Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সংকট-অনিশ্চয়তায় দিন কাটছে ফুল ব্যবসায়ীদের


১ এপ্রিল ২০২০ ০৮:১৩

ঢাকা: জমানো প্রায় সব টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন ফুল ব্যবসায়ী সিদ্দিকুর রহমান। ফুল সংগ্রহের জন্য চাষিদের দিয়েছিলেন অগ্রিম অর্থ। প্রায় ৫ লাখ টাকার ফুল সংগ্রহ করেছিলেন তিনি। মুজিববর্ষ এবং মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস সামনে রেখে ভেবেছিলেন, বড় ব্যবসা হবে।

সিদ্দিকুর রহমানের সেই স্বপ্ন নষ্ট হয়েছে মার্চের শুরুতেই। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দেশে ছড়িয়ে পড়ায় বন্ধ হয়েছে সব ধরনের অনুষ্ঠান। তাতে নষ্ট হয়েছে সিদ্দিকুরের সংগ্রহ করা লাখ টাকার ফুল। দোকানও বন্ধ রাখতে হচ্ছে। জমানো যা কিছু টাকা ছিল হাতে, তা দিয়ে এতদিন টেনেটুনে সংসার চালিয়েছেন। সামনের দিনগুলোতে কী হবে, সেই অনিশ্চয়তা নিয়ে এখন দিন কাটছে তার।

কেবল সিদ্দিকুর রহমানই নয়, শাহবাগের সব ফুল ব্যবসায়ীদেরই এখন একই অবস্থা। ২৬ মার্চের আগ পর্যন্ত তাদের কেউ কেউ টুকটাক দোকান খোলা রাখলেও বিক্রি-বাট্ট ছিল না। আর ২৬ মার্চ থেকে তো দোকান বন্ধই হয়ে গেছে। চরম সংকটের মুখে এখন এসব ফুল ব্যবসায়ীদের ‍দু’চোখে কেবলই হতাশা।

মঙ্গলবার (৩১ মার্চ) মোবাইল ফোনে কথা হয় ফুল ব্যবসায়ী সিদ্দিকুর রহমানের সঙ্গে। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, এ বছর মুজিববর্ষ উদযাপন ও স্বাধীনতা দিবস ছিল আমাদের ফুল ব্যবসায়ীদের জন্য বড় উপলক্ষ। এই দুই আয়োজনে বেশি ফুল বিক্রি হবে— এমন প্রত্যাশায় জমানো অর্থই শুধু না, ধার করে পর্যন্ত টাকা বিনিয়োগ করেছিলাম। ৫ লাখ টাকার বিনিয়োগ ছিল। ফুল চাষিদের অগ্রিম টাকা দিয়েছিলাম। তারা ফুল পাঠানো শুরু করেছিল। কিন্তু এর মধ্যে মহামারি করোনার কারণে বন্ধ হয়ে গেল স্কুল-কলেজ। তারপর তো সব উৎসব-আনুষ্ঠানিকতাই বন্ধ হয়ে গেল।

সিদ্দিকুর বলেন, ২৬ মার্চের জন্য যে ফুল এনেছিলাম, বিক্রি হয়নি। সব ফুল নষ্ট হয়ে গেছে। এখন তো দোকানই বন্ধ। আয়-রোজগারের তাই প্রশ্নই নাই। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে কোনোমতে জীবন পার করছি।

কেবল মুজিববর্ষ বা স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানই নয়, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে থাকলে স্বাভাবিক সময়কার অনুষ্ঠানাদিও বন্ধ হতে থাকে। এর মধ্যে স্কুল-কলেজ বন্ধের পর সারাদেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হলে থমকে যায় স্বাভাবিক জীবন। রাজধানীবাসী বড় একটি অংশই চলে যান গ্রামে। যারা রাজধানীতে অবস্থান করছেন, তারাও ঘরবন্দি। ফলে ফুলের চাহিদা নেমেছে শূন্যের কোটায়। তাছাড়া জরুরি সেবার সঙ্গে সম্পৃক্ত দোকানপাট ছাড়া বাকি সব দোকান বন্ধ রাখার নির্দেশনার কারণে ফুলের দোকানগুলোও বন্ধই রাখতে হচ্ছে ফুল ব্যবসায়ীদের।

শাহবাগ বটতলা ক্ষুদ্র ফুল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবুল কালামও সারাবাংলার কাছে একই ধরনের পরিস্থিতির কথা তুলে ধরলেন। তিনি বলেন, অনেক কষ্টে আছি ভাই। কোনো রকমে সংসার চলছে। একে তো করোনা আতঙ্ক, তার ওপর সংসারের খরচ। এভাবে কত দিন দোকান বন্ধ থাকবে, আর ভবিষ্যতে কিভাবে চলব— তার হিসাব মিলাতে পারছি না।

তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে অনেক ফুল পচে নষ্ট হয়েছে। তারপর আবার এখন দোকান বন্ধ। আমরা দিন আনি, দিন খাই। এখন টিকে থাকাই দায়। এই এলাকার কমিশনারের কাছে সাহায্য চেয়েও পাইনি। কমিশনার বলছেন, আমরা দো-আঁশলা (দুই দিকের)— ভোটার হয়েছি এক এলাকার, ব্যবসা করছি অন্য এলাকায়। এ কারণে নাকি সাহায্যও পাব না। এখন আল্লাহ ভরসা বলা ছাড়া আর কোনো উপায় দেখছি না।

আবুল কালাম জানান, প্রতি বছর ডিসেম্বর থেকে মার্চ— এ চার মাস ফুলের ব্যবসা থাকে। কিন্তু এ বছর ফেব্রুয়ারি থেকেই করোনাভাইরাসের কারণে ফুলের ব্যবসা ছিল মন্দা। সব মিলিয়ে এখানকার ফুল ব্যবসায়ী ৫১টি পরিবার চরম কষ্টে দিন অতিবাহিত করছে।

আবুল কালামের হিসাবে, এ বছর করোনাভাইরাসের কারণে শুধু আমাদের এখানকার (শাহবাগ) ক্ষুদ্র ফুল ব্যবসায়ীদেরই ক্ষতি হয়েছে প্রায় এক কোটি টাকার। সরকার সহায়তা না করলে এই ক্ষতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব না। আমরা তাই সরকারের কাছে সহায়তা দাবি করছি।

বৈশ্বিক মহামারি করোনায় অবশ্য কেবল ঢাকা নয়, বদলে গেছে গোটা বিশ্বেরই চিত্র। মিনিটে মিনিটে বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। মঙ্গলবার রাত ৯টার তথ্য বলছে, এ ভাইরাসে এখন পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা পেরিয়েছে ৮ লাখ। মৃত্যুবরণ করেছেন প্রায় ৪০ হাজার মানুষ। বাংলাদেশে এ পর্যন্ত এ ভাইরাসে আক্রান্ত ৫১ জনকে শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে মারা গেছেন ৫ জন।


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

‘আমাদের সেনাবাহিনী যেন তৈরি থাকে’
৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৫:২৯

আগস্টে কমেছে মূল্যস্ফীতি
৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৫:০৭

সম্পর্কিত খবর