করোনা পরিস্থিতিতে উদ্বেগ জানিয়ে শতাধিক শিক্ষক-গবেষকের বিবৃতি
২৮ মার্চ ২০২০ ১৯:৪৪
ঢাকা: বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন প্রবাসে থাকা বাংলাদেশি শিক্ষক ও গবেষক। পাশাপাশি করোনাভাইরাস মোকাবিলায় দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নিতে সরকার ও প্রশাসনকে আহ্বান জানানো হয়েছে।
শনিবার (২৮ মার্চ) বিবৃতিতে বলা হয়, গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি চিহ্নিত হয়। উপযুক্ত ব্যবস্থা না নিলে বর্তমানে সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ইমপেরিয়াল কলেজ লন্ডনের প্রফেসর Neil Ferguson এর মডেল অনুযায়ী, বাংলাদেশে কমপক্ষে ৮ কোটি ৯১ লাখ মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। আইসিইউ সাপোর্ট লাগতে পারে ৬ লাখ ৯৬ হাজার ৫৯৫ জনের। পাঁচলাখ মানুষ আক্রান্ত হয়ে মারা যেতে পারে। এখনই দ্রুত সর্বাত্মক চেষ্টা চালালে এ সংখ্যা কমিয়ে আনা সম্ভব।
বাংলাদেশ সরকার দেশে কমিউনিউটি ট্রান্সমিশন সীমিত করার জন্য বিভিন্ন পদেক্ষেপ নিয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, শুধুমাত্র লক-ডাউন করে নয় বরং সম্ভাব্য আক্রান্ত রোগীকে খুঁজে বের করে, পরীক্ষার মধ্য দিয়ে শনাক্ত করে এবং তার পরিপ্রেক্ষিতে ব্যবস্থা নেওয়ার মাধ্যমেই একে মোকাবিলা করা সম্ভব।
বিবৃতিতে বলা হয়, আমাদের দেশে শুরুর দিকে রোগ-নির্ণয় কিট ছিল প্রায় ২০০০টি যার বেশকিছু ইতিমধ্যে ব্যবহৃতও হয়ে গেছে। আরও নতুন ৪০ হাজার কিট ইতোমধ্যে পৌঁছেছে। বর্তমানে দেশে মাত্র ২৯টি ভেন্টিলেশন সুবিধা আছে। আরো ১০০ টি ভেন্টিলেশন সুবিধার প্রস্তুতি প্রক্রিয়াধীন যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল।
এমতাবস্থায় বাংলাদেশে দল-মত নির্বিশেষে সকলে একত্রিত হয়ে আমাদের সীমাবদ্ধতাকে অনুধাবন করে তা সমাধানের চেষ্টা করা উচিত।
বিবৃতিতে বেশকিছু দাবি জানানো হয়েছে। সেগুলো হলো করোনা মহামারী পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য ঢাকাসহ সারাদেশে জেলা-উপজেলা পর্যায়ে পর্যাপ্ত রোগ-নির্ণয় কিট, নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র এবং ভেন্টিলেটরের ব্যবস্থা করা। চিকিৎসার সাথে সম্পর্কিত চিকিৎসক, নার্সসহ সকলের ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (PPE) সমেত পর্যাপ্ত নিরাপত্তা সামগ্রী অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিশ্চিত করা। এছাড়াও যেসব স্বেচ্ছাসেবক, মাঠকর্মী, এবং কর্মচারী মাঠপর্যায়ে কাজ করবে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এ কাজে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীকে প্রস্তুত করা ও তাদের কাজের মধ্যে সমন্বয় সাধন করা। লক-ডাউনকৃত এলাকায় সকল মানুষের মানবিক জীবনযাত্রা নিশ্চিত করা। করোনায় আক্রান্ত রোগী যাতে কোন ধরনের সামাজিক হয়রানি/বৈষম্যের শিকার না হয় তা নিশ্চিত করা। সামাজিক গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ যেমন লেখক, সাহিত্যিক, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবী, সাংস্কৃতিক কর্মী, আলেম-ওলেমাসহ বিভিন্ন ধর্মের বিদ্বানদের দিয়ে প্রচার-প্রচারণা চালানো।
বিবৃতিতে বলা হয়, ইতোমধ্যে ড. বিজন কুমার শীল এবং তার গ্রুপ নিজস্ব উদ্যোগে করোনা নির্ণয় পদ্ধতি নিয়ে কাজ শুরু করছেন। দেশের গবেষকদের অনেকেই করোনা সম্পর্কিত গবেষণা কাজে সম্পৃক্ত হতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। দেশের বাইরের গবেষকদের অনেকেও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে প্রস্তুত আছেন। তাদের সহ দেশ-বিদেশের বিভিন্ন গবেষকদের সম্মিলিত অংশগ্রহণের মধ্যদিয়ে আশু এ মহামারি মোকাবিলা করা সম্ভব হতে পারে। এরই মধ্যে অত্যন্ত দুঃখজনক হলো, করোনার সম্ভাব্য রোগীর সংখ্যা নিয়ে রিপোর্ট তৈরি করে বিপাকে আছেন ড. মলয় কান্তি মৃধা। এ ক্রান্তিলগ্নে রাষ্ট্রের উচিত নির্মোহ গবেষণার পরিবেশ নিশ্চিত করা।
বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীদের কয়েকজন হলেন, মো. ইমদাদুল হক খান, ইউনিভার্সিটি অব মিসিসিপি, যুক্তরাষ্ট্র; ড. মো. রফিকুল ইসলাম, কেন্ট স্টেট ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাষ্ট্র; ড. আরিফ নিক্সন, ওসাকা ইউনিভার্সিটি, জাপান; ড. মোহাম্মদ সিরাজ উদ্দিন, ইউনিভার্সিটি অব জর্জিয়া, যুক্তরাষ্ট্র; নূর এ কাসিদা ইসলাম, ইউনিভার্সিটি অব বন, জার্মানি; ড. তানিয়া সুলতানা বনি, জন হপকিন্স ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাষ্ট্র; সাবরিনা শামীন আলম, ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়, কানাডা; তাহরিমা হোসেন, ইউনিভার্সিটি অব সাঊথ্যাম্পটন, যুক্তরাজ্য; মো. শরীফ উল্লাহ্, ওল্ড ডমিনিয়ন ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাষ্ট্র; অয়ন সাহা, ইউনিভার্সিটি অফ নিউ সাউথ ওয়েলস, অস্ট্রেলিয়া; মীর সালমা আক্তার, ইউনিভার্সিটি অফ রেজিনা, কানাডা; মো. আল-আমিন, ইউনিভার্সিটি অফ পাদোভা, ইতালি; মো. আরিফুর রহমান, ওসাকা ইউনিভার্সিটি, জাপান; রিদওয়ান ইসলাম, ইউনিভার্সিটি অব নেব্রাস্কা মেডিকেল সেন্টার; যুক্তরাষ্ট্র; কুতুব আশরাফ, ইউনিভার্সিটি পিয়েরি মেরি কুরি, ফ্রান্স; ড. মো. আখেরুজ্জামান টেক্সাস টেক ইউনিভার্সিটি, যুক্তরাষ্ট্র; রাশিক ইফতেখার রুশো, ইউনিভার্সিটি অফ কিউবেক, কানাডা; নাহিদ সুলতানা, কুমামোতো ইউনিভার্সিটি, জাপান; নাজমুল হাসান মুজাহিদ, মনাশ ইউনিভার্সিটি, মালয়েশিয়া; মহসিনা মুক্তি, পাদোয়া বিশ্ববিদ্যালয় ইতালি ও অন্যরা।