Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

করোনা সচেতনতার দৃষ্টান্ত দূর পাহাড়ের পাংখোয়া’রা


১ এপ্রিল ২০২০ ১৪:৩৫

রাঙ্গামাটি: দূর পাহাড়ে তাদের বসবাস। পার্বত্য জনপদের অন্যান্য জনগোষ্ঠীর চেয়ে তাদের জীবনধারণ বরাবরই ব্যক্রিতম। ধর্মীয় পরিচয়ে এই জনগোষ্ঠী খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বী হওয়ায় ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান, সংস্কৃতিও ভিন্ন। বলা হয়ে থাকে, পার্বত্য জনপদের অন্যান্য জনগোষ্ঠীর চেয়ে পাংখোয়া’রা অনেক অগ্রসর। পুরোনো সেই কথার যেন মিল পাওয়া গেলো করোনা পরিস্থিতিতেও। দূর পাহাড়ের এই বাসিন্দারা করোনাভাইরাসের এই ক্রান্তিকাল মোকাবিলায় বেশ স্বাস্থ্য সচেতনতার পরিচয় দিচ্ছেন। লোকেরা পাড়া থেকে বের হলেও পড়ছেন মাস্ক। পাড়ার ঘরে ঘরে পৌঁছানো হয়েছে জনসচেনতামূলক লিফলেট। পাড়ায় টাঙানো হয়েছে সচেতনতামূলক নানান পোস্টার। এছাড়া ঘাটে ঘাটে রয়েছে সাবান-পানির ব্যবস্থা।

বিলাইছড়ির পাংখোয়া পাড়াবাসী জানিয়েছেন, করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) মোকাবিলায় তারা পাড়ার মানুষকে সুরক্ষিত রাখতে এসব পদক্ষেপ নিয়েছে। বর্তমানে উপজেলার সদরের সঙ্গেও এই সময়টাতে করোনার ঝুঁকি এড়াতে পাড়াবাসীর আসা-যাওয়ার তেমনটা নেই। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কেউ পাড়ার বাইরে যাচ্ছেন না। এর মধ্য দিয়ে তারা নিজেকে ও পাড়ার মানুষকে সুরক্ষিত রাখছেন।

বিলাইছড়ি পাংখোয়া পাড়ার বাসিন্দা ও স্থানীয় ইউপি সদস্য চুয়ানলেই পাংখোয়া বলেন, ‘আমরা সবসময় নিজেদের সুরক্ষিত রাখার চেষ্টা করি। করোনাভাইরাস বাংলাদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে। এই ভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে পাড়ায় সর্বাত্মক জনসচেতনতা তৈরি করেছি। পাড়ার প্রতিটি ঘরে জনসচেতনতা অভিযান চালানো হয়েছে। যারা পাড়ার বাইরে যাচ্ছেন সবাই মাস্ক ব্যবহার করছেন।’

স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য ভিথাংয়া পাংখোয়া (দীলিপ) বলেন, ‘আমাদের জীবনধারণ পাহাড়ের অন্যান্য জনগোষ্ঠীর থেকেই কিছুটা হলেও ভিন্ন। আমরা পাংখোয়ারা সবসময় স্বাস্থ্য সচেতন থাকার চেষ্টা করি। বর্তমানে সারাবিশ্বে যে মহামারি রোগ ছড়িয়ে পড়ছে সেটি থেকে পাড়ার মানুষকে মুক্ত রাখতে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি। পাড়ার প্রতিটি মানুষের ঘরে গিয়ে আমরা সবাইকে সচেতন করেছি। পাড়াবাসীকে ঘনঘন হাত ধোয়ার জন্য অনুরোধ করেছি।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের পুরো পাংখোয়া পাড়ায় মোট ১১৫টি পরিবারের বাস। জনসংখ্যা ৫৬৫ জনের মতো। এর মধ্যে পাড়ার অনেক মানুষ দিনমজুর ও কৃষি কাজের ওপর নির্ভরশীল। এখন করোনাভাইরাসের প্রভাবে অনেকেই অলস সময় কাটাচ্ছেন। সবাই ঘরে মজুদ রাখা খাদ্যশস্য ও টাকা পয়সা খরচ করছেন। এভাবে না হয় আর আট-দশ দিন চলা যাবে। কিন্তু এরপরে এখানকার নিম্ন আয়ের মানুষগুলো সংকটে ভুগবে। তাই তাদের পাশে সহযোগিতা নিয়ে দাঁড়ানো জরুরি।’

১২০ নম্বর (এ) তিনকুনিয়া মৌজাধীন পাংখোয়া পাড়ার কার্বারি (গ্রামপ্রধান) সুমকিপসামা পাংখোয়া জানান, পাড়ার প্রতিটি ঘাটে বালতি ভরে পানি ও সাবান রাখা হয়েছে। পাড়াবাসীকে ঘন ঘন হাত ধোয়ার কথা বলা হয়েছে। করোনাভাইরাস থেকে পাড়াবাসীকে মুক্ত রাখতে পাড়ায় এখন বাইরে কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। এখানকার মানুষও কেউ এখন জরুরি প্রয়োজন ছাড়া পাড়ার বাইরে যাচ্ছেন না।

রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য ও পাংখোয়া পাড়ার বাসিন্দা রেমলিয়ানা পাংখোয়া বলেন, ‘নভেল করোনাভাইরাস মোকাবিলায় পাড়ায় সর্বাত্মক সচেতনতা কার্যক্রম চালানো হয়েছে। পাড়াবাসী প্রতিটি ঘরে গিয়ে সচেতনতা কার্যক্রম। এলাকার বেশিরভাগ মানুষ দিনমজুর ও কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িত। এখন তারা কর্মক্ষম হয়ে আছেন। তাদের ইউনিয়নভিত্তিক সহায়তা দেওয়া হবে। এছাড়া আমি সার্বক্ষণিক এলাকার খোঁজখবর রাখছি। প্রয়োজনে জেলা পরিষদের পক্ষ থেকেও তাদের সহায়তা করা হবে।’

পার্বত্য জনপদের রাঙ্গামাটি জেলার সাত উপজেলাতে পাংখোয়া জনগোষ্ঠীর বসবাস। জেলা সদর, জুরাছড়ি, বরকল, লংগদু, বাঘাইছড়ি, কাপ্তাই ও বিলাইছড়ির প্রত্যন্ত অঞ্চলে প্রায় ৬ শতাধিক পাংখোয়া পরিবার বাসবাস করেন। ৬ শতাধিক পরিবারের জনসংখ্যা প্রায় ৪ হাজারের মত। এর মধ্যে বেশির ভাগ পাংখোয়া জনগোষ্ঠী বিলাইছড়ি উপজেলাতেই বসবাস করেন। খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বী হওয়ায় পার্বত্য জনপদের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বসবাস করলেও এই জনগোষ্ঠীর জীবনাচারণ পাহাড়ের অন্যান্য নৃ-গোষ্ঠীর চেয়ে অনেকটাই ব্যতিক্রম।

করোনাভাইরাস টপ নিউজ পাংখোয়া রাঙ্গামাটি


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর