Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

যে পদক্ষেপগুলো গ্রহণে করোনা মোকাবিলায় সফল দক্ষিণ কোরিয়া


২৮ মার্চ ২০২০ ১৮:৩৩

ওমর ফারুক হিমেল, দক্ষিণ কোরিয়া থেকে

পৃথিবীব্যাপী লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে চলেছে করোনাভাইরাস বা (কোভিড-১৯) আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। একইসঙ্গে বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যাও। আমরা জানি, কিছু দেশ যথাযথ ও সময়োপযোগী কার্যকরী ব্যবস্থা নিয়ে ভাইরাসটির বিস্তৃতি রোধে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে। এদের মধ্য অন্যতম দক্ষিণ কোরিয়া। শান্ত ও বুদ্ধিদীপ্ত উপায়ে এই ভাইরাস মোকাবিলা করেছে কোরিয়া। শুধু তাই নয়, দেশটির ভাইরাস এপিসেন্টার হিসেবে খ্যাত দেগুও এখন নিয়ন্ত্রণে।

ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে সফল এই দেশটি প্রযুক্তির ব্যবহার ও টেস্ট করা ছাড়াও আরও কিছু প্রয়োজনীয় জন হিতকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে ভাইরাসটি মোকাবিলায়। তাদের থেকে শিক্ষণীয় কী কী আছে ঢাকার, ঢাকা কী এই পথে হাঁটতে পারে? কোরিয়া যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে সেগুলোর মধ্যে আছে-

জনকল্যাণে তড়িৎ ব্যবস্থা গ্রহণ: কোরিয়ায় করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে সরকার উচ্চ পর্যায়ের দায়িত্বশীল ব্যক্তি ও রোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা একযোগে কাজ করেছে। ব্যাপকভাবে পরীক্ষা চালু রেখেছে, একইসঙ্গে আক্রান্ত ব্যক্তিদের আলাদা রাখার ব্যবস্থা এবং সামাজিক মেলামেশাকে নিরুৎসাহিত করেছে শান্ত ও ধীরে চলার নীতিতে। বাংলাদেশ অনেক সুযোগ হারিয়েছে, চীনে ভাইরাসটি ছড়ানোর পর তারা দুমাস সময় পেয়েছিল। অথচ জনগণ ও উচ্চপর্যায়ের লোক একটি ভুল ধারণা পোষণ করে ছিল যে, চীন থেকে এই ভাইরাস বাংলাদেশে আসবে এবং বার বার নিজেদের প্রস্তুতি আছে বলে জানিয়েছে ঢাকা। আদতে ভুল নীতিতে ছিল ঢাকা।

চীনের থেকে শিক্ষা নিয়ে কোরিয়া টেস্ট বাড়িয়েছে। কোরিয়ায় শুরুতে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছিল, কোনো ব্যক্তি ভাইরাসে আক্রান্ত কি না, সে পরীক্ষা শুরু করে ব্যাপকভাবে। এতে সফলতাও পাই কেসিডিসি, এখন পর্যন্ত দেশটি ৩ লাখের বেশি মানুষকে পরীক্ষা করেছে দেশটি। প্রতিদিন বিনামূল্যে ১৫ হাজার লোকের পরীক্ষা চলছে কোরিয়াতে।

শনাক্ত ও পৃথকের পথেই আছে সিউল: যাদের উপসর্গ রয়েছে, শুধু তাদের পরীক্ষা করাই যথেষ্ট নয়। ওই ব্যক্তির সংস্পর্শে কারা কারা এসেছিল, তাদের শনাক্ত করে আলাদা করেছে। সিসিটিভি ফুটেজ, ডাটা ব্যবহার দেখে সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের শনাক্ত করে সিউল। করোনা উপসর্গ রয়েছে এমন ব্যক্তির সঙ্গে কারা মেলামেশা করেছে, তাও শনাক্ত করা হয়।

সামাজিক সমাবেশ সীমিতকরণ: করোনাভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া রোধে সামাজিক মেলামেশা সীমিত করেছে সিউল প্রশাসন আগামী এপ্রিলের ৫ তারিখ পর্যন্ত সামাজিক মেলামেশা, ধর্মীয় অনুষ্ঠান করতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে কোরিয়ার প্রধানমন্ত্রী। এ ব্যাপারে তিনি সকলের সহযোগিতাও কামনা করেন।

কোরিয়ানরা জাতি হিসেবে সচেতন, তাদের দূরত্ব বজায় রাখাটা অন্যতম কার্যকর একটি উপায় হিসেবে কাজ দিয়েছে, কিন্তু এত কিছুর পরেও একদিনের জন্য কাজ থেমে নেই।

স্বাস্থ্যকর বিমানবন্দর: কোরিয়ার ইনছন এয়ারপোর্টই বিশাল ডিজিটাল স্ক্রিনে লেখা আছে ‘করোনামুক্ত বিমানবন্দর’ এবং এজন্যে তারা আজ পর্যন্ত কোনো দেশের ওপর প্রবেশ নিষেধাজ্ঞাও জারি করেনি। উল্টো ১৫০টির ওপরে দেশ কোরিয়াকে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।

