কারখানায় ছুটি, এখনও গ্রামে যেতে চান পোশাক শ্রমিকরা
২৮ মার্চ ২০২০ ১৮:৪৯
ঢাকা: দেশের বেশিরভাগ পোশাক কারখানায় শ্রমিকদের ছুটি দেওয়া হয়েছে। শনিবারও (২৮ মার্চ) যেসব কারখানা চালু ছিল পুরেদিন তারা তাদের কাজ চালিয়ে যেতে পারেনি। সাধারণ ছুটিতে বিভিন্ন কারখানায় করোনা আতঙ্কে শ্রমিকরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। ফলে কারখানা মালিকরা ছুটি ঘোষণা করতে বাধ্য হয়েছেন।
এদিকে, ছুটি পাওয়া শ্রমিকদের বেশিরভাগই গ্রামে ফিরে গেছেন। শনিবার যারা ছুটি পেয়েছেন তারাও গ্রামে ফেরার চেষ্টায় রয়েছেন। বেশিরভাগ শ্রমিকই বেতন ও অর্থ নিয়ে শঙ্কায় নেই। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বেতন পাওয়ার প্রতিশ্রতিও পেয়েছেন তারা।
মার্চ মাসের বেতন ৭ এপ্রিলের মধ্যে পরিশোধ করা হবে বলে জানিয়েছে পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। অপর সংগঠন বিকেএমইএ’র পক্ষ থেকেও শ্রমিকদের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বেতন পরিশোধ করতে কঠোর হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে বিজিএমইএ’র পরিচালক রেজওয়ান সেলিম শনিবার (২৮ মার্চ) দুপুরে সারাবাংলাকে বলেন, ‘কমবেশি সব কারখানা এখন বন্ধ। যেসব কারখানা সকালে খুলেছিল, তারা কাজ চালু রাখতে পারেনি। শ্রমিকরা অনেকটা ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছিল। ফলে বাধ্য হয়েই চালু থাকা কারখানাগুলো মালিকরা বন্ধ ঘোষণা করেছেন।’
এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, মার্চ মাসের বেতন ৭ এপ্রিলের মধ্যে দিয়ে দেওয়া হবে। বেতন নিয়ে শ্রমিকদের শঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
শ্রম আদেশ প্রসঙ্গে অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘নতুন করে এখন আর কোনো ক্রয়াদেশ পাওয়া যাচ্ছে না। পুরোনো ক্রয়াদেশ বাতিল হচ্ছে। কিছু কিছু ফ্যাক্টরিতে এখন পর্যন্ত যে ক্রয়াদেশ রয়েছে তা দিয়ে এপ্রিল পর্যন্ত কারখানা চালু রাখা যাবে। কোনো কোনো ফ্যাক্টরিতে হয়তো এরচেয়ে বেশি সময়ে কাজ রয়েছে। একেক ফ্যাক্টরির অবস্থা একেক রকম। এতোদিন আমরা বায়ারদের বলেছি অর্ডার বাতিল না করতে। এখন কারখানা বন্ধ থাকলে অনেক মালিক হয়তো সঠিক সময়ে শিপমেন্ট করতে পারবে না। তখন বলবে এতদিন আমরা ডিলে করেছি, এখন তোমরা করছো!’
গাজীপুরের একটি কারখানার শ্রমিক সারাবাংলাকে বলেন, ‘তারা গ্রামে যাওয়ার চেষ্টা করবেন। যেতে না পারলে গাজীপুরেই থেকে যাবেন। কারখানা শ্রমিকরা থাকেন এমন মেসগুলোতে এখন বুয়া নেই। ফলে শ্রমিকদের খাওয়া-দাওয়ায় কষ্ট করতে হচ্ছে।’ আপাতত তেমন অর্থের সংকট নেই বলে জানিয়েছেন এই শ্রমিক।
সাভারের একটি কারখানার শ্রমিক কবির বলেন, ‘দুই দিনের ছুটি ঘোষণা করায় আমরা ছুটি পেয়েছি। বুধবার কাজ শেষ করেই বাড়ি ফিরে এসেছি। বেশিরভাগই গ্রামে চলে এসেছেন। তবে অনেকে সাভারে রয়ে গেছেন।’
মগবাজারের একটি কারখানার শ্রমিক কুদ্দুস বলেন, ‘দুইদিনের ছুটি পেয়ে আমরা বাসায় ছিলাম। পরে আবার ছুটি বাড়ানো হয়েছে। সবাইকে ফোনে ফোনে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে সকালে কারখানায় গিয়ে অনেক শ্রমিক ফিরে এসেছেন। বেশিরভাগ শ্রমিকরা গ্রামে ফিরে গেছে বলে জানালেন এই শ্রমিকও।’
এদিকে, শ্রমিকদের সুরক্ষায় পোশাক কারখানা বন্ধ রাখার আহ্বান জানান বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক। বৃহস্পতিবার (২৬ মার্চ) রাতে এক বার্তায় কারখানা মালিকদের এ অনুরোধ জানান তিনি। আর করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে ও কারখানার শ্রমিকদের নিরাপত্তায় ৪ এপ্রিল পর্যন্ত দেশের নিট পোশাক কারখানা বন্ধ রাখার ঘোষণা দিয়েছে নিটওয়্যার ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিকেএমইএ।
শুক্রবার (২৭ মার্চ) দুপুরে বিকেএমইএ সভাপতি সেলিম ওসমানের পাঠানো এক বিবৃতিতে ওই তথ্য জানানো হয়। তারও আগে দুই ২৬ ও ২৭ মার্চ- এই দুই দিনের ছুটি ঘোষণা করে বিকেএমইএ।
এদিকে, শনিবার খোঁজ নিয়ে জানা গেছে কোনো কোনো কারখানা ৫ এপ্রিল পর্যন্তও ছুটি ঘোষণা করেছে। বেশিরভাগ কারখানাতে এরইমধ্যে ছুটি হয়ে গেছে। তবে মাস্ক ও পিপিই তৈরি হচ্ছে- এমন কারখানা খোলা থাকবে। আর এ সব কারখানাকে সব ধরনের সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে বিজিএমইএ।