বাজেটে তামাক পণ্যে কর বাড়াতে আত্মা’র ৪ প্রস্তাব
২৯ মার্চ ২০২০ ২১:৫৯
ঢাকা: আসছে ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটে তামাক পণ্যের দাম বাড়াতে বেশকিছু প্রস্তাব দিয়েছে অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া এলায়েন্স (আত্মা)। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে দেওয়া চিঠিতে বর্তমানে সিগারেটের মূল্যস্তর চার থেকে দুই স্তরে নামিয়ে দাম বাড়ানোর পাশাপাশি বিড়ি ও ধোঁয়াবিহীন তামাক পণ্যের ওপরে কর বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে।
রোববার (২৯ মার্চ) এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ প্রস্তাবের কথা জানায় সংগঠনটি। করোনার বিস্তার রোধে এনবিআর’র সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে এবছর ইমেইলে এই বাজেট প্রস্তাব জমা দিয়েছে আত্মা।
আত্মার প্রস্তাবে বলা হয়, সিগারেটের মূল্যস্তর চারটি থেকে দুটিতে অর্থাৎ নিম্নস্তর এবং প্রিমিয়াম স্তরে নামিয়ে আনতে হবে। নিম্নস্তরের ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ন্যূনতম ৬৫ টাকা নির্ধারণ করে ৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক এবং ১০ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হয়েছে। পাশাপাশি ৯৩ টাকা এবং ১২৩ টাকা এই দুই মূল্যস্তরকে একত্রিত করে প্রিমিয়াম স্তরে নিয়ে আসার প্রস্তাব করা হয়। অর্থাৎ প্রিমিয়াম স্তরে ১০ শলাকা সিগারেটের খুচরা মূল্য ন্যূনতম ১২৫ টাকা নির্ধারণ করে ৫০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক এবং ১৯ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
প্রস্তাবে আরও বলা হয়, বিড়ির ফিল্টার এবং নন-ফিল্টার মূল্য বিভাজন তুলে দিয়ে, ফিল্টারবিহীন ২৫ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ৪০ টাকা নির্ধারণ করে ৪৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক ও ৬ দশমিক ৮৫ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা এবং ফিল্টারযুক্ত ২০ শলাকা বিড়ির খুচরা মূল্য ৩২ টাকা নির্ধারণ করে ৪৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক এবং ৫ দশমিক ৪৮ টাকা সুনির্দিষ্ট সম্পূরক শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হয়।
অন্যদিকে ধোঁয়াবিহীন তামাকপণ্য যেমন জর্দা ও গুলের দাম বাড়ানোর প্রস্তাবও করা হয়েছে। প্রতি ১০ গ্রাম জর্দার খুচরা মূল্য ৪০ টাকা ও প্রতি ১০ গ্রাম গুলের খুচরা মূল্য ২৩ টাকা নির্ধারণ করে ৪৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপের করতে বলা হয়েছে এবং সকল তামাকপণ্যের খুচরা মূল্যে ১৫ শতাংশ ভ্যাট বহাল রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে।
আত্মা মনে করে এ প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে দেশের প্রায় ২০ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক ধূমপায়ী ধূমপান ছেড়ে দিতে উৎসাহী হবে। দীর্ঘমেয়াদে বর্তমানের ৬ লাখ ধূমপায়ীর অকাল মৃত্যু রোধ করা সম্ভব হবে। এছাড়া প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত অতিরিক্ত রাজস্ব অর্জিত হবে, যা দিয়ে সরকার করোনাভাইরাস সংক্রান্ত ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় ব্যবহার করতে পারবে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, তামাক আসক্ত ফুসফুস করোনাভাইরাসে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। বাংলাদেশে ৩ কোটি ৭৮ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ তামাক ব্যবহার করে এবং প্রায় ৪ কোটি ১০ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ নিজ বাড়িতেই পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হয়। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তামাকের ক্ষতির শিকার এই বিপুল প্রাপ্তবয়স্ক জনগোষ্ঠী বর্তমানে মারাত্মকভাবে করোনাভাইরাসের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। তামাকের সহজলভ্যতাই এর প্রধান কারণ বলে মনে করছে সংগঠনটি।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, কম দামে তামাকপণ্য কেনার সুযোগ এবং ত্রুটিপূর্ণ করকাঠামো বিশেষ করে সিগারেটে ৪টি মূল্যস্তর থাকায় তামাকের ব্যবহার হ্রাসে কর ও মূল্য পদক্ষেপ সঠিকভাবে কাজ করছে না। তামাকের দাম বেশি হলে তরুণ জনগোষ্ঠী তামাক ব্যবহার শুরু করতে নিরৎসাহিত হবে আর তামাকাসক্তরাও বিশেষ করে দরিদ্র জনগোষ্ঠী তামাক ছাড়তে উৎসাহিত হবে।