কোভিড-১৯ থেকে সুস্থ হওয়া ফয়সালের অভিজ্ঞতা শুনলেন প্রধানমন্ত্রী
৩১ মার্চ ২০২০ ১৬:৩৮
সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
ঢাকা: দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হওয়া প্রথম রোগী ফয়সাল শেখ দেশবাসীকে ঘরে থাকার অনুরোধ করে বলেছেন, ‘করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা পাওয়ার সবচেয়ে বড় উপায় হচ্ছে এই মুহূর্তে ঘরে থাকা। এই সময় ঘরে থাকুন, নিজের পরিবারকে সময় দিন। সরকার যতদিন ঘরে থাকতে বলছে, আপনারা ততদিন ঘরে থাকুন। তাহলে আমরা সবাই মিলে এই বিপদ থেকে উদ্ধার পাব।’
মঙ্গলবার (৩১ মার্চ) সকালে গণভবন থেকে সারাদেশের বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসন কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে সংযুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে দেশব্যাপী চলমান কার্যক্রম সমন্বয়ের লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী এই ভিডিও কনফারেন্সিংয়ে যুক্ত হন। ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় থেকে ফয়সাল শেখ তার অভিজ্ঞতা বিনিময় করেন।
ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘ঢাকায় ত্রাণের ক্ষেত্রে একটা বড় চ্যালেঞ্জ হল, আপনি জানেন ৭৩টি বসতি আছে। প্রায় ৪০ হাজার পরিবার থাকে এবং খুবই ঘনবসতি। এটাকে মাথায় রেখে আমরা গতকাল থেকে পাঁচটি মোবাইল টিম তৈরি করেছি। যারা ত্রাণ নিয়ে রাস্তাঘাটে থাকা দুস্থ, ভবঘুরে, রিকশাচালক ও দিন এনে দিন খাওয়া মানুষের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে।
এছাড়া মোবাইল টিমের মাধ্যমে সদরঘাটে নৌকা চালকসহ দুঃস্থদের মাঝেও ত্রাণ বিতরণের কার্যক্রমের কথা তুলে ধরে তিনি জানান, পর্যাপ্ত চাল এবং টাকা মজুদ আছে।
এরপর বাংলাদেশে কোভিড-১৯ থেকে সুস্থ হয়ে ওঠা ফয়সাল শেখের অভিজ্ঞতা শোনার জন্য প্রধানমন্ত্রীকে আহ্বান জানান।
ফয়সাল শেখ বলেন, ‘আমি জার্মানিতে পড়াশোনা করছি। গত ১ তারিখে দেশে আসি, পরিবারের সঙ্গে ছুটি কাটানোর জন্য। দেশে আসার ১০দিন পর আমি অসুস্থ বোধ করি। শরীরে কিছু করোনার সিমটমস দেখা যায়। তখন আমার মনে হয়, আমার এবং আমার পরিবারের নিরাপত্তার জন্য নিজে থেকে আইইডিসিআরে যাই। নিজের একটা টেস্ট করানোর জন্য। সত্যি কথা বলতে আমি প্রথমে একটু ভয়েও ছিলাম যে, আমি এখানে জার্মানির মতো সেবা পাব কি না বা এখানে কিভাবে চিকিৎসা হবে।
যেহেতু করোনা একটি নতুন ধরনের রোগ, এটা কিভাবে এখানে হ্যান্ডেল করা হবে কিন্তু আমি আইইডিসিআরে গিয়ে প্রথমে টেস্ট করার পরে তারা আমাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে। সেখানে টেস্ট করার একদিন পরে তারা আমাকে জানায় পজেটিভ পাওয়া গেছে, তারা আমাকে কোয়ারেনটাইনে রাখতে চায়, আমি তাতে রাজি হই। তারা আমাকে বাসায় এসে নিয়ে গিয়ে কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালে কোয়ারাইনটাইনে রাখে। সেখানে আমি ১০দিন কোয়ারেনটাইনে থাকি এবং আমার পরিবারকে এবং বন্ধ-বান্ধব যাদের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল, তাদের সবাইকে কোয়ারেনটাইনে রাখা হয় এবং কয়েকদিন পরে বারবার টেস্টের পরে যখন এটা আমার নেগেটিভ আসে, তখন আল্লাহর অশেষ রহমতে আমি সেখান থেকে বাসায় ফিরে যাই।’
তার কারণে পরিবারের বা অন্য কারও কোনো সমস্যা হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আইইডিসিআর থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা পেয়েছি, সেখান থেকেও একজন ডাক্তার (ফার্সিন) উনি সারাক্ষণ আমার সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছেন। প্রতিদিন কথা বলেছেন, আমার কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমি দেশের জনগণের কাছে, একটাই রিকোয়েস্ট করবো, আপনারা প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায়, ঘরে থাকুন।‘
প্রধানমন্ত্রী ফয়সাল শেখের অভিজ্ঞতা শুনে বলেন, ‘আল-হামদুলিল্লাহ, আমরা খুব খুশি, যে তুমি সুস্থ হয়ে ঘরে ফিরে আসছো। মায়ের সন্তান, মায়ের কোলে ফিরে গেছ।’
এছাড়া তার পরিবারের আর কারও কোনো অসুবিধা হয়েছি কি না, তাও জানতে চান প্রধানমন্ত্রী।
তার জবাবে ফয়সাল শেখ বলেন, ‘আমার পরিবারে অথবা আমার বন্ধু-বান্ধব কারও কোনো সমস্যা হয়নি। আইডিসিআর থেকেও তাদের সঙ্গে সবসময় যোগাযোগ করে এগুলো পর্যবেক্ষণ করছে। ইনশাল্লাহ কোনো ধরণের কোনো সমস্যা হয়নি।
সারাবাংলা/এনআর/এমআই