রেইনট্রি হোটেলে ধর্ষণ: ৩ বছরেও শেষ হয়নি মামলার বিচার
২৮ মার্চ ২০২০ ১০:১৪
ঢাকা: রাজধানীর বনানী এলাকায় দ্য রেইনট্রি হোটেলে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের ঘটনার তিনবছর পূর্ণ হচ্ছে আজ (শনিবার)। ঘটনার তিন বছরেও শেষ হয়নি দুই শিক্ষার্থীর ধর্ষণের ঘটনায় দায়ের করা মামলার বিচারকার্য। কবে নাগাদ শেষ হবে তাও বলতে পারছেন না রাষ্ট্রপক্ষের সংশ্লিষ্ট আইনজীবীরা।
বর্তমানে মামলাটি ঢাকার ৭ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক বেগম মোছা. কামরুন্নাহারের আদালতে বিচারাধীন। চলতি বছরের ২৩ মার্চ মামলাটি সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ধার্য ছিল। কিন্তু ওইদিন সাক্ষী না আসায় সাক্ষ্যগ্রহণ হয়নি। এ জন্য আগামী ৭ মে পরবর্তী দিন নির্ধারণ করেন ট্রাইব্যুনাল।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট আদালতের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর আফরোজা ফারহানা আহমেদ (অরেঞ্জ) সারাবাংলাকে জানান, বর্তমানে মামলাটি সাক্ষ্যগ্রহণের পর্যায়ে রয়েছে। কয়েকদফা সাক্ষী না আসায় ও আইনি জটিলতায় মামলাটির বিচার শেষ হচ্ছে না। মামলার দুই ভিকটিমের বন্ধু আহমেদ শাহরিয়ার। তার সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য আদালত থেকে সমন পাঠানো হয়। তিনি আদালতে হাজির হচ্ছেন না।
আফরোজা ফারহানা আরও বলেন, ‘জবানবন্দি গ্রহণকারী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সাক্ষ্য দিতে এলেও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা সাক্ষ্যগ্রহণ করতে দিচ্ছেন না। তারা বলছেন, আগে শাহরিয়ারের সাক্ষ্য নেওয়া হোক। এ কারণে মামলাটির সাক্ষ্য হচ্ছে না। এতদিন মামলাটি রায়ের কাছাকাছি চলে যেত। আর বর্তমানে করোনাভাইরাসের কারণে কিছুটা প্রভাব পড়েছে। তারপরও আমরা রাষ্ট্রপক্ষ থেকে মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তি করার চেষ্টা করব।’
বাদীপক্ষের আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ বলেন, ‘মামলাটির বিচার দ্রুতও শেষ হবে বলে আমরা আশা করেছিলাম। কিন্তু সাক্ষী না আসায় বিচারকার্য শেষ হচ্ছে না। আর আদালত পরিবর্তন হওয়ার প্রভাবও কাজ করছে। আসামিদের বিরুদ্ধে কিছু সাক্ষীরা তাদের সাক্ষ্য দিয়েছেন। আমরা আশা করি, এ মামলাতে আসামিদের সর্বোচ্চ সাজা হবে।’অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী হেমায়েত উদ্দিন মোল্লা বলেন, ‘আসামিদের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সত্য নয়। মামলাটির বিচারকার্য চলমান। আসামিরা নির্দোষ আমরা সেই বিষয়টি প্রমাণ করতে পেরেছি। আশা করছি, তারা খালাস পাবেন।’
মামলায় নাঈম আশরাফ বাদে অপর চার আসামি জামিনে রয়েছে। আসামিদের মধ্যে রহমত আলী ছাড়া অপর আসামিরা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ২৯ নভেম্বর সাফাত আহমেদের জামিন মঞ্জুর করে একই বিচারক। এর আগে বিভিন্ন সময় ধর্ষণের সহযোগী আসামি সাফাত আহমেদের দেহরক্ষী রহমত আলী ও গাড়িচালক বিল্লাল হোসেন এবং বন্ধু সাদমান সাকিব হাইকোর্ট থেকে জামিন পান।
২০১৭ সালের ৭ জুন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের (ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার) পরিদর্শক ইসমত আরা এমি পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্রটি আদালতে দাখিল করেন।
অভিযোগপত্রে আসামি সাফাত আহমেদ ও নাঈম আশরাফ ওরফে এইচ এম হালিমের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৯(১) ধারায় ধর্ষণের অভিযোগ করা হয়েছে।
২০১৮ সালের ১৩ জুলাই একই আদালত আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন। ওই বছরে ১৯ জুন একই ট্রাইব্যুনাল আসামিদের বিরুদ্ধ অভিযোগপত্র গ্রহণ করেন।
অপর আসামি সাফাত আহমেদের বন্ধু সাদমান সাকিফ, দেহরক্ষী রহমত আলী ও গাড়িচালক বিল্লাল হোসেনের বিরুদ্ধে ওই আইনের ৩০ ধারায় ধর্ষণে সহযোগিতার অভিযোগ করা হয়েছে।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০১৭ সালের ২৮ মার্চ রাত ৯টা থেকে পরদিন সকাল ১০টা পর্যন্ত আসামিরা মামলার বাদী এবং তার বান্ধবী ও বন্ধুকে আটকে রাখে। অস্ত্র দেখিয়ে ভয়-ভীতি প্রদর্শন ও অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে। বাদী ও তার বান্ধবীকে জোর করে একটি কক্ষে নিয়ে যায় আসামিরা।
বাদীকে সাফাত আহমেদ ও তার বান্ধবীকে নাঈম আশরাফ একাধিকবার ধর্ষণ করেন।
আসামি সাদমান সাকিফকে দুই বছর ধরে চেনেন মামলার বাদী। তার মাধ্যমেই ঘটনার ১০-১৫ দিন আগে সাফাতের সঙ্গে দুই ছাত্রীর পরিচয় হয়।
ওই দুই ছাত্রী সাফাতের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে যান। সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল ও দেহরক্ষী তাদের বনানীর ২৭ নম্বর রোডে রেইনট্রি হোটেলে নিয়ে যান।