‘ঘরবন্দি’ চট্টগ্রামবাসীর পাশে সিএমপি
২৮ মার্চ ২০২০ ২০:১৮
চট্টগ্রাম ব্যুরো: করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলায় নগরবাসীর পাশে দাঁড়িয়েছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি)। ‘ঘরবন্দি’ হয়ে থাকা মানুষের বাসায় বাজার পৌঁছে দিচ্ছে পুলিশ। দুঃস্থদের জন্য বিনামূল্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণের কর্মসূচিও নেওয়া হয়েছে।
এছাড়া চট্টগ্রাম মহানগরীতে পুলিশ কিংবা সাধারণ জনগণের মধ্যে সন্দেহভাজন করোনা আক্রান্ত কাউকে পাওয়া গেলে তার চিকিৎসা সেবায় কুইক রেসপন্স টিমও গঠন করেছে সিএমপি।
পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঘরবন্দি হয়ে থাকা নগরবাসীকে বাজার পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে কেনা পণ্যের দাম নেওয়া হচ্ছে। আর দুঃস্থদের জন্য খাবার দেওয়া হবে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। নগরীতে কাউকে যাতে খাবারের অভাবে অনাহারে থাকতে না হয়, সেটা নিশ্চিত করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সিএমপি কর্মকর্তারা।
সিএমপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ‘স্টে হোম’ কার্যক্রমের আওতায় পুলিশ বাসায় বাসায় বাজার পৌঁছে দিতে হোম সার্ভিস চালু করেছে। সিএমপির চার জোনের অধীন ১৬ থানার দু’টি করে নম্বর দেওয়া হয়েছে। চালু আছে সিএমপির হটলাইন নম্বরও (০১৪০০ ৪০০৪০০)। সেই নম্বরগুলোতে যোগাযোগ করে প্রয়োজনের কথা জানালে বাসায় পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য পৌঁছে দেবে পুলিশ।
সিএমপি কমিশনার মো. মাহাবুবর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমরা মানুষকে অনুরোধ করছি যে আপনারা বাসায় থাকেন। আপনাদের প্রয়োজন আমরা মেটানোর যথাসাধ্য চেষ্টা করব। এজন্য আমরা হোম সার্ভিস চালু করেছি। কুইক রেসপন্স টিম করেছি। আমাদের ওসিরা নিজ নিজ উদ্যোগে অনেক জায়গায় দুঃস্থদের সহযোগিতা করছেন। এটাও আমরা এগিয়ে নিয়ে যাব। মোট কথা হচ্ছে, নগরবাসী যাতে অসহায় বোধ না করেন সেজন্য পুলিশের পক্ষ থেকে যা যা করার আমরা করব।’
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারি সিদ্ধান্তে গত ২৬ মার্চ থেকে শুরু হয়েছে দেশজুড়ে সাধারণ ছুটি। ওইদিন থেকেই ঘরবন্দি মানুষের বাসায় বাজার পৌঁছে দেওয়ার কার্যক্রম শুরু করেন কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন। মূলত এর মধ্য দিয়েই নগরীতে মানুষের বাসায় বাসায় বাজার পৌঁছে দেওয়ার কার্যক্রম শুরু হয়েছে, যা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে শনিবার (২৮ মার্চ)।
ওসি মোহাম্মদ মহসীন সারাবাংলাকে বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার রাতে আমরা নগরীর পাথরঘাটায় হোম কোয়ারেনটাইনে থাকা একজনের বাসায় বাজার পৌঁছে দিয়েছি। এরপর গত তিনদিনে আমরা ২০ জনের বাসায় বাজার পৌঁছে দিয়েছি। তারা সবাই পণ্যমূল্য পরিশোধ করেছেন। অসংখ্য মানুষ পুলিশের এই সার্ভিসে আশ্বস্ত হয়েছেন। থানায় বারবার ফোন আসছে। মানুষ বিভিন্ন প্রয়োজনের কথা জানাচ্ছেন। মানুষ বিভিন্ন পরামর্শও নিচ্ছেন। আমরা শুধু বলছি, আপনারা বাসায় থাকুন। আমরা আপনাদের পাশে আছি।’
পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কাশেম ভূঁইয়া সারাবাংলাকে জানিয়েছেন, শনিবার থেকে পাঁচলাইশ থানা থেকে মানুষের বাসায় বাজার পাঠানোর কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে ৩ জনের বাসায় বাজার পাঠানো হয়েছে। হোম সার্ভিসে খুশি হয়ে মানুষ থানায় ফোন দিচ্ছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।
তবে নগরীর ডবলমুরিং ও পতেঙ্গা থানা পুলিশ জানিয়েছে, তাদের এলাকায় হোম সার্ভিসের চেয়েও গরীব-দুঃস্থদের চাহিদা বেশি। হোম সার্ভিসের জন্য কেউ কল করলে অবশ্যই দ্রুততম সময়ের মধ্যে বাজার পৌঁছানো হবে। আর গরীব-দুঃস্থদের বিনামূল্যে খাবার দেওয়া হচ্ছে।
