‘কারা গুজব ছড়ায়, চিহ্নিত করে প্রশাসনকে অবহিত করুন’

ঢাকা: করোনাভাইরাস সংক্রমণের বিস্তার রোধে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সাধারণ মানুসের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। একইসঙ্গে করোনাভাইরাস দুর্যোগের এই সময়ে যারা গুজব ছড়াচ্ছে, তাদের চিহ্নিত করে প্রশাসনকে অবহিত করার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন সাধারণ মানুষের প্রতি।

তিনি বলেন, সরকারের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী, বিশেষ করে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের আহ্বান জানাচ্ছি, জনগণের পাশে দাঁড়ান। আর দেশবাসীকে বলব, আপনারা আতঙ্কিত হবেন না। কোন ধরনের গুজবে কান দেবেন না। মতলববাজ, গুজব সৃষ্টিকারীদের চিহ্নিত করে প্রশাসনকে অবহিত করুন।

শুক্রবার (২৭ মার্চ) ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

সংবাদ সম্মেলনে ওবায়দুল কাদের বলেন, মানব সভ্যতা আজ এক ভয়াবহ সংকটের মুখোমুখি। সারাবিশ্ব আজ প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে আতঙ্কিত। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে। পরম করুনাময়ে অসীম কৃপায় বাংলাদেশ তুলনামূলকভাবে সার্বিক পরিস্থিতি এখনো নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য নিবিড়ভাবে দিন-রাত কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি ব্যক্তিগতভাবে সার্বক্ষণিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন।

সরকারের এই সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী বলেন, সরকার জনগণকে রক্ষার জন্য সম্ভাব্য সব প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমাদের দেশে বিদ্যমান স্বাস্থ্যসেবার পাশাপাশি বন্ধুপ্রতীম রাষ্ট্র থেকেও সহযোগিতা নেওয়া হচ্ছে। এরই মধ্যে আমাদের প্রতিবেশী ভারত ও চীন বাংলাদেশের মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসা সামগ্রী বিশেষ বিমানে করে ঢাকায় এসেছে। আগামী কয়েকদিনের মধ্যে চীন থেকে আরও চিকিৎসা সামগ্রী বাংলাদেশে আসবে।

জনগণ ও স্বাস্থ্যসেবা খাতের সবাইকে আশ্বস্ত করে ওবায়দুল কাদের বলেন, চিকিৎসক-নার্স ও জনগণ সবাইকে আশ্বস্ত করতে চাই, বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সরকার করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য সব প্রস্তুতি নিয়েছে। আপনারা আতঙ্কিত হবেন না। ধৈর্য, দায়িত্বশিলতা ও দেশপ্রেম নিয়ে আপনাদের সবাইকে এই প্রাণঘাতী ভাইরাস প্রতিরোধে কাজ করতে হবে। ঘরে ঘরে সচেতনতা ও সতর্কতার দুর্গ গড়ে তুলতে হবে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, এই মারাত্মক ভাইরাসের সংক্রমণের ভয়ে সারাবিশ্বে কোটি কোটি মানুষ গৃহবন্দি। বিশ্বের উন্নত রাষ্ট্রগুলো এই পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে। ধনী-গরীব, উন্নত-উন্নয়নশীল সব জাতিরাষ্ট্র পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার জন্য একে অন্যের সহযোগিতা গ্রহণ করছে।

ওবায়দুল কাদের আরও বলেন, জনস্বাস্থ্যের জন্য নিরাপত্তা হুমকির পাশাপাশি দরিদ্র ও সীমিত আয়ের মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। এরই মধ্যে অনেকে করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরবর্তী অর্থনৈতিক বৈশ্বিক মহামন্দার ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। আমি বিশ্বের এই সংকটকালীন মুহূর্তে সমাজের ধনী ও বিত্তবানদের প্রতি আমাদের চারপাশে খেটে খাওয়া দিনমজুর-অসহায় মানুষের পাশে সহযোগিতার হাত বাড়ানোর জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। আমাদের  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে এসব দরিদ্র জনগণের কষ্ট লাঘবের জন্য বিশেষ প্রণোদনা ব্যবস্থা চালু করেছেন এবং তাদের সাহায্য-সহযোগিতা প্রদান অব্যাহত রেখেছেন।

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে কাদের বলেন, আমি সরকারের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের সব নেতাকর্মী, বিশেষ করে  স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের জনগণের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আহ্বান জানাচ্ছি। আওয়ামী লীগের সব নেতাকর্মী ও জনপ্রতিনিধি নিজ নিজ এলাকায় অবস্থান নিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সরকারের কার্যক্রমে স্থানীয় প্রশাসন ও সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি। আমাদের সম্মিলিত প্রয়াসে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধে সক্ষম হব।

‘একইসঙ্গে জনগণের প্রতি আহ্বান রাখছি, আপনারা কোনো ধরনের গুজবে কান দেবেন না। সঠিক তথ্যের জন্য প্রচলিত গণমাধ্যম তথা টেলিভিশন-রেডিও ও সংবাদপত্রে প্রচারিত সরকারি নির্দেশনা মেনে চলুন। প্রয়োজনে সরকার নির্দেশিত হটলাইন নম্বরে যোগাযোগ করুন। মতলববাজ, গুজব সৃষ্টিকারীদের চিহ্নিত করে প্রশাসনকে অবহিত করুন। এই ধরনের গুজব শুধুমাত্র আমাদের সংকটকে আরও ঘনীভূত করবে,’— বলেন কাদের।

সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাক ও প্রধানমন্ত্রী বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার  বিপ্লব বড়ুয়া, দলের উপদফতর সম্পাদক আবু সায়েম খান উপস্থিত ছিলেন।

ওবায়দুল কাদের করোনা নিয়ে গুজব করোনাভাইরাস গুজব জনগণের পাশে দাঁড়ানো