মূল্য নিয়ন্ত্রণ ও মানবিকতা: কোরিয়াতে করোনাভাইরাসের প্রভাবে পণ্যের দাম বাড়েনি, মাস্কের সংকট নেই, ডাকঘর, ফার্মাসিতে পর্যাপ্ত মাস্ক রয়েছে। কোরিয়ায় পর্যাপ্ত মালামাল মজুদ রয়েছে, সমানতালে কাজ চলছে, পুরো কোরিয়াকে কিটনাশক দিয়ে ধোয়া হয়েছে, এতে অংশ নেনে জনপ্রতিনিধিরা। কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রীরা তাদের চার মাসের বেতনের ৩০ শতাংশ কোরিয়ায় কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে অনুদান দেন, একইসঙ্গে ৭০ জনের ওপর শোবিজ তারকা তাদের ইনকাম থেকে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় রাষ্ট্রীয় কোষাগারে প্রদান করেন।

হ্যান্ড স্যানিটাইজার, রেল স্টেশন, বাস স্টেশন বিমান বন্দরে দিয়ে রেখেছে সরকারিভাবে ফ্রিতে ব্যবহারের জন্যে। চীনের উহানের ভাইরাসটি সিউলের দেগুতে থেকে যাত্রা শুরু কোরিয়ায় যে তাণ্ডবলীলা চালিয়েছিল, সিউল সেটিকে জনগণের সহযোগিতায় কমাতে সক্ষম হয়। শাটডাউন না করে গণজমায়েত নিষিদ্ধ, ধর্মীয় অনুষ্ঠান নিষিদ্ধ, স্কুল সাময়িক বন্ধ রাখা হয়েছে, অফিসের কাজ বাড়িতে করার নির্দেশ, কোম্পানির কর্মচারীদের বাইরে যেতে নিরুৎসাহিতকণ।

এছাড়া করোনাভাইরাস মোকাবিলায় ব্যাপকভাবে প্রযুক্তির ব্যবহার করা হয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। এর জন্য তিন ধাপে এগিয়েছে সরকার-

আর্থিক লেনদেন ট্রাক্রিং: ক্রেডিট এবং ডেবিট কার্ড বিশ্বে নগদহীন লেনদেনের পরিমাণ দক্ষিণ কোরিয়ায় অনেব বেশি রয়েছে। লেনদেনগুলি ট্র্যাক করে, মানচিত্রে কোনো কার্ড ব্যবহারকারীর গতিবিধি অনুসরণ করে করোনা আক্রান্ত রোগীকে শনাক্ত করা হয়েছে।

স্মার্ট ফোন: মোবাইল ফোন একই উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়েছে। ২০১২ সালে, দক্ষিণ কোরিয়া বিশ্বের সর্বোচ্চ ফোন মালিকানার হারগুলির মধ্যে একটি। ফোনে মানুষের অবস্থানগুলি স্বয়ংক্রিয়ভাবে সম্পূর্ণ নির্ভুলতার সঙ্গে রেকর্ড করা হয় কারণ যেকোনো সময় ডিভাইসগুলি এক থেকে তিনটি ট্রান্সসিভারের মধ্যে সংযুক্ত থাকে, এবং প্রায় ৮ লাখ ৬০ হাজার ফোর-জি ও ফাইফ-জি ট্রান্সসিভারগুলি ঘন করে পুরো দেশজুড়ে রয়েছে।

গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ফোন সংস্থাগুলি সমস্ত গ্রাহকদের তাদের আসল নাম এবং জাতীয় রেজিস্ট্রেশন নাম্বার সরবরাহ করে থাকে। এর ফলে প্রায় প্রত্যেকের ফোনের অবস্থান অনুসরণ করে ট্র্যাক করা সম্ভব। কোরিয়া এই পদ্ধতি ব্যবহার করছে।

সিসিটিভি: সিসিটিভি ক্যামেরা কর্তৃপক্ষকে কোভিড-১৯ রোগীদে কোরিয়ান নাগরিক কিম জাং জানান, আমাদের সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ, ২০১৫ সালের সার্চ রোগ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেছে কোরিয়া। নাগরিকের সহযোগিতায় কোরিয়া এখন বিশ্বের মডেল।

কোরিয়ার স্বাস্থ্য বিশারদ চোন জানান, কোরিয়ার এই সফলতা ও অভিজ্ঞতা অন্য দেশের জন্য সহায়তা হবে, একইসঙ্গে কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখবে। বাংলাদেশি কমিউনিটির সঙ্গে সংযুক্ত কয়েকজন প্রতিনিধি জানান, কোরিয়ার উন্নত স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, সরকারের প্রাণপণ প্রচেষ্টায়, কোরিয়া এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে সক্ষম হয়। তবে এখনো রোগী শনাক্ত হচ্চে, তা এত উদ্বেগজনক নয় বলে জানান তারা।

সিউল প্রবাসী রবিউল ইসলাম বুলবুল বলেন, সিউলকে মডেল ধরে, আমাদের দেশে উচিত দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া। রাষ্ট্রদূত আবিদা ইসলাম জানান, দক্ষিণ কোরিয়াতে বাংলাদেশিরা সুস্থ রয়েছেন, যেকোনো প্রয়োজনে দূতাবাস তাদের পাশে আছে, থাকবে।

এই পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন ৯ হাজার ৪৭৮ জন, মৃত্যুবরণ করেছেন ১৪৪ জন, ৪১ শতাংশ মানুষ সুস্থ হয়েছেন।

উল্লেখ্য, আগামী সপ্তাহে ইউরোপে আটকে থাকা কোরিয়ান নাগরিকদেরকে দেশে ফেরত আনবে বলে জানিয়েছে কোরিয়ার সরকার।

সারাবাংলা/এমআই

করোনা টপ নিউজ দক্ষিণ কোরিয়া মোকাবিলা


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

আইভরি কোস্টে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ১৩
৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৩:৪০

সম্পর্কিত খবর