ভাসমান মানুষ, দুঃস্থ, রিকশাওয়ালা-ভ্যানগাড়িওয়ালাসহ নিম্ন আয়ের মানুষ, যারা সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর থেকে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন তাদের জন্য ব্যক্তিগত উদ্যোগে নিত্যপণ্য সরবরাহের কাজটি প্রথম শুরু করেছেন পতেঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উৎপল কান্তি বড়ুয়া। গত বৃহস্পতিবার (২৬ মার্চ) থেকে শনিবার পর্যন্ত তিনি পতেঙ্গা এলাকায় প্রায় ১৫০ মানুষকে সহায়তা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন।
ওসি উৎপল সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমার এলাকায় শ্রমিক শ্রেণির নিম্ন আয়ের মানুষ বেশি। তাদের মধ্যে বাজারের খুব চাহিদা নেই। সেজন্য আমি একেবারে গরীব, বয়োবৃদ্ধ যারা দিনে আনে দিনে খায়, তাদের ৫ কেজি চাল, ১ কেজি ডাল, ২ কেজি আলু দিচ্ছি। প্রতিদিন কমপক্ষে ৫০ জনকে দেওয়া হচ্ছে।’
ডবলমুরিং থানার ওসি সদীপ কুমার দাশ সারাাবংলাকে বলেন, ‘আমার এলাকায় আগামীকাল (রোববার) থেকে ৬০ বছরের বেশি বয়সী লোকজন যাদের আয় নেই, গরীব-দুঃস্থ, রিকশাওয়ালা, দিনমজুরদের খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হবে। প্রত্যেকের জন্য ৫ কেজি চাল, ১ কেজি পেঁয়াজ, ১ কেজি ডাল, ৩ কেজি আলু ও ১টি ডেটল সাবান বরাদ্দ আছে।’
কোতোয়ালী থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন সারাবাংলাকে বলেন, “হতদরিদ্রদের জন্য চাল-ডাল বিতরণের কর্মসূচি কাল থেকে শুরু হচ্ছে। জনকল্যাণে আমাদের সিএমপির ফাণ্ড আছে, থানায়ও ফান্ড আছে। সেখান থেকে আমরা দরিদ্র মানুষের পাশে দাঁড়াব। কোতোয়ালী এলাকায় আমরা কাউকে না খেয়ে থাকতে দেব না। হটলাইন অথবা ওসি’র নম্বরে যদি কেউ ফোন দেন, সাধ্যের সবটুকু করব।”
পাঁচলাইশ থানার ওসি আবুল কাশেম ভূঁইয়া সারাবাংলাকে বলেন, ‘গরীব-দুঃস্থদের দেওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের ওপর এখনও নির্দেশনা নেই। তবে গরীব মানুষের জন্য আমার ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে চাল, ডাল, তেল, চিনি, পিয়াঁজ এসব দিচ্ছি। আমার সাধ্য অনুযায়ী দিচ্ছি।’
এদিকে করোনাভাইরাসে কেউ আক্রান্ত হলে তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা দিতে ‘করোনাভাইরাস রেসপন্স টিম’ গঠন করেছে সিএমপি। নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (ফোর্স) আরিফ হোসেনের নেতৃত্বে পুলিশের বিভাগীয় হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার, নার্স ও ফার্মাসিস্ট এবং পুলিশ সদস্যের সমন্বয়ে ১১ জনের একটি টিম করা হয়েছে।
নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) আবু বক্কর সিদ্দিক সারাবাংলাকে বলেন, ‘পুলিশ সদস্য কিংবা জনসাধারণ কেউ করোনায় আক্রান্ত হলে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতাল বা আইসোলেশনে নিয়ে যাবে এই টিম। এজন্য দুটি অ্যাম্বুলেন্সও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।’
পাঁচলাইশ থানার ওসি আবুল কাশেম ভূঁইয়া সারাবাংলাকে জানান, শনিবার পাঁচলাইশ থানার কাপাসগোলা এলাকা থেকে করোনা আক্রান্ত সন্দেহে দুই নারীকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এদের একজনের বয়স ৬০ বছর, আরেকজনের বয়স ২৭। তাদের হাসপাতালে প্রাথমিক পরীক্ষার পর হোম কোয়ারেনটাইনে থাকার পরামর্শ দিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে ওসি জানিয়েছেন।
এছাড়া নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত পাঁচ মাসের এক শিশুকে উদ্ধার করে পাঁচলাইশ থানা পুলিশ চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিয়ে গেছে বলেও জানান ওসি।