছর পিছিয়ে দিয়েছে। দীর্ঘ ২১ বছর পরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর জাতির জনকের অসমাপ্ত কাজকে সমাপ্ত করা লক্ষেই কাজ করে যাচ্ছে।’
আবদুর রহমান হাওলাদার ঢাকা আইনজীবী সমিতির ১৯৯৭-১৯৯৮ সালের লাইব্রেরি সম্পাদক ছিলেন। এরপর ২০০৮-২০০৯ সালে সাধারণ সম্পাদক ছিলেন নির্বাচিত হন। এছাড়া বিলুপ্ত ঘোষিত বাংলাদেশের আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন তিনি।
সারাবাংলা/এআই/এমআই