উঁকি দিচ্ছে অভাব, ত্রাণের আশায় ফোন জেলা প্রশাসনে
৩০ মার্চ ২০২০ ১৮:৫৭
চট্টগ্রাম ব্যুরো: করোনাভাইরাসের সংক্রমণ মোকাবিলায় টানা ১০ দিনের সাধারণ ছুটির মধ্যে কর্মহীন হয়ে পড়া নিম্ন আয়ের মানুষের ঘরে অভাব উঁকি দিতে শুরু করেছে। নগরীর বিভিন্ন এলাকায়, গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে গরীব-অসহায়দের দিনে, এমনকি সন্ধ্যার পরও বসে থাকতে দেখা গেছে ত্রাণের আশায়। তবে হতদরিদ্র পরিবারগুলোর মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ অব্যাহত রেখেছে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ।
প্রশাসনের হটলাইন নম্বরে ফোন পেয়ে চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ বোস্তামি থানার খাজা গরীবে নেওয়াজ লেইনে এমনই এক অভাবী পরিবারে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিয়েছে জেলা প্রশাসন। খাদ্যের অভাবে কেউ অনাহারে থাকলে ৩৩৩ নম্বরে ফোন করে জানানোর অনুরোধও করেছে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন।
রোববার (২৯ মার্চ) রাতে নগরীর লালখান বাজার মোড়, ওয়াসা মোড়, কাজির দেউড়িসহ আশপাশের এলাকায় হতদরিদ্র মানুষকে ত্রাণের অপেক্ষায় থাকতে দেখা গেছে। লালখান বাজার মোড়ে দেখা গেছে, প্রায় অর্ধশতাধিক নারীপুরুষ বন্ধ দোকানপাট, মার্কেটের সামনে সারি বেঁধে বসে আছেন। ব্যক্তিগত উদ্যোগে কাউকে কাউকে সেখানে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করতে দেখা গেছে।
এই রাতেই নগরীর গরীবে নেওয়াজ লেইনের ওই পরিবারের পক্ষ থেকে ৩৩৩ নম্বরে ফোন করে খাদ্য সহায়তা চাওয়া হয়। জেলা প্রশাসক মো. ইলিয়াস হোসেনের নির্দেশে ত্রাণ ও পুর্নবাসন শাখার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা গিয়ে ৩৩ কেজি খাদ্যসামগ্রী দিয়ে আসেন। এর মধ্যে ছিল ২০ কেজি চাল, ৪ কেজি চিড়া, ২ কেজি ডাল, ২ কেজি লবণ, ২ কেজি চিনি, ২ লিটার সয়াবিন তেল ও এক কেজি নুডলস।
জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তৌহিদুল ইসলাম সারাবাংলাকে বলেন, ‘দিনমজুরের পরিবারটিতে কর্মক্ষম ব্যক্তি একজনই। চার সন্তান ও স্বামী-স্ত্রী মিলে ছয় জনের পরিবার। গত সাত দিন ধরে দিনমজুর বেকার হয়ে আছেন। দুই দিন ধরে ঘরে চুলা জ্বলছে না। একপ্রকার অনাহারেই ছিলেন। মান-সম্মানের ভয়ে প্রতিবেশীদের কিছু জানাননি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিও কোনো খোঁজ নেননি। ক্ষুধার জ্বালায় বাধ্য হয়ে ৩৩৩ নম্বরে ফোন দেন। খাদ্যসামগ্রী পেয়ে অনাহারে থাকা পরিবারটি যেন প্রাণে বেঁচেছে।’
তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রাম শহরে এমন অনেক নিম্ন আয়ের হতদরিদ্র পরিবার আছে। আস্তে আস্তে তাদের ঘরেও নিশ্চয় অভাব দেখা দিচ্ছে। জেলা প্রশাসক মহোদয় প্রশাসনের পাশাপাশি সমাজের বিত্তবান ব্যক্তি, জনপ্রতিনিধিদের অভাবী মানুষকে সহায়তায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।’
এর আগে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন নগরী ও ১৬ উপজেলায় প্রায় ১৮ হাজার পরিবারের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেছে।
এদিকে জেলা প্রশাসনের পাশাপাশি উপজেলা পর্যায়ে পুলিশও খাদ্যসামগ্রী বিতরণ শুরু করেছে। সোমবার জেলার ১৬ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি) কাছে দুই হাজার পরিবারের মাঝে বিতরণের জন্য খাদ্যসামগ্রী পাঠিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার। প্রতি পরিবারের জন্য ৫ কেজি চাল, ২ কেজি আটা, ১ কেজি ডাল ও ১ কেজি লবণ বরাদ্দ দিয়েছেন পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হক। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত জেলা পুলিশ এ সহায়তা অব্যাহত রাখবে বলে জানিয়েছেন এসপি।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসন দরিদ্রদের খাবার বিতরণ দরিদ্রদের সহায়তা নিম্ন আয়ের মানুষ