পোশাক খাতে সুখবর আসছে আগামী সপ্তাহে
১ এপ্রিল ২০২০ ১০:০৪
ঢাকা: করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যে তৈরি পোশাক খাতের জন্য সুখবর আসছে। দেশি-বিদেশি সূত্রগুলো জানাচ্ছে, তৈরি পোশাক খাতের বাতিল হওয়া ক্রয়াদেশগুলোর জন্য নতুন করে ক্রয়ের আদেশ আসবে আগামী সপ্তাহে। পাশাপাশি মিলবে নতুন অর্ডারও। বিদেশে থাকা বাংলাদেশ মিশন ও তৈরি পোশাক খাতের মালিকরা বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন।
ইউরোপ-আমেরিকার কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, করোনাভাইরাস ইস্যুতে যেসব ক্রেতা বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের অর্ডার বাতিল করেছে, সেগুলো ফিরিয়ে আনা এবং এই ইস্যুতে বিদেশি ক্রেতাদের ইতিবাচক সহযোগিতার জন্য সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর কূটনীতিক, সরকারি কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত যোগাযোগ চলছে। তাদের এ বিষয়ে প্রকৃত পরিস্থিতি বোঝানো হচ্ছে। আশা করা যাচ্ছে, অচিরেই এই বিষয়ে সুবাতাস পাওয়া যাবে। পাশাপাশি করোনার মতো বৈশ্বিক মহামারি ইস্যুতে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের পাশে যেন বিদেশি ক্রেতারা সক্রিয়ভাবে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে, সেজন্যও কূটনীতিক তৎপরতা চালানো হচ্ছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘এই দুর্যোগের সময় বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের পাশে যেন বিদেশি ক্রেতারা থাকে, এজন্য আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। সবগুলো মিশনকে এই বিষয়ে কাজ করতে বলা হয়েছে। এই দুর্যোগে বিদেশি ক্রেতারা যেন আমাদের সহযোগিতা করে, সে বিষয়ে আমরা কাজ করছি।’
তৈরি পোশাক খাতের রফতানিকারক ও মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক সারাবাংলাকে বলেন, ‘তৈরি পোশাক খাত নিয়ে বিদেশি ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ চলছে। আগামী সপ্তাহে ভালো খবর পেতে পারেন।’
এদিকে, সুইডেনের বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠান এইচঅ্যান্ডএম গণমাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতেই জানিয়েছে, তারা তাদের অর্ডারগুলো বহাল রাখবে। বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা যেসব তৈরি পোশাক কারখানাকে পণ্য ক্রয়ের অর্ডার দিয়েছিলাম, সেগুলো বাতিল হচ্ছে না। আমরা আমাদের প্রতিজ্ঞা রক্ষা করব। অর্ডারগুলোর ডেলিভারি নেব।
গণমাধ্যমে দেওয়া ওই বিবৃতিতে এইচঅ্যান্ডএম কোনো দেশের নাম উল্লেখ করেনি। তবে বাংলাদেশ থেকে সুইডিশ এই প্রতিষ্ঠান বেশ বিপুল পরিমাণ তৈরি পোশাক কিনে থাকে। বিবৃতিতে উল্লেখ করা অর্ডারের মধ্যে তাই বাংলাদেশের কারখানাগুলোতে দেওয়া অর্ডার থাকাও স্বাভাবিক।
ওই বিবৃতিতে প্রতিষ্ঠানটি আরও বলেছে, ‘আমরা যে দরে অর্ডার দিয়েছিলাম, সেই দর অনুযায়ীই বিক্রেতাদের মূল্য পরিশোধ করব।’
চীনে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের বিস্তৃতির শুরু থেকেই চাপের মুখে পড়তে থাকে দেশের তৈরি পোশাক খাত। ব্যবসায়ীরা জানান, ওই সময় চীন থেকে তারা কাঁচামাল আমদানি করতে পারছিলেন না। ফলে তাদের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছিল। সঠিক সময়ে পণ্যের শিপমেন্ট নিয়ে তারা চিন্তিত হয়ে পড়ছিলেন।
ফেব্রুয়ারির শেষভাগে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ইউরোপ-আমেরিকার ছড়িয়ে পড়তে শুরু করলে পোশাক খাতে দেখা দেয় নতুন সমস্যা। এই ভাইরাসের কারণে দেশগুলো লকডাউন হয়ে যায়। ফলে বন্ধ হয়ে যায় দোকানপাট। এসব দেশের ক্রেতারা পোশাক কারখানাগুলোকে দেওয়া অর্ডার বাতিল করতে থাকে। বিজিএমইএ সর্বশেষ ২৯ মার্চের তথ্য জানিয়ে বলছে, দেশের এক হাজার ২৫টি পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। আর ৩১ মার্চের তথ্য বলছে, তিন বিলিয়ন বা প্রায় তিনশ কোটি ডলারের অর্ডার বাতিল ও স্থগিত করেছে পোশাক কারখানাগুলোর ক্রেতারা।
এদিকে, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দেশেও ছড়িয়ে পড়লে একপর্যায়ে সরকার সারাদেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। তবে কারখানাগুলোর মাধ্যমে সুরক্ষা সরঞ্জাম উৎপাদনের কারণে পোশাক কারখানাগুলোকে সাধারণ ছুটির আওতায় না এনে কারখানা খোলা বা বন্ধের সিদ্ধান্ত মালিকপক্ষের ওপর ছেড়ে দেয় সরকার। পাশাপাশি সরকারপ্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রফতানিমুখী খাতগুলোর শ্রমিক-কর্মচারীর ব্তেন-ভাতা পরিশোধের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেন। এ অবস্থায় দেশের বেশকিছু পোশাক কারখানা খোলা থাকলেও অনেক কারখানাতেই ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।